পুলিশকর্মীদের আত্মহত্যায় শীর্ষস্থানে মুম্বই

সংখ্যাটা চোখ কপালে তুলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। ১০ বছরে ১৬৮। অর্থাত্ বছরে গড়ে প্রায় ১৭। আর এই পরিসংখ্যানই বাণিজ্য নগরী মুম্বইয়ের মুকুটে আরও একটা পালক জুড়েছে। ন্যাশনাল ক্রাইম রিপোর্ট ব্যুরোর সাম্প্রতিক এক তথ্য বলছে, গত ১০ বছরে ১৬৮ জন পুলিশকর্মী আত্মহত্যা করছেন মুম্বইয়ে। আর এই তথ্য প্রকাশ্যে আসার পরই নড়েচড়ে বসেছে মুম্বই পুলিশ। তবে, সংখ্যায় বেশি না হলেও হরিয়ানা (৭৩), কেরল (৭১) এবং অন্ধ্রপ্রদেশে (৬৮) পুলিশকর্মীদের আত্মহত্যার ঘটনা ক্রমবর্ধমান। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ৫৭ হলেও বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে নারাজ পুলিশকর্তারা।

Advertisement

মধুরিমা দত্ত

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৫ ১৮:১৯
Share:

সংখ্যাটা চোখ কপালে তুলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। ১০ বছরে ১৬৮। অর্থাত্ বছরে গড়ে প্রায় ১৭। আর এই পরিসংখ্যানই বাণিজ্য নগরী মুম্বইয়ের মুকুটে আরও একটা পালক জুড়েছে। ন্যাশনাল ক্রাইম রিপোর্ট ব্যুরোর সাম্প্রতিক এক তথ্য বলছে, গত ১০ বছরে ১৬৮ জন পুলিশকর্মী আত্মহত্যা করছেন মুম্বইয়ে। আর এই তথ্য প্রকাশ্যে আসার পরই নড়েচড়ে বসেছে মুম্বই পুলিশ। তবে, সংখ্যায় বেশি না হলেও হরিয়ানা (৭৩), কেরল (৭১) এবং অন্ধ্রপ্রদেশে (৬৮) পুলিশকর্মীদের আত্মহত্যার ঘটনা ক্রমবর্ধমান। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ৫৭ হলেও বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে নারাজ পুলিশকর্তারা।

Advertisement

পরিসংখ্যান বলে, দুষ্কৃতীদের হাতে যত না খুন হন তার প্রায় দ্বিগুণ সংখ্যক পুলিশকর্মী আত্মহত্যা করেন। চিকিত্সকদের মতে, এর সবচেয়ে বড় কারণ মানসিক অবসাদ। পুলিশকর্মীদের একাংশ সে কথা মেনেও নিচ্ছেন। প্রতি নিয়ত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপ, পারিবারিক সমস্যা, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের ভেতর দিয়ে যেতে যেতে একটা সময় মনোবল হারিয়ে ফেলছেন পুলিশকর্মীরা। এক পুলিশকর্মীর কথায়: “এই চাকরিতে সারা ক্ষণই একটা চাপের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। অনিয়মিত খাওয়াদাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনে বিনোদন বা শরীরচর্চার জন্য আলাদা কোনও সময় নেই। আর সে কারণেই হৃদ্‌রোগে মৃত্যুর পাশাপাশি অবসাদে আত্মহত্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।” যদিও কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “কলকাতা পুলিশের ক্ষেত্রে ঘটনাটা একেবারেই অন্য রকম। কলকাতা পুলিশ অনেক বেশিই মানবিক, উদারপন্থী।” তাঁর সংযোজন, ‘‘পুলিশের চাকরি বাকি দশটা কাজের থেকে আলাদা। কাজের চাপে অবসাদ আসতেই পারে। কিন্তু, সেই কারণে আত্মহত্যা! এই তালিকায় কলকাতাকে ঠিক রাখা যায় না।’’

সম্প্রতি মুম্বই পুলিশ বিশেষ একটি কর্মশালার আয়োজন করে। সেখানে প্রায় আড়াইশো পুলিশকর্মীর কাছ থেকে বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে লিখিত ভাবে তাঁদের ব্যক্তিগত জীবন সম্বন্ধে জানতে চাওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্মীর মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়াটাই এর লক্ষ ছিল। আয়োজকদের পক্ষে এক পুলিশকর্মী বলেন, “ব্যক্তিগত জীবনের নানান খুঁটিনাটি, সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক এবং জীবন সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নে তাঁদের খোলাখুলি বক্তব্যের মাধ্যমে আমরা জানতে চেয়েছিলাম, তাঁরা মানসিক অবসাদে ভুগছেন কি না। গোটা বিষয়টিতে গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়েছে।’’

Advertisement

পল্লববাবু জানাচ্ছেন, গবেষণার প্রয়োজনে অনেক সময় কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা পুলিশকর্মীদের অবসাদ প্রসঙ্গে বিভিন্ন সমীক্ষাপত্রে তাঁদের মতামত জানতে চান। তাঁরা সব রকম সাহায্য করেনও। তিনি বলেন, ‘‘এখনও মানসিক অবসাদ রুখতে কোনও কর্মশালা বা থেরাপির প্রয়োজন কলকাতা পুলিশের পড়েনি।’’ অন্য দিকে যুগ্ম কমিশনার (সদর) রাজীব মিশ্রের কথায়: ‘‘মুম্বই বা অন্যান্য শহরের সঙ্গে কলকাতার সংস্কৃতির একটা মূলগত পার্থক্য আছে। যত বেশি সমাজ বস্তুতান্ত্রিক হবে আত্মহত্যার প্রবণতাও পাল্লা দিয়ে বাড়বে। পশ্চিমবঙ্গে এখনও গ্রামীণ রয়ে গিয়েছে। আর সে কারণেই এখানে আমাদের কাজটাকে ভয়ানক চাপের বলে মনে হয় না।” তিনি আরও জানান, অবসাদ কাটাতে দেশের নানা জায়গায় কর্মীদের কাউন্সেলিং চলে। প্রয়োজন পড়লে কলকাতাতেও তেমনটা করা যেতে পারে। তবে এখনও তেমন পরিস্থিতি আসেনি বলেই তাঁর মত।

বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে উঠে আসা তথ্য অনুযায়ী, পুলিশের আত্মহত্যার পিছনে রয়েছ একাধিক কারণ। সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্মীর পারিবারিক ইতিহাসে নির্যাতন বা হিংসার ঘটনার পাশাপাশি বৈবাহিক জীবনে অশান্তিও আত্মহত্যার পিছনে বড় কারণ হিসেবে কাজ করে। আবার অস্ত্রের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগও পুলিশকর্মীদের আত্মহত্যায় ইন্ধন যোগায় বলে মনে করেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের একাংশ। পুলিশকর্মীদের আত্মহত্যার ঘটনাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সারা বিশ্বেই বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন করা হচ্ছে। পুলিশের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি রুখতে কাউন্সেলিং-এর আয়োজনও করা হয়। আইনের রক্ষকদের মানসিক চাপ কাটাতে এমন পদক্ষেপে আশাবাদী পুলিশকর্মীদের বড় অংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন