পুষ্পিতা রায় ভট্টাচার্য । নিজস্ব চিত্র।
জীবনের অনেকগুলি বছর তিনি কাটিয়ে ফেলেছেন রোগীর সেবায়। শুধু রোগীর সেবা নয়, নার্স-এর চাকরিটি তিনি নিতে বাধ্য হয়েছিলেন নিজের অসচ্ছল পরিবারকে আর্থিক ভাবে সাহায্য করতে। পড়াশোনায় এগোতে পারেননি বেশি দূর। কিন্তু মনের মধ্যে ইচ্ছেটা মরেনি গত পাঁচ দশকে। তাই ৬৯ বছর বয়সে এসে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসছেন অর্চনা মণ্ডল। পছন্দের বিষয় বিজ্ঞান।
আবার ৫৬ বছরের পুষ্পিতা রায় ভট্টাচার্য সারাজীবন ব্যস্ত থেকেছেন ঘরকন্নার কাজে। মানুষ করেছেন সন্তান। আর কাজের ফাঁকে ফাঁকে প্রাণের কাছে রেখেছেন শরৎচন্দ্রকে। সাহিত্যই তাঁর প্রিয় বিষয়। তাই কলা বিভাগেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে চলেছেন তিনি। প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছেও নিরলস।
পুষ্পিতা বা অর্চনা পরীক্ষা দেবেন রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয়ের অধীনে। এই মুহূর্তে পুরোদমে চলছে প্রস্তুতি। বয়স বেড়েছে, চোখের জ্যোতি ক্রমশ কমেছে কালের নিয়মে। কিন্তু কমেনি জেদ আর পাশ করার ইচ্ছে।
অর্চনা এখন থাকেন মধ্যমগ্রামে। ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞানে ঝোঁক তাঁর। মাধ্যমিক পাশ করার পর উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয়েছিলেন বিজ্ঞান নিয়েই। কিন্তু পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি সহায় হয়নি। দু’টি বিষয়ে উত্তীর্ণ হতে পারেননি। তা ছাড়া, দারিদ্র তাঁকে বাধ্য করেছিল পেশাভিত্তিক পড়াশোনা করতে। পরবর্তী কালে তিনি পেশা হিসাবে বেছে নেন নার্সিং-কে।
৪০ বছর কাজ করে এখন তিনি অবসরপ্রাপ্ত। কিন্তু এই অবসরকে অযথা নষ্ট করতে নারাজ। চলতি বছর মুক্ত বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছেন অর্চনা। পছন্দের বিজ্ঞান নিয়েই। অর্চনার কথায়, ‘‘বিজ্ঞানের বিষয়গুলি পড়তে খুব ভাল লাগে। রসায়নের খুঁটিনাটি নিয়ে চর্চা করতে খুব ভালবাসি। এর পর আরও পড়ার ইচ্ছে রয়েছে।’’
তবে শুধু পড়াশোনা নয়। কাজের ফাঁকে সময় পেলেই গিটার নিয়ে বসে পড়েন অর্চনা। এক সময় বহু অনুষ্ঠানেও গিটার বাজিয়েছেন তিনি। এখন তাঁর মূল লক্ষ্য ফেলে আসা নিজের স্বপ্ন পূরণ করা।
দমদমের পুষ্পিতার পছন্দ ‘বিন্দুর ছেলে’, ‘পথনির্দেশ’, ‘মেজদিদি’! সংসারের কাজ সামালে যেটুকু সময় হাতে থাকে তার অধিকাংশই কাটে শরৎচন্দ্র পড়ে। ছোটবেলায় বিয়ে হয়ে গিয়েছিল তাই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। কিন্তু তাঁর ছেলে সম্প্রীত ভট্টাচার্য। বছর পঁয়ত্রিশের ছেলেই মায়ের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে এসেছেন। কলা বিভাগের চারটি বিষয় নিয়ে চলতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক দিচ্ছেন পুষ্পিতা। এর পর কলেজে পড়ার ইচ্ছেও রয়েছে তাঁর।
বর্তমানে রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয়ের তরফে উত্তর কলকাতার দ্য পার্ক ইনস্টিটিউশনে ভর্তির আবেদন গ্রহণ প্রক্রিয়া চলছে। বছরে দু’বার চলে ভর্তির প্রক্রিয়া। তবে, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ভর্তির জন্য প্রয়োজন মাধ্যমিকের শংসাপত্র প্রয়োজন। পাশাপাশি ‘স্কুল লিভিং সার্টিফিকেট’-ও থাকতে হবে। প্রতি বছর প্রায় ২৫০ জন সুযোগ পান পড়ার। প্রতি বিষয়ে পুরুষদের ২০০ টাকা করে জমা দিতে হবে এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ১০০টাকা। ক্লাস হয় বিকেলবেলা করে। ‘আগে এলে আগে ভর্তি’- এই ভিত্তিতে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে।