কাউন্সিলরের ভাইয়ের মৃত্যু, ৮টি গাড়িতে আগুন, উত্তাল শালিমার

আটটি ট্রেলারে আগুন। জ্বলল একটি ইনোভা গাড়িও। নামল কমব্যাট ফোর্স, র‌্যাফ। তৃণমূলের এক কাউন্সিলরের ভাইয়ের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ালো হাওড়ার শালিমারে। সকালে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হল শালিমারের ডিউক রোডের কাছে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার গাড়ি-সহ ইয়ার্ডের গোটা তিনেক ট্রেলারে। পরে দুপুরে ঘটনাস্থলের কাছেই কোল ডিপো এলাকায় আরও দু’টি ট্রেলারে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। দমকলের পাঁচটি ইঞ্জিনের চেষ্টায় বেশ খানিক ক্ষণ পর নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৫ ১২:৪১
Share:

জ্বলছে ট্রেলার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

আটটি ট্রেলারে আগুন। জ্বলল একটি ইনোভা গাড়িও। নামল কমব্যাট ফোর্স, র‌্যাফ। তৃণমূলের এক কাউন্সিলরের ভাইয়ের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ালো হাওড়ার শালিমারে।

Advertisement

সকালে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হল শালিমারের ডিউক রোডের কাছে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার গাড়ি-সহ ইয়ার্ডের গোটা তিনেক ট্রেলারে। পরে দুপুরে ঘটনাস্থলের কাছেই কোল ডিপো এলাকায় আরও দু’টি ট্রেলারে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। দমকলের পাঁচটি ইঞ্জিনের চেষ্টায় বেশ খানিক ক্ষণ পর নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এলাকায় নামে কমব্যাট ফোর্স এবং র‌্যাফ। শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ ভাবেই একে একে আগুনে ভস্মীভূত হয়ে যায় ৮টি গাড়ি।

পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন সকালে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় চিকিৎসাধীন বিনোদ কুমার সিংহ ওরফে ভীম-এর। তিনি হাওড়ার ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিনয় সিংহের ভাই। সপ্তাহ দু’য়েক আগে ওই এলাকাতেই গুলিবিদ্ধ হন বিনোদ-সহ দু’জন। অভিযোগ ওঠে তৃণমূলেরই অন্য এক নেতা প্রদীপ তিওয়ারির বিরুদ্ধে। বিনোদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই কাউন্সিলরের সমর্থকেরা প্রদীপ তিওয়ারির গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। আগুন লাগানো হয় প্রদীপবাবুর তিনটি ট্রেলারেও।

Advertisement


ছবি: দেবাশিস দাশ।

দিন কয়েক আগে শালিমারের রেল ইয়ার্ডে স্থানীয় কাউন্সিলর বিনয় এবং প্রদীপের গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ বাধে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রদীপ এবং বিনয়ের পরিবহণের ব্যবসা রয়েছে। শালিমার রেল ইয়ার্ডে পণ্য খালাসের কাজে তাঁদের ট্রাক ব্যবহার করা হয়। এই নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে ব্যবসায়িক বিবাদ দীর্ঘ দিনের। পাশাপাশি রাজনৈতিক বিবাদও রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, প্রদীপ প্রথম থেকেই তৃণমূল নেতা হিসেবে পরিচিত হলেও বিনয় প্রথমে কংগ্রেসের সমর্থক ছিলেন। পরে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন এবং প্রদীপবাবুকে হারিয়েই কাউন্সিলর হন।

দীর্ঘ দিনের এই বিবাদ চরম মাত্রায় পৌঁছয় ৬ এপ্রিল। বচসা পরে হাতাহাতি এমনকী গুলিচালনা পর্যন্তও পৌঁছয়। অভিযোগ ওঠে, প্রদীপের সমর্থকদের ছোড়া গুলিতে বিনয় সিংহের ভাই বিনোদ এবং তাঁর ভাগ্নে রাজেশ সিংহ গুরুতর আহত হন। তাঁদের দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার পর শিবপুর থানায় প্রদীপ-সহ ছয় জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেন বিনয়। কিন্তু সেই ঘটনার দু’সপ্তাহ কেটে গেলেও এই ঘটনায় এখনও কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ।

প্রদীপবাবু অবশ্য দাবি করেছিলেন, ‘‘নিবার্চনে হেরে গেলেও আমি এখনও তৃণমূলই করি। চক্রান্ত করে আমাকে এবং আমার ভাইদের ফাঁসানো হচ্ছে।’’ প্রদীপ এ কথা দাবি করলেও তৃণমূলের হাওড়া জেলা সভাপতি (শহর) তথা রাজের কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘‘নিবার্চনে হেরে প্রদীপ দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেনি। দলেও আর নেই।’’

স্থানীয়দের অভিযোগ, এ দিন বিনোদের মৃত্যুর খবর পেয়েই এক দল দুষ্কৃতী ডিউক রোডে প্রদীপের অফিসের সামনে হামলা চালায়। অফিসের সামনে রাখা প্রদীপের একটি ইনোভা গাড়ি এবং তিনটি ট্রেলারে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। আরও কয়েক ঘন্টা পরে এলাকারই আরও দুটি ট্রেলারে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। তবে এক্ষেত্রে ট্রেলার গুলি অভিযুক্ত প্রদীপবাবুর ছিল না। এ দিনের ঘটনাতে তল্লাশি চালিয়ে ২জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আটক করা হয়েছে আরও দু’জনকে। এ দিন বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ বিনোদের মৃত দেহ শালিমারের বাড়িতে পৌঁছয়। এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন