নবান্নে বৈঠক, সন্ত্রাস রোধে কেন্দ্রের পাশেই রাজ্য

বিরোধিতার সুর নয়। খাগড়াগড় কাণ্ডে কেন্দ্রের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়েই কাজ করবে পশ্চিমবঙ্গ— সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের পর এ কথা জানালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বিশেষ সচিব (অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা) প্রকাশ মিশ্র। এ দিন তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার একসঙ্গে লড়াই করবে। তদন্ত চলাকালীন যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাতেও রাজ্য সরকার পূর্ণ সহযোগিতা করবে। মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে এই তদন্তে সহযোগিতার কথা বলেছেন তাতে আমরা খুশি।”

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ ও সৌমেন দত্ত

খাগড়াগড়, বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৪ ১০:৫৩
Share:

খাগড়াগড়ের পথে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল।

বিরোধিতার সুর নয়। খাগড়াগড় কাণ্ডে কেন্দ্রের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়েই কাজ করবে পশ্চিমবঙ্গ— সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের পর এ কথা জানালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বিশেষ সচিব (অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা) প্রকাশ মিশ্র। এ দিন তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার একসঙ্গে লড়াই করবে। তদন্ত চলাকালীন যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাতেও রাজ্য সরকার পূর্ণ সহযোগিতা করবে। মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে এই তদন্তে সহযোগিতার কথা বলেছেন তাতে আমরা খুশি।”

Advertisement

খাগড়াগড় তদন্তের গতিপ্রকৃতি খতিয়ে দেখতে এ দিন রাজ্যে আসেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (এনএসজি)-এর ডিজি জয়ন্ত নারায়ণ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বিশেষ সচিব (অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা) প্রকাশ মিশ্র এবং কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র ডিজি শরদ কুমার-সহ ওই সংস্থার অন্য আধিকারিকেরা। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ বর্ধমানের সাই কমপ্লেক্সে পৌঁছয় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের চপার। সেখান থেকে সিআরপি জওয়ানদের নিয়ে সাতটি গাড়ির কনভয় পৌঁছয় খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণস্থলে। গাড়ি থেকে নেমে বাড়িটিতে ঢুকে যান ডোভাল, শরদ কুমার, জয়ন্তনারায়ণ চৌধুরীরা। ৩৫ মিনিট ওই বাড়িতে ছিলেন তাঁরা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিস্ফোরণস্থলে থাকাকালীন অজিত ডোভাল জেলা পুলিশের কর্তাদের কাছে গোটা ঘটনা বিশদে জানতে চান। পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বিস্ফোরণ কাণ্ডের বিষয়টি তাঁকে সবিস্তারে জানান। সব শোনার পর তাঁরা সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ ফের সার্কিট হাউসে যান। মিনিট পনেরো সেখানে থাকার পর কলকাতার উদ্দেশে রওনা হন ডোভাল। দুপুরে নবান্নে বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার এই সফরকে ঘিরে খাগড়াগড়কে কার্যত দুর্গে পরিণত করা হয়। ঘটনাস্থলে মোতায়েন ছিলেন রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি এনএসজি কম্যান্ডোরাও। বর্ধমান শহরের বুকে এমন বিস্ফোরণ এবং তার সূত্র ধরে জঙ্গি নাশকতার বিষয়টি সামনে আসার পর থেকে কড়া পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্র। কেননা, এই বিস্ফোরণের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, দেশ এবং দেশের বাইরে সেই জাল ছড়িয়ে পড়ার নানা তথ্য কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের হাতে আসায় বিষয়টি আরও গুরুত্ব পেয়েছে।


বর্ধমানের সাই কমপ্লেক্সের মাঠে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের কনভয়।

Advertisement

বর্ধমান শহরের উপকণ্ঠে খাগড়াগড়ে গত ২ অক্টোবরের ওই বিস্ফোরণের পর রাজ্য পুলিশ এবং গোয়েন্দাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। প্রথম দিকে বিষয়টিকে স্রেফ ‘বিস্ফোরণ’ বলে চালানোর চেষ্টা করা হয় রাজ্য পুলিশের তরফে। কেন্দ্র স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে এই বিস্ফোরণের তদন্তের দায়িত্ব নিতে চাইলে কেন্দ্র-রাজ্যের ‘বিরোধ’ চরমে ওঠে। অবশেষে গত ৯ অক্টোবর জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) তদন্ত শুরু করে। তদন্তে নেমে তাদের চক্ষু তো চড়ক গাছ! কারণ, যে বিস্ফোরণকে রাজ্য প্রশাসন ‘সামান্য’ বলে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, তদন্তে নেমে তার ভয়াবহতা টের পায় এনআইএ। বিস্ফোরণস্থল থেকে উদ্ধার হয় প্রচুর ইম্প্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস(আইইডি), আধুনিক অস্ত্র এবং বোমা তৈরির মালমশলা। বর্ধমানের পাশাপাশি তদন্তে উঠে আসে বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ জেলার নামও। জঙ্গি নেটওয়ার্ক এই সব জেলায় যে নীরবে কাজ করে গিয়েছে, এনআইএ-র হাতে আসে সেই প্রমাণও।

ওই বিস্ফোরণে নিহত হয় দু’জন— শাকিল আহমেদ এবং শেখ সুভান। গুরুতর জখম হয় আব্দুল হাকিম নামের এক জন। নিহত শাকিলের স্ত্রী রাজিয়া বিবি এবং হাকিমের স্ত্রী আলেমা বিবিকে গ্রেফতার করা হয়। এই কাণ্ডে জড়িত থাকার সন্দেহে পরে গ্রেফতার করা হয় হাসেম মোল্লা নামের এক যুবককে। খাগড়াগড় বিস্ফোরণ-কাণ্ডে এখনও পর্যন্ত আব্দুল হাকিম-সহ মোট চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ছবি: উদিত সিংহ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন