চার বছর জেল, সঙ্গে ১০০ কোটির জরিমানা জয়ার

হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তি মামলায় চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হল তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতাকে। এরই পাশাপাশি, তাঁর ১০০ কোটি টাকার জরিমানাও হয়েছে। তিনি আগামী দশ বছর কোনও নির্বাচনেও লড়তে পারবেন না। তাঁরই সঙ্গে চার বছরের কারাদণ্ড হয়েছে বাকি তিন জনের। এঁদের জরিমানা করা হয়েছে দশ কোটি টাকা করে। অনাদায়ে তাঁদের অতিরিক্ত এক বছরের কারাবাস করতে হবে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১৪:৩১
Share:

কোয়ম্বত্তূরে এআইএডিএমকে সমর্থকদের বিক্ষোভ। ছবি: পিটিআই।

হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তি মামলায় চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হল তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতাকে। এরই পাশাপাশি, তাঁর ১০০ কোটি টাকার জরিমানাও হয়েছে। তিনি আগামী দশ বছর কোনও নির্বাচনেও লড়তে পারবেন না। তাঁরই সঙ্গে চার বছরের কারাদণ্ড হয়েছে বাকি তিন জনের। এঁদের জরিমানা করা হয়েছে দশ কোটি টাকা করে। অনাদায়ে তাঁদের অতিরিক্ত এক বছরের কারাবাস করতে হবে। শনিবার বেলা সওয়া দু’টো নাগাদ তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে বেঙ্গালুরুর বিশেষ আদালত। বিকাল সওয়া ৫টা নাগাদ সাজার মেয়াদ ঘোষণা করা হয়। জেল হেফাজতে তাঁকে রাখার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। রায় ঘোষণার পরই তামিলনাড়ুর বিভিন্ন জায়গা থেকে রাজনৈতিক সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। দীর্ঘ ১৮ বছর মামলা চলার পরে দোষী সাব্যস্ত হলেন তিনি। এই রায়ের ফলে মুখ্যমন্ত্রীর পদ হারাতে চলেছেন তিনি। তাঁর বিধায়ক পদও খারিজ হয়ে যাবে। জয়ললিতাই দেশের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী যিনি ক্ষমতায় থাকাকালীন হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে পদ হারাতে চলেছেন। তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে এই রায়ের আশু এবং সুদুরপ্রসারী ফল কী হবে সে দিকে তাকিয়ে গোটা দেশ।

Advertisement

সাজা ঘোষণার পরে মুখ্যমন্ত্রীকে জেল হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। যেহেতু তাঁর তিন বছরেরও বেশি কারাদণ্ড হয়েছে তাই তিনি তাঁর জামিনের জন্য একমাত্র কর্নাটক হাইকোর্টেই আবেদন জানাতে পারবেন। যত ক্ষণ না উর্ধ্বতন কোনও আদালত এই রায়ের উপর স্থগিতাদেশ দিচ্ছে বা উল্টো রায় দিচ্ছে জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুসারে তিনি দশ বছর নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।

এ দিনের এই রায়ের পরে জয়ললিতার উত্তরসুরি খোঁজা নিয়েও যথেষ্ট জল্পনাকল্পনা তৈরি হয়েছে। তাঁর মন্ত্রিসভার প্রবীণ সদস্য ও পন্নিরসেলভাম, পরিবহণমন্ত্রী ভি সেন্থিল বালাজি প্রমুখের নাম শোনা যাচ্ছে। এ দিনই তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল কে রোসাইয়া রাজ্যের শীর্ষস্থানীয় আমলাদের ডেকে পাঠিয়ে আইনশৃঙ্খলা এবং সংশ্লিষ্ট নানা পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা করেন। পিএমকে, এমডিএমকে এবং কংগ্রেস এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে।

Advertisement

এ দিন সকালেই বিশেষ বিমানে করে বেঙ্গালুরু পৌঁছে যান তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মামলার অন্য অভিযুক্ত শশীকলা নটরাজন এবং লাভারাসি। ৬৬ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকার হিসাব বহির্ভূত মামলায় অপর অভিযুক্ত শশীকলার ভাইপো এবং তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর পালিত পুত্র সুধাকরণ। রায় ঘোষণার আগে পারাপ্পান্না আগ্রাহারা জেলের এক কিলোমিটার এলাকাকে ছোটখাটো দুর্গে পরিণত করা হয়। ১৮ বছরের পুরনো এই মামলার রায় ঘোষণা করা হয় এখানকারই বিশেষ আদালতে। রায় ঘোষণা করেন বিচারপতি জন মাইকেল ডি’কুনহা। মুখ্যমন্ত্রীর ‘ভবিষ্যত্’ জানতে প্রচুর আম্মা সমর্থক জড়ো হন এই এক কিলোমিটার সীমানার বাইরে। আগেই বেঙ্গালুরু পৌঁছে যান তামিল মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য। কোনও রকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সামলাতে মোতায়েন করা হয় প্রচুর পুলিশ ও র‌্যাফ।

১৯৯১ সালে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হন জয়া। কিন্তু পাঁচ বছর বাদে তাঁকে সরিয়ে ডিএমকে নেতা এম করুণানিধি ক্ষমতায় ফিরতেই জয়ললিতার বিরুদ্ধে হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তির মামলা দায়ের হয়। জয়ললিতার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ২৮ কেজি সোনা, ৮৮০ কেজি রুপো, সাড়ে দশ হাজার শাড়ি, ৭৫০ জোড়া জুতো, ৯১টি দামি ঘড়ি ও আরও অনেক মূল্যবান জিনিস আটক করে আয়কর দফতর। অভিযোগ প্রমাণে আয়কর দফতর তথা সরকার পক্ষ মোট ২৫৯ জন সাক্ষ্যকে হাজির করিয়েছেন এ পর্যন্ত। এর পাল্টা জয়ললিতার তরফে পেশ করা হয়েছে ৯৯ জন সাক্ষীকে। মামলায় অভিযুক্ত কিছু বেসরকারি সংস্থা বারবার দিন পিছনোর আর্জি জানিয়েও শ্লথ করেছেন মামলার গতি। পরে এ ধরনের পাঁচটি সংস্থার বিরুদ্ধে জরিমানা ধার্য করে আদালত। ২০০৩ সালে এক ডিএমকে নেতার আর্জিতে নিরপেক্ষ বিচারের স্বার্থে মামলাটি চেন্নাই থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় প্রতিবেশী রাজ্যের বেঙ্গালুরুতে।

জয়ার সাজা যে পথে

১৪ জুন ১৯৯৬

জয়ললিতার বিরুদ্ধে সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর মামলা

২১ জুন ১৯৯৬

জয়ললিতার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর নির্দেশ

১৮ জুন ১৯৯৬

হিসাব-বহির্ভূত সম্পত্তি থাকার অভিযোগে জয়ললিতার বিরুদ্ধে
এফআইআর দায়েরের নির্দেশ তদানীন্তন ডিএমকে সরকারের

৪ জুন ১৯৯৭

৬৬ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকার হিসাব-বহির্ভূত সম্পত্তি থাকার
অভিযোগে জয়ললিতার বিরুদ্ধে চার্জশিট গঠন

২১ অক্টোবর ১৯৯৭

জয়ললিতা ছাড়া ভি কে শশীকলা, ভি এন সুধাকরণ
এবং জে লাভারাসির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন

মার্চ ২০০২

তৃতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হলেন জয়ললিতা

নভেম্বর ২০০২-ফেব্রুয়ারি ২০০৩

বয়ান বদলের জন্য ৭৬ জন সাক্ষীকে আদালতের তলব

২৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৩

নিরপেক্ষ বিচারের স্বার্থে চেন্নাই থেকে মামলা সরানোর আর্জি
ডিএমকে নেতা আনবাঝাগানের। মামলা দায়ের সুপ্রিম কোর্টে

১৮ নভেম্বর ২০০৩

চেন্নাই থেকে বেঙ্গালুরুর বিশেষ আদালতে মামলা সরালো সুপ্রিম কোর্ট

জানুয়ারি ২০১০

বহু বার পিছনোর পর সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে ফের শুরু মামলা

ডিসেম্বর ২০১০-ফেব্রুয়ারি ২০১১

সাক্ষীদের ফের আদালতে ডাকা হল

১৬ মে ২০১১

ফের ক্ষমতায় এআইএডিএমকে।
মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে জয়ললিতা

২০ অক্টোবর-২৩ নভেম্বর ২০১১

বিশেষ আদালতে চার বার সাক্ষ্য জয়ললিতার

১৩ অগস্ট ২০১২

বিশেষ সরকারি আইনজীবী হিসাবে
জি ভবানী সিংহের নিয়োগ

২৩ অগস্ট ২০১২

ভবানী সিংহের নিয়োগে আপত্তি তুলে
হাইকোর্টে ডিএমকে নেতা আনবাঝাগান

২৬ অগস্ট ২০১২

বিশেষ সরকারি আইনজীবীর পদ থেকে জি ভবানী
সিংহকে সরিয়ে দিল কর্নাটক সরকার

সেপ্টেম্বর ২০১২

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ভবানী সিংহের নিয়োগ বহাল

২৯ অক্টোবর ২০১২

হাইকোর্টের নির্দেশে বিশেষ আদালতের বিচারপতি
নিযুক্ত হলেন জন মাইকেল ডি’কুনহা

২৮ অগস্ট ২০১৪

শুনানি শেষ। ২০ সেপ্টেম্বর রায় দেওয়ার
কথা ঘোষণা করল শীর্ষ আদালত

১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪

নিরাপত্তার স্বার্থে রায় ঘোষণার স্থান
পরিবর্তন করার অনুরোধ জয়ললিতার

১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪

জয়ললিতার আর্জি মেনে বেঙ্গালুরু সেন্ট্রাল জেলের
কাছে সরানো হল রায় ঘোষণার জায়গা।
নথি সরানোর জন্য ৭দিন পিছনো হল রায় ঘোষণা।

২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪

জয়ললিতা-সহ চার অভিযুক্তের চার বছর জেল,
১০০ কোটির জরিমানা জয়ার

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন