Bad languages for children

শিশুদের সামনে কোন ভাষা ব্যবহার না করা ভাল, বাতলাচ্ছেন ‘গল্প দিদা’

শিক্ষিত, সচ্ছল পরিবারের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা গল্প করতে করতে বলে ফেলছে ‘শয়তান’, ‘প্যাঁক দেওয়া’, ‘বাঁদরামি’, ‘নির্লজ্জ’, ‘পাগল-একটা’ এই সব শব্দ। তারা অনায়াসে বলছে এই শব্দগুলি কিন্তু একেবারেই তারা বিচলিত হচ্ছে না।

Advertisement

সুদেষ্ণা মৈত্র

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:২৬
Share:

নিজস্ব চিত্র।

স্কুল, কলেজ, বন্ধু অনেক পরে। প্রাথমিক শিক্ষার প্রথম ধাপ পরিবার। তাই কোনও শিশুর সামনে পরিবারের প্রত্যেকের কী ভাবে কী ভাষায় কথা বলা ভাল তা নিয়েই লিখছেন ছোটদের ‘গল্প দিদা’ ওরফে গোখলে মেমোরিয়াল গার্লস স্কুলের বাংলার প্রাক্তন শিক্ষিকা সুদেষ্ণা মৈত্র।

Advertisement

রাজনৈতিক-সামাজিক অনেক বিষয়েই সরাসরি কুকথা নিয়ে আলোচনা হয়। সে সব যদিও বড়দের বিষয়। তবে আমার এই লেখার বিষয় ছোটোদের কুকথা। শিক্ষিত, সচ্ছল পরিবারের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা গল্প করতে করতে বলে ফেলছে ‘শয়তান’, ‘প্যাক দেওয়া’, ‘বাঁদরামি’, ‘নির্লজ্জ’, ‘পাগল-একটা’ এই সব শব্দ। তারা অনায়াসে বলছে এই শব্দগুলি। কিন্তু একেবারেই তারা বিচলিত হচ্ছে না।

এই শব্দগুলোর মধ্যে এক ধরনের আগ্রাসন আছে, যা ছোটদের মুখে মানায় না। তবু তারা অজান্তেই বলে ফেলে এসব। কী করে শেখে তারা? বাড়ির বড়দের কাছ থেকে শেখে? বাড়ির বাইরে থেকেও কি শেখে? একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে, আমরা অভিভাবকেরা আদরের ছলেও অনেক সময় ছোটদের এই শব্দগুলি বলে থাকি। কোনও শিশু যদি শান্ত না হয়ে কোনও কাজ করে, তাকে অনেক সময় বলা হয় ‘পাগলামি করো না’। কেউ কেউ আবার ছোটদের ‘পাগল’ বলে আদর করে। বড়রা জানতেই পারেন না, ছোটদের মনে ওই শব্দ কতটা দাগ কাটে।

Advertisement

‘পাগল’ শব্দটি বড়রা আদর করে বললেও শিশুমনের আত্মবিশ্বাস কোথায় যেন নড়েচড়ে বসে। তা ছাড়া পাগল যে একটা রোগ, সেই রোগীর যে সহানুভূতি প্রাপ্য, সেই শিক্ষা থেকেও বঞ্চিত হয় শিশু। ‌আবার অনেকে ক্রমাগত এই শব্দটা শুনতে শুনতে হীনম্মন্যতায় ভোগে। সারাটা জীবনের জন্য মনের স্বাস্থ্যে তার প্রভাব পড়ে।

বড়রা অনেক সময় ছোটদের দুষ্টুমি আর অসভ্যতাকে এক করে দেখেন। তাদের ‘নির্লজ্জ’ ‘বাঁদরামি’, ‘বেহায়া’ বলে ফেলেন। কথটি শিশু শুধু শেখেই না, তার সঙ্গে সঙ্গে তার লজ্জাবোধও ধীরে ধীরে কমতে থাকে। অভিভাবক ও শিক্ষকদের শাসনের সময় শব্দচয়নে সতর্ক থাকা খুবই জরুরি।

‘তুই বড় বেহায়া, লাজলজ্জা নেই’ এই বাক্যটি প্রায় অনেক বাড়িতেই বড়দের মুখে মুখে ঘোরে। এই ধরনের ধমকে শিশুদের শাসনের নামে অসম্মান করা হয়। যদিও বড়রা অতশত ভেবে বলেন না। কিন্তু ভাবাটা প্রয়োজন। শিক্ষকেরাও ক্লাসে ‘তোমার লজ্জা করে না’ কথাটি খুব ব্যবহার করেন। কখনও তাঁরা বলেন, বাড়িতে কী শেখায়?বাড়িকে ছোট করে শাসন করা অনুচিত। মনে রাখতেই হবে ছোটদের সম্মান না দিলে তাদের মনের বিকাশে ক্ষতি হয়। এই অসম্মানই হয়তো পরবর্তীকালে শিশুর মনে হিংসার জন্ম দেয়। শিশুদের শাসনের সময় বড়দের সচেতন থাকতেই হবে পারতপক্ষে অসম্মানসূচক কোনও শব্দ ব্যবহার করা যাবে না।

আমি যেমন গল্প বলি ছোটদের, তেমনই ওদের কাছ থেকে গল্পও শুনি। ছোটদের গল্প বলার সময় অনেকবার শুনেছি ওরা দুষ্টু চরিত্র বর্ণনা করতে গিয়ে বলছে, ‘লোকটি কী শয়তান’! শয়তানের বদলে যদি দুষ্টু লোক বলতে শেখানো যায় তবে মন্দ কী! ‘শয়তান’ শব্দের আসল মানে ( ইহুদি খ্রিষ্টীয় ও ইসলামি ধর্মশাস্ত্রের পাপকর্মের প্রেরণাদাতা) বলে দিতে হবে। তবে হয়েতো ওরা কুটিল, জটিল চরিত্রে ব্যাখ্যা অন্য ভাবে দেবে। বলতে পারে খারাপ লোক , বাজে লোক।

ছোটদের আদর করতে হবে, শাসনও করতে হবে, তার জন্য বড়দের নিজেদের শব্দ ব্যবহারে নজর দিতে হবে। এ কথা ঠিক, চারপাশ থেকে নানা ধরনের কুকথা ছোটদের কানে আসবে। সেটা বন্ধ করার ক্ষমতা আমাদের কারও নেই। ফলে ছোটরা বাইরে থেকে কুকথা শুনবে এবং জানবে। কিন্তু তারা যদি দেখে বাড়িতে এবং স্কুলে এই ধরনের কথা কেউ বলছে না, তখন তাদের মধ্যেও একটা বিবেচনা বোধ জন্ম নেবে কোথায় কী বলতে হয় বা কী বলতে হয় না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement