Smart Water Sensor

জলেই কি বিষ! চটজলদি জানিয়ে দেবে কৃত্রিম মেধা নির্ভর ছোট যন্ত্র, স্বপ্ন দেখছে দ্বাদশের ছাত্র

জলের অপর নাম জীবন। অথচ সেই জলই পানের অযোগ্য কী না, চেনার উপায় নেই বহু মানুষের কাছে। সহজ সমাধান খুঁজে পেয়েছে স্কুলপড়ুয়া হর্ষিত।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:০০
Share:

বছর সতেরোর বিজ্ঞান পড়ুয়া চায় সকলের কাছে থাকুক তার যন্ত্র। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

পানীয় জলের অভাব। পরিসংখ্যান বলছে, সারা ভারতে মাত্র ১১টি রাজ্যে ১০০ শতাংশ পরিবারের কাছে নলবাহিত পানীয় জল পৌঁছয়। উত্তরপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, রাজস্থান এবং ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যে এই হিসাব ২৫ শতাংশেরও নীচে। সারা দেশে জল দূষণের পরিমাণ খুব কম নয়। তার ফলে লেগেই থাকে রোগভোগ।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্র চেয়েছে জল দূষিত হয়েছে কি না তা সহজে জানার পদ্ধতি আবিষ্কার করতে। কারণ দ্রুত এই পরীক্ষা সম্ভব হলেই প্রতিকারে তৎপর হওয়া সম্ভব হবে। নিজের চেষ্টায় সদ্য কৈশোর পেরোনো সেই ছাত্র বানিয়েও ফেলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর এক যন্ত্র, যা তৎক্ষণাৎ ফলাফল দেখিয়ে দেয়। প্রয়োজন শুধু যন্ত্রটি এবং ইন্টারনেট সংযোগ। জল আদৌ পানের উপযুক্ত কি না, তা জানিয়ে দেবে যন্ত্রটি। ভাবনা মতো রাজস্থান ও হরিয়ানার দু’টি গ্রামে যন্ত্রটি দিয়েও এসেছে সে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মধ্যস্থতায়।

দিল্লির বাসিন্দা হর্ষিত সাঙ্ঘভি দশম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই বিশেষ বিজ্ঞান প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে এই বিষয়টির প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। আগামী দিনে এ বিষয়ে আরও কাজ করতে চায় হর্ষিত। তাঁর লক্ষ্য দূষিত জলের প্রকোপ থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করা।

Advertisement

সামান্য উপকরণ দিয়েই যন্ত্র বানিয়েছে দিল্লির পড়ুয়া। ছবি: সংগৃহীত।

হর্ষিত বলে, “আমি বিদেশে পড়াশোনা করতে চাই। সে জন্যই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। সে সময়ই বিষয়টির প্রতি আগ্রহ জন্মায়। পরিস্রুত পানীয় জল, জল সংরক্ষণের সুবিধা-অসুবিধার ছবিটা আসলে কেমন তা দেখতেই একবার রাজস্থান গিয়েছিলাম। ওখানে গিয়েই মনে হয়েছিল, জল কি কোনও ভাবে পরিস্রুত করা যায় না? জলে কোন দূষিত পদার্থ মিশে রয়েছে, তা-ও আগে থেকে জানা সম্ভব নয়?”

এর পরই শুরু হয় খোঁজ। বৃষ্টির জল ধরে রেখে তাকে ব্যবহারের যোগ্য করে তোলার পদ্ধতি অনেক দিন ধরেই কার্যকর দেশের নানা রাজ্যে। কিন্তু সে সব যন্ত্র বহুমূল্য। বিশেষ সেন্সর ব্যবহার করে কৃত্রিম মেধা কাজে লাগিয়ে বৃষ্টির জল পানের যোগ্য করে তোলা হয়। কিন্তু, সে সব পরীক্ষা হয় পরীক্ষাগারে। সাধারণ মানুষের পক্ষে রোজ রোজ সেখানে ছোটা সম্ভব নয়। তাই ছোট যন্ত্র বানানোর চেষ্টা করতে শুরু করে হর্ষিত।

কম্পিউটার সায়েন্স এবং কৃত্রিম মেধাই ওই পড়ুয়ার আগ্রহের বিষয়। তাই ইন্টারনেট ঘেঁটেই খুঁজে বের করে সহজ সমাধান। খুব সাধারণ বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ, নোডএমসিইউ নামক মাইক্রোকন্ট্রোলার বসিয়ে সে এমন এক সেন্সর তৈরি করে, যা জলের ক্ষতিকারক উপাদানকে চিনিয়ে দিতে পারে সহজেই। এই সেন্সর কাজ করে ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের সাহায্যে। হর্ষিত জানিয়েছে, জলের পাঁচটি মূল উপাদানের (পিএইচ - অ্যাসিডিটি বা অ্যালকালাইনিটি, অক্সিজেন, অ্যালগি বা ওই ধরনের বস্তু, নুন-আয়োডিন, টোটাল ডিসলভড সলিডস-টিডিএস) মাত্রা কতটা বেশি বা কম, তা চেনাতে লাল এবং সবুজ রঙ ব্যবহার করা হয়।

এ বিষয়ে তাকে সাহায্য করেছে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস-এর অধ্যাপক উমেশচন্দ্র কুলশ্রেষ্ঠ। অধ্যাপকের কথায়, “সাধারণত আমরা স্কুলস্তরের শিশুদের প্রকল্প সংক্রান্ত কোনও পরামর্শ দিই না। কিন্তু হর্ষিতের কাজটি অনেক মানুষের উপকার করবে। তাই ওকে উৎসাহ দিয়েছি।”

গ্রামে, শহরের অলিগলিতে ঘুরে যন্ত্র ব্যবহার করে জল পরীক্ষা করেছে হর্ষিত। ছবি: সংগৃহীত।

হর্ষিত ওই যন্ত্র নিয়ে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্যে দিল্লি, গুরুগ্রাম ছাড়াও হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন গ্রাম, বসতি, শহরের আনাচে-কানাচে থাকা ব্যবহারযোগ্য জলাধার পরীক্ষা করতে শুরু করে। কথা বলে এলাকার মানুষের সঙ্গে। সে অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে হর্ষিত বলে, “আমি সকলকে জানাই, গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বা যে কোনও কম্পিউটার চালাতে জানা মানুষ ওই যন্ত্র ব্যবহার করে জল পরীক্ষা করে ফেলতে পারেন। পাশাপাশি, জলের ক্ষতিকারক উপাদানের মাত্রা কমাতে কী ব্যবহার করতে হবে, তা-ও বলি। এ জন্য আমাকে কিছু স্থানীয় ভাষাও শিখতে হয়েছে।”

কিন্তু ছোট্ট ছেলেটির পক্ষে সবটা খুব সহজ ছিল না। বিশেষত শহরাঞ্চলে অনেক মানুষের চোখে মুখেই ফুটে উঠেছে সন্দেহ। কিন্তু তা দমিয়ে দিতে পারেনি হর্ষিতকে।

সামনে তার দ্বাদশের পরীক্ষা। আমেরিকায় পরিবেশ বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা ও গবেষণার স্বপ্ন তাঁর। চলছে প্রস্তুতি। পাশাপাশি জল পরীক্ষা করা যাবে, এমন ওয়েবসাইটও বানিয়েছে। কোনও ব্যক্তি সঠিক তথ্য জমা দিলে জল কতটা পরিস্রুত, তা জানতে পারবেন। নিজের যন্ত্রটি নিয়ে ইতিমধ্যেই নীতি আয়োগের দ্বারস্থ হয়েছিল সে। কিন্তু প্রথম বার বিফল হয়ে ফিরতে হয়েছে। তবে হাল ছাড়তে নারাজ বছর সতেরোর বিজ্ঞান পড়ুয়া।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement