জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন মুফতি মহম্মদ সঈদ

দীর্ঘ দু’মাস টানাপড়েনের পর অবশেষে রবিবার জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি)-র সুপ্রিমো মুফতি মহম্মদ সঈদ। এ দিন জম্মু বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনারেল জোরাবর অডিটোরিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন তিনি। উপমুখ্যমন্ত্রীর শপথ নেন বিজেপি নেতা নির্মল সিংহ। মুফতির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ, লালকৃষ্ণ আডবাণী-সহ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৫ ১১:৫৪
Share:

মুফতি মহম্মদ সঈদ ও নরেন্দ্র মোদী। দিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

দীর্ঘ দু’মাস টানাপড়েনের পর অবশেষে রবিবার জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি)-র সুপ্রিমো মুফতি মহম্মদ সঈদ। এ দিন জম্মু বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনারেল জোরাবর অডিটোরিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন তিনি। উপমুখ্যমন্ত্রীর শপথ নেন বিজেপি নেতা নির্মল সিংহ। মুফতির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ, লালকৃষ্ণ আডবাণী-সহ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।

Advertisement

গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর নির্বাচনী ফল ঘোষণার পর দেখা যায় পিডিপি ২৮টি পেয়ে শীর্যস্থানে এবং বিজেপি ২৫টি আসন পেয়ে রাজ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসাবে উঠে আসে। উপত্যকায় এর আগে পর্যন্ত পদ্মের তেমন কোনও অস্তিত্বই ছিল না। কিন্তু ২০১৪-র নির্বাচনে মোদী ম্যাজিক-এ ভর করে উপত্যকায় অভূতপূর্ব ফল করে বিজেপি। রাজ্যে পিডিপি বৃহত্তম দল হিসাবে উঠে এলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে আরও ১৮টি আসনের দরকার ছিল। অন্য দিকে, ন্যাশনাল কনফারেন্স ও কংগ্রেস পায় যথাক্রমে ১৫টি ও ১২টি আসন। শুরু হয় দর কষাকষির পালা। প্রথম দিকে ধারণা করা হয়েছিল ত্রিশঙ্কু সরকার হতে চলেছে রাজ্যে। সরকার গড়তে পিডিপি কার হাত ধরবে তা নিয়েও শুরু হয় জল্পনা। বিজেপি ও পিডিপির অনড় অবস্থানের সুযোগ নিয়ে কংগ্রেস ও ন্যাশনাল কনফারেন্স আসরে নামে। সরকার গড়তে পিডিপিকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করেন কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ। অন্য দিকে, আরও একটি জল্পনা তৈরি হয় বিজেপি-ন্যাশনাল কনফারেন্স-কে নিয়ে— তবে কি সরকার গড়তে এনসি-র সমর্থন নেবে বিজেপি? বিজেপির একাংশ এনসি-র সমর্থন নিয়ে সরকার গড়ার পক্ষে থাকলেও শীর্ষ নেতৃত্ব সরকার গঠনে সমস্ত সম্ভাবনার রাস্তাই খোলা রাখার কথা ঘোষণা করেন। বিজেপি এটাও ঘোষণা করে, তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পিডিপি বা এনসি যে-ই সরকার গড়ুক, মুখ্যমন্ত্রীর পদ দিতে হবে তাদের। আবার দলের অন্দরে এই প্রশ্নও ওঠে, এ বারের নির্বাচনে এনসি-র বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন উপত্যকার মানুষ, তাই তাদের সঙ্গে হাত মেলানোর আগে দু’বার ভাবা উচিত্। তা ছাড়া এনসি এবং ছোট দল ও নির্দলদের নিয়ে সরকার গঠন করলে সরকার টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রেও বড় প্রশ্ন দেখা দেবে! অন্য দিকে, পিডিপিকে কংগ্রেস সমর্থনের প্রস্তাব দিলেও সাড়া পায়নি তারা। আবার পিডিপি-র আসন সংখ্যা বেশি হওয়ায় তিন-তিন বছর করে ঘুরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী করার ফর্মুলায় তারাই সুযোগটা নিতে চাইবে। জোট গড়ার কাঁটা তো ছিলই, মুখ্যমন্ত্রীর পদ নিয়েও জটিলতা আরও বাড়ে। এরই মধ্যে সরকার গঠনের নির্ধারিত দিন চলে আসে। কিন্তু তত দিনেও সরকার গঠনের জট না ছাড়ায় রাজ্যপাল শাসন জারি হয় জম্মু-কাশ্মীরে। অবশেষে দীর্ঘ আলাপ আলোচনার পর বরফ গলে বিজেপি-পিডিপি সম্পর্কের। স্থির হয় সরকার গঠনে পিডিপিকে সমর্থন দেবে বিজেপি। এটাও স্থির হয়, ছ’বছরের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হবে মুফতি মহম্মদ সঈদ এবং উপমুখ্যমন্ত্রী হবেন বিজেপি নেতা নির্মল সিংহ। এ তো গেল সমস্যার এক দিক! মুখ্যমন্ত্রী পদের জট খুললেও দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতাদর্শগত ভাবে মতভেদ তৈরি হয় দু’দলের মধ্যে। ওই দু’টি বিষয়ের একটি হল, ৩৭০ ধারা এবং অপরটি হল সামরিক বাহিনীর হাতে বিশেষ ক্ষমতা আইন বা আফস্পা। ৩৭০ ধারার ক্ষেত্রে বিজেপি পরিবর্তন চাইলেও মুফতি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এ বিষয়ে কোনও রদবদল করা যাবে না। পিডিপি এটাও দাবি করে, ৩৭০ ধারার কোনও পরিবর্তন করা যাবে না— এটা লিখিত ভাবে জানাক বিজেপি। তবে বিজেপি এতে সায় দেয়নি। তবে পিডিপির অবস্থান মেনে অভিন্ন কর্মসূচিতে বিজেপি সঙ্ঘের মূল কর্মসূচির সঙ্গে অনেকটাই আপোস করতে বাধ্য হয়েছে। তেমনই আফস্পা-র ক্ষেত্রেও পিডিপি-র দাবি অনেকটাই মানতে হয়েছে তাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন