অনামিকা মণ্ডল। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প়ড়ুয়াদের সম্মিলিত উদ্যোগে চলে ‘ড্রামা ক্লাব’। মূলত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে থাকে এই সংগঠন। গত দু'দিন ধরে তারাই আয়োজন করেছিল ‘রুহানিয়ত’ নামে এক নাট্যোৎসবের। কিন্তু তার মাঝেই ঘটে গিয়েছে মর্মান্তিক ঘটনা। বৃহস্পতিবার রাতে নাট্যমঞ্চ থেকে খানিক দূরে উদ্ধার হয় এক ছাত্রীর মৃতদেহ। এর পরই বন্ধ হয়ে গিয়েছে ওই নাট্যোৎসব।
সূত্রের খবর, তিন দিনের নাট্যোৎসবের শেষ দিন ছিল শুক্রবার। এ দিন ‘অনীক’ নাট্যদলের একটি নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সকালেই ঘোষণা করা হয় ওই নাটকের প্রদর্শন স্থগিত করা হচ্ছে। সমাজমাধ্যমে নাটকের সঙ্গে যুক্ত বহু সদস্যই জানান, নাটকটি মঞ্চস্থ হচ্ছে না। এ জন্য দর্শকদের টিকিটের মূল্য ফেরত দেওয়া হবে।
গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছিল নাট্যোৎসব ‘রুহানিয়ত’। নাট্য প্রদর্শনের পাশাপাশি ছিল নাট্য বিষয়ক কর্মশালা আয়োজনও। উৎসবের পোস্টার থেকে জানা যায় ত্রিগুণা সেন অডিটোরিয়ামে নাটকের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু চার নম্বর গেটের কাছে বৃহস্পতিবার গানের অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছিল। রাত ১০টা ২০ মিনিট নাগাদ সেখানেই কলা বিভাগের ইউনিয়ন রুম সংলগ্ন পুকুরে এক ছাত্রীকে ভাসতে দেখা যায়। অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ইংরেজি স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী অনামিকা মণ্ডলকে। পরে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
১০ বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন পড়ুয়াই ‘বুকঝিম এক ভালবাসা’ নাটকটি তৈরি করেন। পরবর্তীকালে তা ব্যপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। সেই নাটকই ‘অনীক’ নাট্যগোষ্ঠীর প্রযোজনায় মঞ্চস্থ হওয়ার কথা ছিল। অভিনেতা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র শ্রমণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই মুহূর্তে নাটকের অনুষ্ঠান করা অর্থহীন। আমরা শোকস্তব্ধ। আপাতত নাটক স্থগিত রাখছি।”
তবে, ছাত্রীমৃত্যুর ঘটনায় যে ভাবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও ওই রাতের অনুষ্ঠান নিয়ে অভিযোগ উঠছে তাতে ব্যথিত শ্রমণ। তিনি বলেন, “যাদবপুরের ড্রামা ক্লাব-এর সঙ্গে এক সময়ে চন্দন সেন, চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো ব্যক্তিরা জড়িয়েছিলেন। বর্তমান প্রজন্মের পড়ুয়ারা স্বল্প খরচে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। বাইরে থেকেও কিছু মানুষ অনুষ্ঠান করতে এসেছিলেন। কিন্তু ওই ছাত্রীর মৃত্যুর পর এখন রাজনৈতিক দলগুলি এই নিয়ে কদর্য আলোচনা করছে। আমরা ব্যথিত।”
তাঁর দাবি, সরাসরি যে ভাবে যাদবপুরের পড়ুয়াদের ‘নেশাগ্রস্ত’ বলে দাগিয়ে দেওয়া হয় তা সঠিক নয়। কারণ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাই দেশে বিদেশে নিজ নিজ ক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছেন। পাশাপাশি, অনামিকা মৃত্যুর সঠিক তদন্তও দাবি করেন অভিনেতা।
যদিও এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ড্রামা ক্লাবের কোনও বক্তব্য জানা যায়নি। ক্লাব সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও কাউকে ফোনে পাওয়া যায়নি।