প্রতিবাদীদের হত্যার অভিযোগ থেকে মুক্তি পেলেন মুবারক

এ যেন ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যাওয়া। তাহিরির স্কোয়্যারে প্রতিবাদীদের হত্যার অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস পেলেন মিশরের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারক। শনিবার মিশরের এক আদালত এই রায় দিল। একই অভিযোগ থেকে মুক্তি পেলেন তত্‌কালীন সাত উচ্চপদস্থ নিরাপত্তা আধিকারিকও। এই রায় ঘোষণার পরে আদালত করতালিতে ভরে ওঠে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৪ ১৮:৪০
Share:

শনিবার আদালতে মিশরের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারক। ছবি: রয়টার্স।

এ যেন ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যাওয়া। তাহিরির স্কোয়্যারে প্রতিবাদীদের হত্যার অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস পেলেন মিশরের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারক। শনিবার মিশরের এক আদালত এই রায় দিল। একই অভিযোগ থেকে মুক্তি পেলেন তত্‌কালীন সাত উচ্চপদস্থ নিরাপত্তা আধিকারিকও। এই রায় ঘোষণার পরে আদালত করতালিতে ভরে ওঠে।

Advertisement

২০১০-এর শেষ দিক থেকে আরবের বেশ কয়েকটি দেশে দীর্ঘ দিন ক্ষমতাশালী শাসকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। একে আরব বসন্তের নাম দেওয়া হয়েছিল। টিউনিশিয়ায় থেকে শুরু হয়ে একে একে বেশ কয়কটি দেশে বিক্ষোভ ছড়াতে থাকে। আঁচ পড়ে মিশরেও। মিশরের তত্‌কালীন প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারক প্রায় ৩০ বছর ক্ষমতায় ছিল। অনুন্নয়, বেকার সমস্যা, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার-সহ নানা অভিযোগে মুবারকের বিরুদ্ধে পথে নামে মিশররে জনতা। কায়রোর তাহিরির স্কোয়্যার প্রতিবাদীরে বিক্ষোভের মূল কেন্দ্র হয়ে ওঠে।

টিউনিশিয়া-সহ একাধিক দেশে আরব বসন্তের প্রভাবে শাসকরা পদ ছাড়া শুরু করলে মিশরের প্রতিবাদীদের উত্‌সাহ বাড়তে থাকে। ভিড় বাড়ে তাহিরির স্কোয়্যারে। অনেক দিনের পর দিন তাঁবু খাটিয়ে প্রতিবাদে সামিল হল। এর মধ্যে মুবারক সরকার প্রতিবাদীদের দমনের চেষ্টা শুরু করেন। এর ফলে প্রাণ যায় ২৩৯ জন প্রতিবাদীর। সব মিলিয়ে মিশরে এই বিক্ষোভের সময়ে ৮০০ জনের প্রাণ যায়। কিন্তু প্রতিবাদ দমন করা সম্ভব হয়নি। ২০১১-এর ১১ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন হোসনি মুবারক।

Advertisement

এর পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরিচালনায় নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে মুসলিম ব্রাদারহুড। প্রেসিডেন্ট পদে বসেন মহম্মদ মরসি। শুরু হয় হোসনি মুবারকের বিচার। নানা অভিযোগের পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে তাহরির স্কোয়্যারে ২৩৯ জন প্রতিবাদীকে হত্যার অভিযোগও আনা হয়। একই সঙ্গে গামাল ও আলা মুবারকের দুই সন্তানের বিরুদ্ধে নানা আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে বিচার শুরু হয়।

কিন্তু মিশরের শান্তি স্থায়ী হয়নি। মিশর জুড়ে আবার বিক্ষোভ শুরু হয়। অস্থিরতা কমাতে মরসিকে ক্ষমতাচ্যূত করে মিশরে সেনা-শাসন শুরু হয়। এর আগে ২০১২-এর জুনে মুবারকের বিচার শেষ হয়। হত্যার অভিযোগে তাঁকে যাবজ্জীবন কারদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু পরে পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে এই রায় বাতিল হয়ে যায়। আবার বিচার শুরু হয়। ইতি মধ্যেই মিশরে নতুন করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রেসিডেন্ট পদে বসেন সামরিক শাসক আল সিসি। তার পরে আজ মুবারকের পুনর্বিচারের রায় এল।

এ দিন হুইলচেয়ারে করে অসুস্থ মুবারকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে তিনি এর মধ্যেই তিন বছরের কারদণ্ড ভোগ করছেন। তবে আজকের রায়ে প্রতিবাদীদের হত্যার অভিযোগ থেকে মুবারক ও সাত উচ্চপদস্থ নিরাপত্তা আধিকারিকে বেকুসর খালাস করেছে আদালত। একই সঙ্গে ইজরায়েলে বেআইনি ভাবে গ্যাস সরবরাহের অভিযোগ থেকেও তিনি মুক্তি পেয়েছেন। দুর্নীতির অভিযোগ থেকে মুক্তি পেয়েছেন গামাল ও আলাও। রায় শোনার পরে মুবারকের সমর্থকরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। কিন্তু নিহত প্রতিবাদীদের পরিবারগুলির মধ্যে হতাশা নেমে আসে। কয়েকটি জায়গায় ছোটখাটো বিক্ষোভ হয়। এক প্রতিবাদী বলেন, “আসলে শাসক পাল্টে গেলেও, শাসন একই আছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন