জয়ের উল্লাস। ছবি: এপি।
আক্ষরিক অর্থেই চোখের জলে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিল দক্ষিণ আফ্রিকা। আর খেতাব দখলের লড়াইয়ে প্রথম বার ফাইনালে নিউজিল্যান্ড। ভারত বা অস্ট্রেলিয়া— মেলবোর্নে রবিবার তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী যে-ই হোক না কেন, কিউয়িদের নাছোড় মনোভাবে তাদের কাজটা কিন্তু সহজ হবে না। ডাকওয়র্থ-লিউইস পদ্ধতির জটিল অঙ্কে প্রেটিয়াদের থেকে বেশি রান তুলে মঙ্গলবার সেমিফাইনালে জয় ছিনিয়ে নিল নিউজিল্যান্ড।
গ্রান্ট এলিয়টের ছয় আকাশে ওড়ামাত্রই গর্জে উঠলেন দর্শকরা। প্রথম বার ফাইনালিস্ট হওয়ার আবেগ সামলে দৃশ্যতই বেশ অবিচল ছিলেন জয়ী দলের ম্যান অব দ্য ম্যাচ এলিয়ট। কিন্তু এ দিন ফাইনালের স্বপ্নভঙ্গের পর মাঠেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন মর্নি মর্কেল— ম্যাচে প্রেটিয়াদের সফলতম বোলার (৩-৫৯)। ৪৯তম ওভারে মাপা লেংথে বল রেখে যিনি মেলবোর্নের টিকিট প্রায় এনে দিয়েছিলেন ডি’ভিলিয়ার্সদের।
এ দিন টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন প্রোটিয়া অধিনায়ক ডি’ভিলিয়ার্স। শুরুর দিকের কয়েকটি শট দেখেই বোঝা যাচ্ছিল ফাইনালে ওঠার প্রত্যাশায় বেশ চাপে রয়েছেন প্রোটিয়া ওপেনারদ্বয়। আর এর মধ্যেই স্বভাবসিদ্ধ আগুনে বোলিংয়ে ওপেনারদের উইকেট তুলে নেন ট্রেন্ট বোল্ট। মাত্র ৭.৫ ওভারের মধ্যেই ফর্মে থাকা হাশিম আমলা এবং কুইন্টন ডি’কক প্যাভিলিয়নে ফিরলেও মারকুটে ব্যাটিং থামাননি দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানেরা। ৩১ রানে দু’উইকেট হারানোর পর তৃতীয় উইকেটে ফাফ দু’প্লেসির সঙ্গে ৮৩ রানের পার্টনারশিপ গড়েন রাইলি রুশো। ২৬.১ ওভারে ব্যক্তিগত ৩৯ রানে রুশোর উইকেট পড়লেও অন্য প্রান্তে ধরে খেলছিলেন দু’প্লেসি। ১০৭ বলে ৮২ রানের ধৈর্যশীল ইনিংস খেলেন তিনি। ৩৮ ওভারে বৃষ্টিতে ম্যাচ বন্ধ থাকার সময় প্রোটিয়াদের দলগত রান ছিল ২১৬-৩। বৃষ্টির পর ডাকওয়র্থ-লিউইস পদ্ধতিতে ম্যাচ দাঁড়ায় ৪৩ ওভার করে। বৃষ্টি-বিরতির পর ফের খেলা শুরু হলে কোরি অ্যান্ডারসনের বলে আউট হয়ে সেঞ্চুরি ফস্কান দু’প্লেসি। পাঁচ নম্বরে নেমে ৪৫ বলে ৬৫ রানের ইনিংস উপহার দেন ডি’ভিলিয়ার্স। অধিনায়কের সঙ্গে রীতিমতো পাল্লা দিয়ে ১৮ বলে ৪৯ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন ডেভিড মিলার। অ্যান্ডারসনের শিকার হওয়ার আগে ৪২.২ ওভারে দলগত রান ছিল ২৭২। শেষ পর্যন্ত ২৮১ রানে শেষ করলেও ডাকওয়র্থ-লিউইস পদ্ধতিতে ৪৩ ওভারে কিউয়িদের উইনিং টার্গেট হয় ২৯৮ রানের। কিউয়িদের সফলতম বোলার হন অ্যান্ডারসন (৩-৭২)।
রান তাড়া করতে নেমে দুর্দান্ত শুরু করেন গাপ্টিল-ম্যাকালাম জুটি। ৬.১ ওভারে ম্যাকালাম (২৬ বলে ৫৯ রান) আউট হওয়ার সময় স্কোরবোর্ডে ৭১ রান ছিল কিউয়িদের। মাঝের ওভারগুলিতে রান উঠলেও একের পর উইকেট পড়তে থাকে তাদের। এ দিন এলিয়ট-ম্যাকালাম ছাড়া ভাল খেললেন অ্যান্ডারসনও। বল হাতে সাফল্যের পর ৫৭ বলে ৫৮ রান করেন তিনি। কিন্তু এলিয়টের ৭৩ বলে অপরাজিত ৮৪ রানের ইনিংস না থাকলে ম্যাচ বের করা কঠিন হতো কিউয়িদের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
দক্ষিণ আফ্রিকা ২৮১-৫(৪৩ ওভারে)
নিউজিল্যান্ড ২৯৯-৬ (৪২.৫ ওভারে)
৪ উইকেটে জয়ী নিউজিল্যান্ড (ডাকওয়র্থ-লিউইস পদ্ধতি)