বিদেশি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট আছে এমন ৬২৭ জনের নাম সুপ্রিম কোর্টে মুখবন্ধ খামে জমা দিল কেন্দ্র। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে ওই নামের তালিকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। মঙ্গলবারের সেই নির্দেশের পর কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানিয়ে দেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আদালতকে সকলের নাম জানানো হবে। সেই মতোই এ দিন নামের তালিকা তুলে দেওয়া হয় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এইচ এল দাত্তুর নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চের হাতে।
মুখবন্ধ সেই খাম তারা খুলবে না বলে এ দিন জানিয়ে দেয় আদালত। এর আগে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন এক বিচারপতির নেতৃত্বে কালো টাকা মামলায় বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করে শীর্ষ আদালত। এ দিন সেই সিট-এর উপরই ভরসা রেখেছে ডিভিশন বেঞ্চ। বিচারপতিরা জানিয়ে দেন, সিট-ই কালো টাকা মামলার তদন্ত চালাবে। নামের তালিকা-বন্দি খাম নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ কী করা হবে তা ঠিক করবে ওই তদন্তকারী দল। এমনকী, সিটের চেয়ারম্যান বা ভাইস-চেয়ারম্যান ওই খাম খুলতেও পারেন বলে আদালত জানিয়ে দিয়েছে। যদিও এ দিন অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহাতগি দাবি করেন, এই একই তালিকা কেন্দ্র এ বছরের ২৭ জুন সিট-এর হাতে তুলে দিয়েছে। এ দিন তালিকা পাওয়ার পর আদালত সিট-কে নির্দেশ দেয়, আগামী বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে কালো টাকা সংক্রান্ত সকল তদন্ত শেষ করতে হবে। শুধু তাই নয়, এ বিষয়ে একটি প্রাথমিক রিপোর্ট আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আদালতকে জানাতে হবে।
এই তালিকার ভিত্তি কী?
সরকারি সূত্রে খবর, বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের চুক্তি হওয়ার ফলে তারা এই সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করেছে। কিন্তু সেই তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রেও রয়েছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন শর্ত। সেই অনুযায়ী যাঁদের বিরুদ্ধে প্রমাণ মিলেছে বা আদালতে বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হয়েছে, তাঁদের নামই আদালতে প্রকাশ করা যাবে। এই শর্তের বেড়াজালেই তাঁরা নাম প্রকাশ করতে পারছেন না বলে আগেই জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। এ দিন অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহাতগি আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে বলেন, “যে ৬২৭ জনের তালিকা এ দিন আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে, সেই তালিকা আমাদের ফ্রান্স দিয়েছে। ২০১১ সালে জেনিভার এইচএসবিসি ব্যাঙ্কের এক কর্মী ফ্রান্সকে ওই ব্যাঙ্কে যে সমস্ত ভারতীয় ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট আছে তাঁদের নামের একটি তালিকা দেন। চুক্তি অনুযায়ী সেই তালিকাই পরে ভারতের হাতে তুলে দেয় ফ্রান্স।” পাশাপাশি, রোহাতগি আরও জানান, ওই তালিকার অর্ধেকেরও বেশি গ্রাহক ভারতীয় নাগরিক। বাকিরা অনাবাসী ভারতীয়। তিনি বলেন, “অনাবাসী ভারতীয়রা আয়করের আওতায় না পড়লেও পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
গত সোমবার এই মামলায় ডাবর ইন্ডিয়া গোষ্ঠীর প্রদীপ বর্মণ, রাজকোটের ব্যবসায়ী পঙ্কজ চিমনলাল লোধিয়া এবং গোয়ার খনি সংস্থা টিম্বলো-র নাম আদালতে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছিল কেন্দ্র। ওই হলফনামায় টিম্বলো গোষ্ঠীর পাঁচ পরিচালকের নামও উল্লেখ করা হয়। এর পরই বিরোধী দলগুলি সরব হয়ে ওঠে। কেন সমস্ত নাম প্রকাশ করছে না কেন্দ্র, তবে কি কারওকে আড়াল করতে চাইছে মোদী সরকার? ওঠে সেই প্রশ্নও। মঙ্গলবার প্রায় একই সুরে কেন্দ্রকে ভর্ৎসনা করে শীর্ষ আদালত। ডিভিশন বেঞ্চ সরকারের কাছে জানতে চায়, “আপনারা কেন বিদেশি ব্যাঙ্কে যাঁদের অ্যাকাউন্ট আছে তাঁদের মাথায় ছাতা ধরছেন?” কেন্দ্র যদিও প্রথম থেকে যে কথা বলে আসছিল তারই পুনরাবৃত্তি করে। আদালতকে তারা জানিয়ে দেয়, বিদেশের ব্যাঙ্কে যাঁদের অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ হলেই সমস্ত তথ্য আদালতকে জানানো হবে। আদালত যদিও কেন্দ্রের ওই যুক্তি মানেনি। ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, আগে অ্যাকাউন্ট মালিকদের নাম জানাতে হবে, তার পর তারাই নির্দেশ দেবে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে। আদালত যদিও এই নাম জানানোর নির্দেশ আগেই দিয়েছিল। কিন্তু বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তির কারণ দেখিয়ে সেই নির্দেশে সংশোধন আনার আবেদন জানায় কেন্দ্র। শীর্ষ আদালত যদিও সেই আবেদন গ্রাহ্য করার কোনও কারণ নেই বলে জানিয়ে দিয়ে সমস্ত নাম বুধবারের মধ্যে জানানোর নির্দেশ দেয়। সেই মতোই এ দিন কেন্দ্র এক প্রকার বাধ্য হয়েই ওই তালিকা আদালতের হাতে তুলে দিল।