কলেজের সামনে এক হাঁটু জল, তারই মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে সকলকে। নিজস্ব চিত্র।
রাতভর বৃষ্টিতে বেহাল কলকাতা। পুজোর ছুটি পড়ার আগেই বহু স্কুলে ছুটি ঘোষণা করতে হয়েছে মঙ্গলবার। বেশির ভাগ কলেজেই ক্লাস হয়নি এ দিন। পড়ুয়া বা শিক্ষক কেউই পৌঁছোতে পারেননি নির্ধারিত সময়ে। বেসরকারি স্কুলগুলিতেও ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনার পর মঙ্গলবারই একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। সেই বৈঠকের পাশাপাশি, সমস্ত ক্লাস আজকের মত বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শান্তা দত্ত দে বলেন, "প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। কলকাতায় একাধিক জায়গা থেকে তড়িদাহত হয়ে মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। পড়ুয়ারা যাতে কোনও বিপদে না পড়েন, সে দিকে দৃষ্টি রেখেই এই সিদ্ধান্ত।"
এ দিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন বিষয়ে স্নাতক চতুর্থ সেমেস্টারের প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা ছিল। ৮টি কেন্দ্রে এই পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। এ ছাড়াও বিভিন্ন বিভাগে ইন্টারনাল পরীক্ষা ছিল। সব বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
যাদবপুর বিদ্যাপীঠ, নারায়ণদাস বাঙ্গুর-সহ একাধিক স্কুলে জল ঢুকেছে। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে উত্তরের স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে দক্ষিণের যোগমায়া দেবী কলেজ। ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে বাসন্তী দেবী কলেজেও। অধ্যক্ষা ইন্দ্রিলা গুহ বলেন, “আমাদের কলেজে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছাত্রীরা আসেন। ভোর থেকে প্রচুর ফোন আসছে। সমস্ত জায়গা জলমগ্ন। তাই ছুটি ঘোষণা করেছি।”
যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধানশিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য বলেন, “রাতভর টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে চতুর্দিক। এই পরিস্থিতি বিচার করে আমরা ছুটি দিতে বাধ্য হয়েছি।”
কলেজের বেসমেন্টেও হাঁটু সমান জল। নিজস্ব চিত্র।
নারায়ণদাস বাঙ্গুর মাল্টিপারপাস স্কুলের প্রধানশিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া বলেন, “আজ ফলপ্রকাশ এবং অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠকের কথা ছিল। তাই ছুটি ঘোষণা করা যায়নি। তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”
বাঘাযতীন প্রান্তপল্লী হাই স্কুলের শিক্ষিকা অমৃতা ভট্টাচার্য বলেন, “আমাদের স্কুলে রাতে যে রক্ষী থাকেন তিনি সকালে জানিয়েছেন, স্কুলের ভিতর জল থৈ থৈ। তাই স্কুল বন্ধ রাখার কথা জানানো হয়েছে কর্তৃপক্ষের তরফে।” বাঘাযতীন এলাকার বেশির ভাগ স্কুলই এ দিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে রামমোহন মিশন স্কুলে। এ দিন ওই স্কুলে দ্বিতীয় থেকে একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রধানশিক্ষক সুজয় বিশ্বাস জানান, জলমগ্ন পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে, ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে স্কুলে।
স্কুলের সামনে জল জমায় বাতিল করা হয়েছে সমস্ত ক্লাস। নিজস্ব চিত্র।
উত্তর কলকাতার পার্ক ইনস্টিটিউশন প্রধানশিক্ষক সুপ্রিয় পাঁজা বলেন, “শ্যামবাজার, হাতিবাগান-সহ একাধিক এলাকায় কোমরসমান জল। আমরা আলোচনা করছি, ক্লাস করানোর মতো পরিস্থিতি নেই। ছুটি ঘোষণা করতে হবে।”
ছুটি দিতে হয়েছে বেসরকারি স্কুলগুলিতেও। বালিগঞ্জ শিক্ষা সদন স্কুলের অধ্যক্ষা সুনীতা সেন বলেন, “স্কুলের ভিতরে জল দাঁড়িয়ে রয়েছে। পড়ুয়াদের কথা ভেবেই ছুটি ঘোষণা করেছি।” একই পরিস্থিতি পার্ক সার্কাসের ডন বসকো এবং রুবি পার্ক স্কুলেও। বিধান নগরের হরিয়ানা বিদ্যামন্দিরেও ঘোষণা করা হয়েছে ছুটি।