মোহনবাগান-১ (বলবন্ত) : ইস্টবেঙ্গল-০
বছর সাতেকের ফুটফুটে ছেলেটা যে প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে হসপিটালিটি বক্সের রেলিংয়ের সামনে দাঁড়িয়ে দু’পা হাত ছুঁড়ে দুরন্ত লাফ দিলেন শূন্যে, তাতে বড়সড় একটা দুর্ঘটনা হতেই পারত! হয়নি নিরাপত্তা রক্ষীদের তত্পরতায়।
বলবন্ত সিংহের গোলের ঠিক পরে বছর সাতেকের ওই ছেলেটাকে বাগানের স্বেচ্ছাসেবকরা নিরাপত্তা দিলেও, ম্যাচ শেষে সবুজ-মেরুন গ্যালারির বাঁধ-ভাঙা ভিড় সামলাতে পারলেন না।
আর পারবেনই বা কী করে! চার বছরের লজ্জা-অপমান-কান্না-হাহাকার মুছে যুবভারতীর রং যে ফের সবুজ-মেরুন। গ্যালারিতে নৌকার দাপট। চিংড়ির দখলদারি! তাই হয়তো উচ্ছ্বাসের মাত্রাও চার গুন বেশি।
মোহনবাগান জিতলেও, শনিবার ম্যাচের শুরু থেকেই আধিপত্য ছিল ইস্টবেঙ্গলের। অ্যাটাকিং ফুটবল দিয়ে যে ভাবে বিপক্ষকে চাপে ফেলে দিয়েছিল মেহতাব-খাবরারা, তাতে যে কোনও সময় গোল হতে পারত। কিন্তু বাগান গোলকিপার দেবজিত্ মজুমদারকে টকপাতে পারলেন না র্যান্টি-ডুডুরা। অন্তত সাতটা নিশ্চিত গোল বাঁচালেন। তাই বলবন্ত ডার্বিতে গোল করলেও ম্যাচের সেরা হলেন সেই দেবজিত্-ই।
তবে এ দিনের ডার্বি অমর হয়ে থাকবে এক বাঙালি কোচের উত্থানের জন্য। তিনি সুব্রত ভট্টাচার্য নন। সুভাষ ভৌমিক, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য কিংবা অলোক মুখোপাধ্যায়ের মতো তারকা ফুটবলার-কোচও নন। তিনি সাদা-মাতা বাঙালি কোচ সঞ্জয় সেন। শুধু মাত্র উপস্থিত বুদ্ধি আর নিখুঁত স্ট্র্যাটেজি কষেই লাল-হলুদের বিদেশি কোচ এলকো সাতৌরিকে পিছনে ফেলে দিলেন তিনি। বাগান কোচ জানতেন তাঁর ডিফেন্স নড়বড়ে। এবং বিপক্ষের অ্যাটাকিং লাইন খুব ভাল। কিন্তু নিজের দুর্বলতাকেই শক্তি বানিয়ে জীবনের প্রথম ডার্বি জিতে নিলেন সঞ্জয়। শুরু থেকেই তাঁর ফুটবলারদের তিনি বলে রেখেছিলেন, ‘গোল না হোক, গোল করতেও দেবে না’। বেলো-কিংশুকরা কিন্তু কোচের কথা অমান্য করেননি।
ইস্টবেঙ্গল উল্টো দিকে অতি-আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে গিয়ে ডুবল। তার উপর এলকোর মধ্যে পছন্দের ফুটবলারদের খেলানোর যে প্রবণতা আছে, সেটাও ‘মিস ফায়ার’ করল লাল-হলুদের বিপক্ষে। কেন গোলের পরে ডিকাকে বসিয়ে লোবোকে নামানো হল? রফিক নন কেন? এই সব প্রশ্ন বানের সামনে নিশ্চয়ই এ বার বসতে হবে লাল-হলুদ কোচকে। তবে যা ক্ষতি হওয়ার সেটা তো আর মেরামত হবে না!