একের বেশি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা সুযোগ দিচ্ছে ইউজিসি। প্রতীকী চিত্র।
কোনও পডুয়া একই সঙ্গে দু’টি বিষয় নিয়ে আলাদা ডিগ্রি কোর্সে পড়তে পারবেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) যে নির্দেশিকা দিয়েছে, তার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়, দাবি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের। রাজ্যের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ও এই বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবাশিস দাস ইউজিসি-র নয়া নির্দেশিকায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “সিমেস্টার পদ্ধতিতে এক সঙ্গে দু’টি ডিগ্রি কোর্সের পড়াশোনা কোনও ভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। তা ছাড়া, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং তার অধীনস্থ ১৫৭টি কলেজের পঠনপাঠনের নিয়মের সঙ্গে ইউজিসি-র এই নির্দেশিকা কার্যকর করাও সম্ভব নয়।”
রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০২০’ অনুসারে ক্লাসের পাশাপাশি, ইন্টার্নশিপ, ভ্যালু-অ্যাডেড কোর্স করানোর নিয়ম রয়েছে। এক সঙ্গে দু’টি ডিগ্রি কোর্স করতে পারলে কর্মজীবনে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা মিলতে পারে। তবে, এই ব্যবস্থা রাজ্য তথা দেশের উচ্চশিক্ষার পরিকাঠামোর পরিস্থিতি বিচার করলে একেবারেই বাস্তবসম্মত নয় বলে মত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শুভজিৎ নস্করের বক্তব্য, ইউজিসি এক রকম স্বেচ্ছাচারী আচরণ করছে।
ইউজিসি-র নয়া কোর্স সংক্রান্ত নির্দেশিকা অনুযায়ী, পড়ুয়ারা স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে দু’টি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে পারবেন। একই সঙ্গে দু’টি কোর্সের মধ্যে একটিকে মাঝপথেই ছেড়ে দেওয়ার সুযোগও থাকছে। একটি কোর্সের ক্লাস অনলাইনে কিংবা দূরশিক্ষা মাধ্যমে করা সম্ভব। তবে, উভয় কোর্সের ক্ষেত্রে রেগুলার মোডে (ফিজ়িক্যাল) ক্লাস করতে চাইলে, ক্লাসের সময় যাতে আলাদা হয়, সেই বিষয়ে নজর রাখতে হবে।
ইউজিসি-র যুক্তি, এই পদ্ধতিতে উচ্চশিক্ষায় বিজ্ঞান-কলা-বাণিজ্য-ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার মধ্যে যে বৈষম্য রয়েছে, তা দূর করা সম্ভব। এতে পড়ুয়াদের মাল্টিডিসিপ্লিনারি বিষয় নিয়ে এক সঙ্গে পড়ার সুযোগ দেওয়া যাবে। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোলজিক্যাল স্টাডিজ় বিভাগের বিভাগীয় প্রধান জয়ন্তকুমার বিশ্বাসের মতে, এই ব্যবস্থার আওতায় ১০০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে হয়তো ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী উপকৃত হবেন। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সকলের জন্য এই ব্যবস্থা উপযুক্ত নয়। তাঁদের জন্য এই পদ্ধতি অবলম্বন করা যেমন ব্যয়বহুল, তেমনই বিভ্রান্তি তৈরি করবে।
ইউজিসি সম্প্রতি একটি বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানিয়েছে, যাঁরা এই নির্দেশিকা প্রকাশের আগে স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর স্তরে দু’টি বিষয় নিয়ে একই সঙ্গে ডিগ্রি কোর্স সম্পূর্ণ করেছেন, তাঁদের ডিগ্রিও বৈধ বলে গণ্য করা হবে। ইতিমধ্যেই কমিশনের তরফে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলিতে এই ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জি জানানো হয়েছে।
রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির একাংশের মত, পাঠদানের ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে হলে, শিক্ষকের সংখ্যা যেমন বাড়ানো দরকার, তেমনই পরিকাঠামোর মানোন্নয়নও সমান ভাবে প্রয়োজন। যেখানে সময়ে সিলেবাস সম্পূর্ণ করে সময়ের মধ্যে ফল প্রকাশ করাই বড় চ্যালেঞ্জ, সেখানে এই বিষয়ে কতটা সহযোগিতা করতে পারবে ইউজিসি? যদি যথাযথ ব্যবস্থা না থাকে, তা হলে শিক্ষার্থীদের পড়ানো কী ভাবে সম্ভব? প্রশ্ন তুলছেন অধ্যাপকেরা।