উন্নয়নের প্রশ্নে মোদীর সঙ্গেই চলতে চান কেজরীবাল

রাজনীতির ময়দান থেকে বিরোধীদের যতই রাজধানীর বাইরে ছুড়ে ফেলুন না কেন, উন্নয়নের প্রশ্নে তিনি যে তাদের নিয়েই চলবেন, শপথগ্রহণের মঞ্চ থেকে সেই বার্তাই দিলেন অরবিন্দ কেজরীবাল। শনিবার দিল্লির রামলীলা ময়দানের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি জানিয়ে দিলেন, কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদীর সরকার থেকে শুরু করে রাজধানীর বিরোধী দলগুলির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সরকার চালাবেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৫:০৫
Share:

অরবিন্দ কেজরীবালকে শপথবাক্য পাঠ করাচ্ছেন নাজীব জঙ্গ। ছবি: পিটিআই।

রাজনীতির ময়দান থেকে বিরোধীদের যতই রাজধানীর বাইরে ছুড়ে ফেলুন না কেন, উন্নয়নের প্রশ্নে তিনি যে তাদের নিয়েই চলবেন, শপথগ্রহণের মঞ্চ থেকে সেই বার্তাই দিলেন অরবিন্দ কেজরীবাল। শনিবার দিল্লির রামলীলা ময়দানের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি জানিয়ে দিলেন, কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদীর সরকার থেকে শুরু করে রাজধানীর বিরোধী দলগুলির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সরকার চালাবেন। এমনকী, শাহি দিল্লির যে তিনটি আসনে আপ-এর প্রার্থীরা হেরেছেন ওই তিন বিরোধী-বিধায়ককেও এ দিন ‘আমাদের’ বলে বর্ণনা করেছেন তিনি।

Advertisement

যে মোদীর বিরুদ্ধে প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে গত লোকসভা নির্বাচনে বারাণসী কেন্দ্রে ভোটের ময়দানে নেমেছিলেন কেজরীবাল, সেই মোদীকেই যে দিল্লির উন্নয়নে পাশে পাওয়া প্রয়োজন সে কথা বিলক্ষণ বুঝেছেন তিনি। ভিড়ে ঠাসা রামলীলা ময়দানকে তিনি জানান, গত ১৫ বছর ধরে বিজেপি-র ইস্তাহারে দিল্লিকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আপ-ও তাই চায়। সেই স্বপ্ন পূরণে তিনি মোদীর সঙ্গে কথাও বলেছেন বলে এ দিন জানিয়েছেন কেজরীবাল। তাঁর কথায়: “প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বলেছি, কেন্দ্রে আপনি আছেন। দিল্লিতে আমরা। দু’জনে মিলে কাজ করলে... আমি তো প্রস্তুত। আমার বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রীও।” এর পরই তাঁর সংযোজন, “প্রধানমন্ত্রী নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন। আমি তাঁকে বলেছি, দিল্লির দায়িত্ব আমাদের উপর ছাড়ুন। আপনি বাকি দেশের কথা ভাবুন।”

উন্নয়নের প্রশ্নে তিনি যে সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনে বিজেপি-র মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী কিরণ বেদীকে নিয়েও চলতে চান তা বোঝাতে গিয়ে তাঁকে নিজের বড় দিদি হিসেবে পরিচয় দেন অরবিন্দ। তাঁর কথায়: “কিরণ বেদীকে আমি যথেষ্ট সম্মান করি। নির্বাচনী লড়াইতে হার-জিত থাকবে। উনি আমার বড় দিদির মতো। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে এবং তাঁর পরামর্শ নিয়ে চলব।” এমনকী, যে-অজয় মাকেনের নেতৃত্বে কংগ্রেস দিল্লিতে একটি আসনও পায়নি তাঁকেও পাশে রাখার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

Advertisement

যদিও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার ভরসায় বসে ছিলেন না কেজরীবাল। গত ১০ ফেব্রুয়ারি দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের ফল বেরোনোর পর পরই তত্‌পর হন আপ প্রধান। ওই দিন সন্ধ্যায় দিল্লির উপ-রাজ্যপাল নাজীব জঙ্গের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। সে দিনই ঠিক হয়, ১৪ ফেব্রুয়ারি শপথগ্রহণ। ১১ তারিখই তিনি দেখা করেন কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়নমন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুর সঙ্গে। ওই দিন দুপুরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের পাশাপাশি তিনি সৌজন্য সাক্ষাত্‌ করেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ারে সঙ্গেও। পর দিন সকালেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করেন কেজরীবাল। এ দিন রামলীলায় সে কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

দিল্লিকে কার্যত তিনি যে স্বপ্নরাজ্য বানাতে চান, এ দিন সে বার্তাই দিল্লিবাসীকে দিয়েছেন আপ প্রধান। উন্নয়ন এবং স্বচ্ছ প্রশাসনের পাশাপাশি দুর্নীতিমুক্ত দিল্লি গড়ে তোলার ডাক দিয়েছেন তিনি। কেউ ঘুষ চাইলে সে কথা সরাসরি তাঁকে জানানোর কথাও বলেছেন। ব্যবসায়ীদের কাছে তাঁর অনুরোধ, “আপনারা নিশ্চিন্তে ব্যবসা করুন। কোথাও কোনও টাকা দিতে হবে না।” তবে তাঁদের কাছে নিয়ম মেনে সরকারি কর দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। সেই করের টাকা শিক্ষা-স্বাস্থ্য-পরিষেবা খাতে খরচ হবে বলে জানিয়েছেন দিল্লির নবনির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী। এ ছাড়া পুলিশ-প্রশাসনকে তিনি এ দিন স্পষ্ট ভাষায় ওই মঞ্চ থেকে নির্দেশ দিয়েছেন, “যদি কোনও ব্যক্তি নিজেকে আপ-কর্মী বলে পরিচয় দিয়ে অন্যায্য কিছু দাবি করেন, তাঁকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইন মোতাবেক যা শাস্তি হয় তার দ্বিগুণ সাজা দিন।”

আগামী পাঁচ বছরে দিল্লির গড় সামলানোই যে তাঁর মূল লক্ষ্য এ দিন সে কথা জানিয়েছেন কেজরীবাল। গত লোকসভা নির্বাচনে দেশের বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রার্থী দিয়েছিল আপ। সেই ‘ভুল’ যে আর তারা করছে না এ দিন সে বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেন আপ প্রধান। কেজরীবালের কথায়: “গত বারের দিল্লি নির্বাচনে আমরা ২৮টি আসন পেয়েছিলাম। তাতে আমাদের মধ্যে অহঙ্কার তৈরি হয়। গোটা দেশে ‘আপ’ লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু ঈশ্বর সেই অহঙ্কার মেনে নেননি। আমাদের উচিত শিক্ষা দিয়েছেন।’’ এর পরই তিনি জানান, দিল্লির মানুষ তাঁদের পাঁচ বছরের দায়িত্ব দিয়েছেন। সেই দায়িত্ব পালনে তাঁরা বদ্ধপরিকর। তাই আপাতত আর কোনও নির্বাচনে আপ অংশ নেবে না বলে জানিয়ে দেন কেজরীবাল।

এ দিন বেলা সওয়া ১২টা নাগাদ রামলীলা ময়দানে কেজরীবালকে শপথবাক্য পাঠ করান দিল্লির উপ-রাজ্যপাল। তাঁর সঙ্গে মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন মণীশ সিসৌদিয়া, আসিম আহমেদ খান, সন্দীপ কুমার, সত্যেন্দ্রকুমার জৈন, গোপাল রাই এবং জীতেন্দ্র সিংহ তোমর। আগামী সোমবার নবনির্বাচিত কেজরীবাল মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক বলে আপ সূত্রে জানানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন