JU staff didn’t receive salaries

বেতন পেতেই বেহাল দশা, দায় নিয়ে কাজিয়ায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষা দফতর

গত বছরের ডিসেম্বরের বেতন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা পেয়েছিলেন চলতি বছর জানুয়ারিতে। এ বার জানুয়ারির বেতন এখনও ঢোকেনি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:০৫
Share:

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত।

ডিসেম্বরের পরে ফের জানুয়ারিতেও সময় মতো শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের বেতন ও পেনশনের টাকা ঢুকল না যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের গাফিলতিকেই দায়ী করেছে উচ্চশিক্ষা দফতর।

Advertisement

উচ্চশিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় রিকুইজিশনের ক্ষেত্রে ভুলভ্রান্তি করছে ও সময় মতো জমা দিচ্ছে না বলেই বেতন পেতে সময় লাগছে। আমরা টাকা আটকানোর কেউ নই। আটকাতে চাইও না। কিন্তু সরকারি পদ্ধতি ঠিক মতো মেনে কাজ করতে হবে।’’

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে দেরিতে বেতন ঢোকার ঘটনা পরপর দু’মাস ঘটল। গত বছরের ডিসেম্বরের বেতন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা পেয়েছিলেন চলতি বছর জানুয়ারিতে। এ বার জানুয়ারির বেতন এখনও ঢোকেনি। সুত্রের খবর, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ডিসেম্বর ২০২৪-এর মাইনে ও পেনশন দিয়েছিলেন প্রায় তলানিতে পৌঁছে যাওয়া ফিক্সড ডিপোজিট ভেঙে। তাঁদের পাল্টা অভিযোগ, জানুয়ারি ২০২৫-এর বেতন ও পেনশনের টাকা এখনও পাঠায়নি রাজ্য সরকার।

Advertisement

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার আগেই জানিয়ে দিয়েছিল তারা কোনও চার্জ অ্যালাওয়েন্স/ অফিসিয়েটিং অ্যালাওয়েন্স দেবে না। পার্ট টাইম অ্যালাওয়েন্স আগেই বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। যেখানে শিক্ষক, আধিকারিক এবং কর্মচারীদের বহু গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য (যেগুলিতে রাজ্য সরকার নিয়োগ আটকে রেখেছে) এবং তাঁদের কিছুটা কাজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ করেছেন অফিসার বা কর্মচারীদের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে, সেখানে চার্জ / অফিসিয়েটিং অ্যালাওয়েন্স রাজ্য সরকারের না দেওয়ার কী যুক্তি, সেটা জানা নেই।’’ শিক্ষক সমিতির আরও অভিযোগ, বিভিন্ন কাজে যুক্ত এজেন্সিদের (যেমন নিরাপত্তা, সাফাই, দেখভাল, হস্টেল কর্মী) টাকাও রাজ্য সরকার দিচ্ছে না কোসা চালু হওয়ার পর থেকে। ফলে এই খাতেই প্রত্যেক বছর প্রায় ১০ কোটি টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ হচ্ছে। আগেই ২০২৩-২০২৪ অর্থবর্ষে নন স্যালারি খাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘাটতি হয়েছে ৩8.৯৭ কোটি টাকা। এই ঘাটতি হয়েছে বিভাগগুলির ল্যাব টিচিং ও অন্যান্য খাতে ৪০ (চল্লিশ) শতাংশ টাকা কেটে নেওয়ার পরে। এই রকম ঘাটতি গত কয়েক বছর ধরেই চলছে। পার্থপ্রতিম জানিয়েছেন এই তথ্য ফিনান্স কমিটি এবং কর্মসমিতিতে পেশ করা হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, শোনা যায় কর্মসমিতিতে নাকি সরকারি প্রতিনিধি থাকেন এবং সরকারের তরফে বক্তব্য রাখেন। কিন্তু এই ব্যাপারে তাঁরা উদ্যোগী হয়েছেন বলে জানা যায়নি। একইসঙ্গে অভিযোগ, ন্যাক বা এনবিএ-র জন্যও কোনও টাকা পায়নি বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, এই চরম আর্থিক সঙ্কটের কারণে, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প থেকে কেনা বহু কোটি টাকার যন্ত্রপাতি মেরামতি বা উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হতে বসেছে। পার্থপ্রতিম বলেন, ‘‘আমরা জানি শিক্ষকেরা যে প্রজেক্ট আনান বা কনসালট্যান্সি করেন, তার একটা অংশ বিশ্ববিদ্যালয় পায়। কিন্তু সেই টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা বা অন্য কোনও অ্যাকাডেমিক কাজে না লেগে মাইনে দেওয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনন্দিন খরচ চালাতেই ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। অন্য দিকে, গবেষণার জন্য বিভিন্ন প্রজেক্ট থেকে কেনা বেশ কিছু দামি যন্ত্রপাতি খারাপ হয়ে রয়েছে টাকার অভাবে। একই অবস্থা টিচিং ল্যাবরেটরিগুলিরও।’’

প্রতিষ্ঠান উচ্চশিক্ষা দফতরের দিকে অভিযোগ তুললেও তারা বেতন না পাওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানের গাফিলতিকেই দায়ী করছে। আদৌ কি এ ভাবে এই সমস্যার সমাধান হবে? সেই নিয়েই জল্পনা তৈরি হয়েছে শিক্ষা মহলের একাংশের মধ্যে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement