পাকিস্তানতে হারিয়ে জয়োল্লাস। ছবি: এপি।
প্রত্যাশিত ফলাফল। অস্ট্রেলিয়া পাকিস্তানকে ছ’উইকেটে হারিয়ে প্রত্যাশামতোই সেমিফাইনালে ভারতের সামনে।
এ বারের বিশ্বকাপের নক আউট পর্ব এতটাই ম্যাড়মেড়ে হচ্ছে যে, বলতে বাধ্য হচ্ছি অন্যান্য বারের তুলনায় এ বারের বিশ্বকাপ তেমন জমছে না। আসল বিশ্বকাপটা বোধহয় মাত্র তিনটে ম্যাচের হবে। দুটো সেমিফাইনাল ও ফাইনাল, ব্যাস!
প্রথম দুটো কোয়ার্টার ফাইনাল একপেশে হওয়ার পর আশা ছিল অন্তত শুক্রবার অ্যাডিলেডে একটা জমজমাট লড়াই দেখব। পাকিস্তানের হারটা অপ্রত্যাশিত নয়। কিন্তু এ ভাবে অনায়াসে ওদের হারিয়ে দেবে অজিরা, এটা ভাবিনি।
আসলে পাকিস্তানের ব্যাটিংটা বরাবরই এ রকম দুর্বল। ওদের তো বিশ্বকাপে এতদূর টেনে নিয়ে এসেছে ওদের বোলিং। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার জন্য ওদের বোলাররাও অস্বাভাবিক চাপে পড়ে গেল। ২১৩ রানের পুঁজি নিয়ে আর যা-ই হোক, অস্ট্রেলিয়ার মতো চ্যাম্পিয়নশিপের অন্যতম দাবিদারদের বিরুদ্ধে জেতা যায় না।
অ্যাডিলেডে অস্ট্রেলিয়ার বোলিং সামলানোর জন্য যে পরিকল্পনাটা দরকার ছিল পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ে, তা কোথায়? সবচেয়ে বড় কথা, ১১২ রানে যখন চার উইকেট পড়ে গেল, তখন উইকেটে টিকে থেকে একটা বড় পার্টনারশিপের জন্য উদ্যোগী হওয়াটা খুব জরুরি ছিল। কিন্তু, সেই তাগিদটা দেখা গেল না ওদের কোনও ব্যাটসম্যানের মধ্যে। ওই সময় সাহিদ আফ্রিদির মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ও যে ক্রিজে এসে কিছু করতে পারল না, এটাই আরও অবাক করার মতো। এই সব সময়ে যখন আফ্রিদির মতো অভিজ্ঞ লোকেদেরই দরকার, তখন তারা ব্যর্থ হলে তো আর কিছু করার থাকে না। ওই সময় থেকেই পাকিস্তানের হারের দিকে ঢলে পড়া শুরু।
তবু ওয়াহাব রিয়াজ, সোহেল খানরা বোলিংয়ের শুরুটা ভালই করেছিল। কারণ, ওরা জানত, অস্ট্রেলিয়াকে শুরুতেই ধাক্কা দিতে পারলে জেতার একটা চেষ্টা করা যাবে। সেই প্রাথমিক লক্ষ্যে ওরা সফলও হয়, অস্ট্রেলিয়ার ৫৯ রানের মধ্যে তিনটে উইকেট ফেলে দিয়ে। কিন্তু সাফল্য পেলেই তো আর হয় না, তা ধরে রাখাটা আরও কঠিন। তা ছাড়া, বাঘের গুহায় ঢুকে শুরুতেই বাঘকে জখম করে দিলে যে সেই বাঘ আরও হিংস্র হয়ে উঠবে, সে তো জানা কথাই। বিপক্ষের সেই হিংস্র রূপটা সামলানোর ক্ষমতাও থাকা দরকার। দেখা গেল, পাক বোলারদের সেটাই নেই। তার উপর ওয়াটসন ও ম্যাক্সওয়েলকে জীবন দান করলে তো লড়াইয়ে ফেরার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। ক্যাচ দুটো না ছাড়লে হয়তো ছবিটা অন্য রকম হত, অস্ট্রেলিয়াকে ফের চাপে ফেলতে পারত পাকিস্তান। কিন্তু এই স্তরের ক্রিকেটে যে একটা ছোট ভুলেরই চরম মাশুল দিতে হয়, তা ফের টের পেল পাকিস্তান।
অজিদের বিরুদ্ধে একটা মরণ-বাঁচন লড়াইয়ে স্লেজিং একটা বড় ব্যাপার। এ দিন সারা ম্যাচে সেটা ভরপুর হল। এই ব্যাপারে পাক ক্রিকেটারদের বাহবা দেওয়া উচিত। ওরা অজিদের সঙ্গে সমানে টক্কর দিয়ে গিয়েছে। একবার তো আম্পায়ারকে মুখে আঙুল দিয়ে চুপ করতে বলতেও হল, দেখলাম। কিন্তু এই লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জিতল অস্ট্রেলিয়াই। কারণ, এই ব্যাপারে ওরা বিশেষজ্ঞ এবং টেম্পারামেন্টের দিক দিয়েও ওরা এগিয়ে। ওদের মানসিক ভাবে দুর্বল করে দেওয়া বেশ কঠিন কাজ। সেটা করতে গিয়ে বরং নিজেদের লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। পাকিস্তান সেই ফাঁদেই পা দিল। স্মিথ ও ওয়াটসন যখন ৮৯ রানের পার্টনারশিপ গড়ছে, তখন ওদের নানা ভাবে উত্যক্ত করার চেষ্টা করছিল পাকিস্তানিরা। কিন্তু স্মিথরা অটল। টিভিতে ওদের অভিব্যক্তি দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, ও সব ওদের কাছে কোনও ব্যাপারই নয়।
এই অস্ট্রেলিয়াকে সেমিফাইনালে বেগ দেওয়াটা ভারতের পক্ষে মোটেই সোজা হবে না। বিশ্বকাপে এই প্রথম একটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের বাতাবরণ তৈরি হল। যেখানে কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমিও সহজে ছাড়বে না। তবে ম্যাচটা যেহেতু সিডনিতে, তাই ভারতের দুই স্পিনার অস্ট্রেলিয়ার কাছে কাঁটা হয়ে উঠতে পারে। তাই এখন থেকেই এই দুই অস্ত্রে শান দিক ভারত। নেটে অশ্বিন, জাডেজাকে বরং ভাল করে বোঝানো হোক আগামী বৃহস্পতিবার ওদের ভূমিকা ঠিক কী। বাকিটা সামলানোর জন্য ভারতের ব্যাটিং বিভাগ তো আছেই। সিডনি বলেই স্পিনারদের জন্য সামান্য এগিয়ে রাখছি ভারতকে। হয়তো ৫১-৪৯।
দুঃখিত, তার বেশি পারছি না। কারণ, দলটার নাম অস্ট্রেলিয়া!
ছবি: এপি।