ইউএপিএতে দোষী সাব্যস্ত ছত্রধর, সাজা ঘোষণা মঙ্গলবার

রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা ইউএপিএ (আনলফুল অ্যাক্টিভিটিজ প্রিভেনশন অ্যাক্ট)-তে দোষী সাব্যস্ত হলেন জনগণের কমিটির নেতা ছত্রধর মাহাতো-সহ চার জন। ছত্রধর ছাড়া বাকি তিন জন হলেন সুখশান্তি বাস্কে, শম্ভু সরেন এবং সাগেন মুর্মু। সোমবার ইউএপিএ-র পাঁচটি ধারায় এঁদের দোষী সাব্যস্ত করেন মেদিনীপুরের চতুর্থ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক কাবেরী বসু। মঙ্গলবার সাজা ঘোষণা হবে। মেদিনীপুর আদালতে ইউএপিএ ধারায় এই প্রথম কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা হল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৫ ১৯:১১
Share:

সাজা ঘোষণার আগে মেদিনীপুর আদালতের পথে ছত্রধর। মঙ্গলবার সৌমেশ্বর মণ্ডলের তোলা ছবি।

রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা ইউএপিএ (আনলফুল অ্যাক্টিভিটিজ প্রিভেনশন অ্যাক্ট)-তে দোষী সাব্যস্ত হলেন জনগণের কমিটির নেতা ছত্রধর মাহাতো-সহ চার জন। ছত্রধর ছাড়া বাকি তিন জন হলেন সুখশান্তি বাস্কে, শম্ভু সরেন এবং সাগেন মুর্মু। সোমবার ইউএপিএ-র পাঁচটি ধারায় এঁদের দোষী সাব্যস্ত করেন মেদিনীপুরের চতুর্থ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক কাবেরী বসু। মঙ্গলবার সাজা ঘোষণা হবে। মেদিনীপুর আদালতে ইউএপিএ ধারায় এই প্রথম কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা হল।

Advertisement

এ দিন আদালত চত্বরেই শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন ছত্রধররা। এজলাস থেকে বেরিয়ে প্রিজন ভ্যানে উঠতে উঠতে ছত্রধর বলেন, “আজ যারা (তৃণমূল) ক্ষমতায় আছে, তারা তো আমাদের আন্দোলনে ছিল। আন্দোলনকে স্বীকৃতিও দিয়েছে। অথচ আমাদের দোষী সাব্যস্ত করা হল আন্দোলনে ছিলাম বলেই।” ছত্রধরদের সঙ্গেই অভিযুক্ত ছিলেন রাজা সরখেল এবং প্রসূন চট্টোপাধ্যায়। এই দু’জনের বিরুদ্ধে অবশ্য ইউএপিএ ধারায় মামলা রুজু হয়নি। তবে দেশদ্রোহিতার অন্য ধারায় (ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২১) রাজা এবং প্রসূনকে এ দিনই দোষী সাব্যস্ত করা হয়। আদালত চত্বরে প্রসূনও ক্ষোভের সুরে বলেন, “এটা কেন্দ্র-রাজ্য উভয়ের চক্রান্ত। সংসদ থেকে আদালত— সব শাসকের দালাল। এই বিচার মানি না।”

২০০৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর লালগড়ের বীরকাঁড়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন ছত্রধর। সে দিনই তাঁর বিরুদ্ধে ইউএপি-র ৫টি এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ৬টি ধারায় মামলা রুজু হয়। তার মধ্যে অস্ত্র আইনও ছিল। ২৬ সেপ্টেম্বর লালগড় থানায় মূল যে অভিযোগটি দায়ের হয়েছিল, তার ভিত্তিতে পরবর্তীকালে আরও ছয় জনকে গ্রেফতার হয়। সব মিলিয়ে ধৃত সাত জনের মধ্যে রঞ্জিত মুর্মু জেল হেফাজতে মারা যান। ছত্রধর-সহ বাকি ছয় জনকে এ দিন হাজির করানো হয় মেদিনীপুর আদালতে। এঁদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগও এনেছিল পুলিশ। তবে আদালত এ দিন তা খারিজ করে দেয়।

Advertisement

ছত্রধরের বিরুদ্ধে মোট ৩৮টি মামলা ছিল। তার মধ্যে ৩৬টিতেই জামিন পেয়ে গিয়েছিলেন পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনগণের কমিটির এই নেতা। তবে এ দিন ইউএপিএ-সহ যে সব ধারায় ছত্রধর-সহ চার জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, তাতে যাবজ্জীবন, এমনকী মৃত্যুদণ্ডও (ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২১ ধারা) হতে পারে। এ দিন বিচারক যখন ছত্রধরদের দোষী সাব্যস্ত করেন, তখন আদালত কক্ষেই ছিলেন ছত্রধরের স্ত্রী নিয়তিদেবী, রাজা সরখেলের স্ত্রী শুক্লাদেবী, সুখশান্তি বাস্কের মা সুধারানিদেবীরা। রায় শুনে তাঁরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। বন্দিমুক্তি কমিটি, মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর কয়েকজন সদস্যও এসেছিলেন। বন্দিমুক্তি কমিটির এক সদস্য মনে করিয়ে দেন, জঙ্গলমহলে আন্দোলন পর্বে তত্‌কালীন বিরোধী নেত্রী তথা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছত্রধরদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন। মামলার শুনানি পর্বে আদালতকে সে কথা জানিয়েওছিলেন ছত্রধররা। বন্দিমুক্তি কমিটির ওই সদস্যের আক্ষেপ, “ক্ষমতায় এসে তৃণমূল সেই সব দিনের কথা কত তাড়াতাড়ি ভুলে গেল!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন