New Subject in Schools

আসন্ন শিক্ষাবর্ষ থেকে ‘আর্ট অ্যান্ড ওয়ার্ক এডুকেশন’-এ চালু হচ্ছে পাঠ্যক্রম

৯০-এর দশক পর্যন্ত মাধ্যমিকে কর্মশিক্ষা এবং শারীরশিক্ষা বিষয়টি বাধ্যতামূলক ছিল। ৯০ দশকের শেষ লগ্নে মাধ্যমিক স্তরে এই দু’টি বিষয়কে ঐচ্ছিক বিষয় হিসাবে পড়ানো শুরু হয় এবং কোনও পরীক্ষার্থী এই বিষয় নিয়ে পরীক্ষা দিলে মোট প্রাপ্ত নম্বর থেকে ৩৪ নম্বর বাদ দিয়ে বাকি নম্বর যুক্ত করা হত।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২৪ ১৫:২৫
Share:

প্রতীকী ছবি

আসন্ন শিক্ষাবর্ষ থেকে চালু হতে চলেছে ‘আর্ট অ্যান্ড ওয়ার্ক এডুকেশন’-এর পাঠ্যক্রম। ‌ স্বাস্থ্য ও শারীর শিক্ষার বিষয় পাঠ্যক্রম ও বই থাকলেও ‘আর্ট অ্যান্ড এডুকেশন’ নিয়ে কোন নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রম বা বই ছিল না। যার ফলে শিক্ষক থেকে পড়ুয়ারা বিস্তর সমস্যায় পড়তেন, এ বার সেই সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হল সরকার।

Advertisement

সিলেবাস কমিটির চেয়ারম্যান উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রাথমিক থেকে উচ্চ প্রাথমিক স্তর পর্যন্ত এই বিষয়ে পাঠ্যক্রম তৈরি করে বই দেওয়া হবে স্কুল শিক্ষা দফতরের তরফ থেকে। এই নিয়ে সমস্ত রকম চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়ে গিয়েছে। এত দিন পর্যন্ত এই সংক্রান্ত কোনও পাঠ্যক্রম ছিল না বিষয়টি পড়ানো হলেও। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে চূড়ান্ত বৈঠক রয়েছে।”

প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিক স্তরে বিষয়টি পড়ানো হলেও নির্দিষ্ট কোন বই বা পাঠ্যক্রম না থাকায় স্কুলগুলির সঙ্গে শিক্ষা দফতরের সামঞ্জস্যের অভাব ছিল তার ফলেই এই ধরনের সিদ্ধান্ত স্কুল শিক্ষা দফতরের। যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য বলেন, “আর্ট অ্যান্ড ওয়ার্ক এডুকেশন এবং স্বাস্থ্য ও শারীর শিক্ষা একই শ্রেণীভুক্ত ছিল। এই বিষয়ে কোনও পাঠ্যক্রম বা বই না থাকার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের সমস্যা হত।”

Advertisement

৯০-এর দশক পর্যন্ত মাধ্যমিকে কর্মশিক্ষা এবং শারীরশিক্ষা বিষয়টি বাধ্যতামূলক ছিল। ৯০ দশকের শেষ লগ্নে মাধ্যমিক স্তরে এই দু’টি বিষয়কে ঐচ্ছিক বিষয় হিসাবে পড়ানো শুরু হয় এবং কোনও পরীক্ষার্থী এই বিষয় নিয়ে পরীক্ষা দিলে মোট প্রাপ্ত নম্বর থেকে ৩৪ নম্বর বাদ দিয়ে বাকি নম্বর যুক্ত করা হত।‌ ‘কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেড মিস্ট্রেসেস’-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, “সিলেবাস না থাকায় স্কুলগুলি তার নিজের মতন পড়ুয়াদের পড়াতো বা হাতের কাজ শেখাত। তার ফলে একটা বৈষম্য তৈরি হচ্ছিল শিক্ষাক্ষেত্রে। নির্দিষ্ট বই ও পাঠ্যক্রম হলে পড়ুয়া থেকে শিক্ষকদের সবার সুবিধা হবে।”

২০১১ সালের পর পাঠ্যক্রমের আধুনিকরণ করা হয় এবং তার পরেই কর্মশিক্ষা এবং শারীরশিক্ষা এই দু’টি বিষয় মাধ্যমিক স্তরে পড়ানো বন্ধ করে দেয় স্কুল শিক্ষা দফতর। তবে প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিক স্তরে এটি বাধ্যতামূলক বিষয় হিসাবে এখনও পর্যন্ত পড়ানো হয়ে থাকে। পাঠ্যক্রমের আধুনিকরণের সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক নামকরণের পরিবর্তন আনা হয়, শারীরশিক্ষার সঙ্গে যুক্ত করা হয় ‘স্বাস্থ্য’। নামকরণ করা হয় স্বাস্থ্য ও শারীরশিক্ষা। একই ভাবে ‘আর্ট এডুকেশন’ এর উপর জোর দেওয়া হয়। যার নামকরণ করা হয় ‘আর্ট এবং ওয়ার্ক এডুকেশন’। ‘আর্ট এবং ওয়ার্ক এডুকেশন’ নামকরণ করা হলেও এই সংক্রান্ত কোন‌ও বই বা পাঠ্যক্রম তৈরি করা হয়নি স্কুল শিক্ষা দফতরের তরফ থেকে। বাজার চলতি বিভিন্ন বই থেকে প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্তরের পড়ুয়াদের ক্লাস করানো হত স্কুলগুলির তরফ থেকে। স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, একাধিক স্কুল ও বিভিন্ন সংগঠনের তরফ থেকে অভিযোগ এসেছিল বই বা সুনির্দিষ্ট কোন পাঠ্যক্রম না থাকায় রাজ্যের সমস্ত স্কুলে এই বিষয়ের উপর সমান ভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সুনির্দিষ্ট পাঠ্যক্রম না থাকায় পড়ুয়া ও অভিভাবকদের মধ্যে এই বিষয় নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। স্কুলশিক্ষা দফতর স্কুলগুলির মধ্যে সামঞ্জস্য রাখার জন্যই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “সবার আগে শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য শারীরশিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা উচিত। ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি অনুযায়ী প্রাথমিক স্তর থেকে খেলাধুলা বাধ্যতামূলক করতে বলা হয়েছে। সরকার ভাল জিনিস গ্রহণ করছে না তার বদলে জাতীয় শিক্ষানীতির খারাপগুলি গ্রহণ করছেন।”

পাশাপাশি, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠ্যক্রম পরিবর্তনে অগ্রসর হয়েছে রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যে বিশেষজ্ঞ কমিটির বৈঠক হয়েছে। জুন মাসে বিষয় ভিত্তিক বিশেষজ্ঞরা স্কুল শিক্ষা দফতরের কাছে এবং সিলেবাস কমিটির কাছে তাঁদের মতামত জমা দেবেন। ৫৮ টি বই পাঠ্যক্রমে পড়ানো হয়ে থাকে তা বিশেষজ্ঞরা খতিয়ে দেখছেন। উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিশেষজ্ঞ কমিটি তাদের কার্যপ্রক্রিয়া শুরু করেছেন। জুন মাসে রিপোর্ট জমা দিলে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে। আমরা চাই আধুনিক ও যুগোপযোগী পাঠ্যক্রম তৈরি হোক রাজ্যে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন