প্রতীকী চিত্র।
হাতে সময় কম, ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে উচ্চ মাধ্যমিকের চূড়ান্ত পর্ব। পুজোর ছুটি শেষে পঠনপাঠন শুরু হলেও হাতে বই নেই পড়ুয়াদের। একই অবস্থায় একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদেরও। অভিযোগ, ক্লাস শুরু হলেও পাঠ্যবইয়ের তালিকা দিতে পারেনি স্কুলগুলি। কেন এই সমস্যা? দায় ঠেলাঠেলি চলছে স্কুল-উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ ও প্রকাশনা সংস্থাগুলির মধ্যে।
পুজোর ছুটির আগে শেষ হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম পর্বের পরীক্ষা। ফলঘোষণা হবে ৩১ অক্টোবর। এ দিকে দ্বিতীয় তথা চূড়ান্ত পর্বের পরীক্ষা হবে আগামী ফেব্রুয়ারিতে। ২০২৬ বিধানসভা ভোটের কারণে এগিয়ে আসছে পরীক্ষা। দশম শ্রেণির পরীক্ষা, শীতাবকাশ, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বা সরস্বতী পুজোর মতো নানা কারণে পঠনপাঠন বন্ধ থাকবে মাঝখানে বেশ কিছু দিন। অথচ, পড়ুয়ারা এখনও জানে না বিষয়ভিত্তিক কোন কোন বই পড়তে হবে।
স্কুল শিক্ষকদের একাংশের দাবি, তাঁরা নিজেরাই নিশ্চিত নন বাজারে বিষয় ভিত্তিক কোন কোন বই প্রকাশিত হয়েছে বা সেগুলির মান কেমন। তালিকা তৈরি হবে কী করে! উত্তর কলকাতার পার্ক ইনস্টিটিউশন-এর প্রধানশিক্ষক সুপ্রিয় পাঁজা বলেন, “পরীক্ষা শেষের পর লম্বা ছুটি কাটিয়ে ক্লাস শুরু হচ্ছে মঙ্গলবার থেকে। পড়ুয়ারা সমস্ত বিষয়ের বই হাতে না পেলে অসুবিধা মধ্যে পড়বে।”
উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বাংলা, ইংরেজি ও সংস্কৃত বই পড়ুয়ারা বিনামূল্যে পেয়ে থাকে। বাকি বিষয়ের বই তাদের কিনতে হয় বেসরকারি প্রকাশনা সংস্থা থেকে। জানা গিয়েছে, সরকারি বইগুলি ইতিমধ্যেই স্কুলে পৌছে গিয়েছে। এমনকি যদি কোনও স্কুল যদি তা না পেয়ে থাকে তা হলে শিক্ষা সংসদের ‘বুক মার্ট’ থেকে সংগ্রহ করা যাবে, বলে জানিয়েছে সংসদ।
কিন্তু অন্য বইগুলির তালিকা কেন দিতে পারল না স্কুলগুলি? জানা গিয়েছে, নতুন সেমেস্টার পদ্ধতি চালু হওয়ার পর এ বছর বই ছাপতেই খানিক দেরি হয়েছে। প্রকাশনা সংস্থাগুলির অভিযোগ, সরকারের কাছ থেকে টেক্সট বুক নম্বর (টিবি নম্বার) পেতে সময় লেগেছিল তাই বই ছাপাতে দেরি হয়। কলকাতার এক প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধার গৌরদাস সাহা বলেন, “সেপ্টেম্বরের শেষ থেকেই আমরা সমস্ত স্কুলে ডাকযোগে বই পাঠিয়েছি। বাজারেও বই চলে গিয়েছে। অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তবে হ্যাঁ, এ বছর বই ছাপাতেই দেরি হয়ে গিয়েছে।”
যদিও শিক্ষা সংসদের দাবি, তাদের তরফ থেকে সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে আগেই। শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, “সমস্ত বই রিভিউ করে টিবি নম্বর দেওয়া হয়ে গিয়েছে আগেই। আশা করি বাজারে বই চলে এসেছে। আর যদি বাজারে বই না পাওয়া যায় তা হলে আমাদের বুক স্টলে পাওয়া যাবে। স্কুলগুলি চাইলে সেখান থেকেও দেখে নিতে পারে।”
যদিও স্কুলগুলি পাল্টা অভিযোগ তুলেছে, সংসদের ‘বুকমার্ট’ থেকে যে বই দেখে নেওয়া যেতে পারে, তা তারা জানতই না। সরকারি কোনও নির্দেশ আসেনি। এ প্রসঙ্গে চিরঞ্জীব বলেন, “সংসদের ওয়েবসাইটে সমস্ত নির্দেশিকা রয়েছে। রাজ্যের সমস্ত স্কুলকে তো আলাদা আলাদা ভাবে জানানো সম্ভব নয়। আমরা সমস্ত প্রধানশিক্ষককে অনুরোধ করব তাঁরা যেন ওয়েবসাইটটি নিয়মিত নজরে রাখেন।”
যদিও এই দায় ঠেলাঠেলিতে আখেরে ক্ষতি হচ্ছে পড়ুয়াদের, মনে করছেন শিক্ষকদের একাংশ। নারকেলডাঙা হাইস্কুলের ইংরেজি সহকারী শিক্ষক স্বপন মণ্ডল বলেন, “স্কুলগুলি পাঠ্যবই হাতে না পেলে চতুর্থ সেমেস্টারের পাঠ্যক্রম শেষ করা সম্ভব নয়। সমস্যায় শিক্ষক থেকে পড়ুয়ারা।”
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিকের চূড়ান্ত পরীক্ষা। তা শেষ হবে ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৬। আগামী মঙ্গলবার থেকে শুরু হবে স্কুলের পঠনপাঠন। যদিও বেশির ভাগ স্কুল পুজোর ছুটির মধ্যেই অনলাইন ক্লাস শুরু করে দিয়েছে। কী ভাবে পড়াচ্ছেন তাঁরা? নারায়ণদাস বাঙ্গুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া বলেন, “পাঠ্যক্রমের যে সমস্ত অংশ রয়েছে অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে, আপাতত তা থেকেই পড়াচ্ছি। তবে ভাল ফল করার জন্য পড়ুয়াদের হাতে বই পৌঁছনো খুবই জরুরি।”