কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মৃতের পরিবারের সদস্যরা। সোমবার উদিত সিংহের তোলা ছবি।
নিজের বাড়ির কাছেই আততায়ীর গুলিতে খুন হলেন রায়নার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের আব্দুল আলিম ওরফে বাবলু। ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ বর্ধমানের রায়নার আলমপুরে। শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্ব। যদিও পাল্টা অভিযোগে সিপিএমের ঘাড়েই দোষ চাপিয়েছে তৃণমূল। এখনও পর্যন্ত আট জনকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, রায়না-২ নম্বর ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বছর পঁয়তাল্লিশের আব্দুল আলিমের বাড়ি মাধবডিহি থানার আলমপুর গ্রামে। গত রাতে তিনি তাঁর ভাগ্নে আব্দুল হালিমের সঙ্গে মোটরবাইকে চড়ে বাড়ি ফিরছিলেন। মৃতের ভাগ্নে পুলিশকে জানিয়েছেন, মোটরবাইক চালিয়ে আসার সময় আলমপুর মোড়ের কাছে দেখেন, কয়েক জন জটলা পাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাইকের গতি কমাতেই জটলার মধ্যে থেকে এগিয়ে আসে কয়েক জন। এর পর বাইকের পিছনে বসা আব্দুল আলিমকে খুব কাছ থেকে গুলি করে এক আততায়ী। ভাগ্নের দাবি, মামাকে গুলি করার পর তাঁর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে বলে আততায়ীরা। এমনকী, তাঁর বাইকটিও কেড়ে নেয়ে তারা।
ঘটনার পরই আব্দুল আলিমকে মাধবডিহি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে জেলারই একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশ সূত্রে খবর, আব্দুল আলিমের বুকে এবং কপালে গুলি লেগেছে।
মৃতের পরিবারের অভিযোগ, এই খুনের ঘটনায় হাত রয়েছে তাঁদেরই প্রতিবেশী তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা শেখ কলিমুদ্দিন ওরফে বাপ্পার। মৃতের স্ত্রী রুনা লায়লার অভিযোগ, তাঁর স্বামীকে সরিয়ে পঞ্চায়েত সভাপতি হওয়ার জন্য খুন করেছে বাপ্পা। তাঁর আরও দাবি, বহু দিন থেকেই তাঁর স্বামীকে খুনের চেষ্টা চালাচ্ছিল সে। পুলিশ জানিয়েছে, স্থানীয় তৃণমূল নেতা বাপ্পার সঙ্গে এর আগে মৃতের ঘনিষ্ঠতা থাকলেও ক্রমশ তাঁদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। মৃতের শ্যালক জানিয়েছেন, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফলেই এই ঘটনা ঘটেছে। যদিও এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূলের দেবু টুডু বলেন, “পুরভোটে রায়না ১ এবং ২ নম্বর পঞ্চায়েত জয়ের পর থেকেই সক্রিয় হয়ে ওঠে সিপিএম। এলাকায় আমাদের সংগঠন বাড়ছিল। সেই কারণেই সিপিএম বহিরাগত দুষ্কৃতীদের দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।” বহিরাগতরা এলাকায় আস্তানা গাড়ছে দাবি করে তৃণমূল নেতৃত্বের আরও দাবি, পেশাদার খুনিরাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। যদিও এই অভিযোগ উড়িয়ে স্থানীয় সিপিএম নেতা ও প্রাক্তন সভাধিপতি উদয় সরকার বলেন, “রায়নার আপামর মানুষ জানেন, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে।”
জেলার পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল জানিয়েছেন, মৃতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে মূল অভিযুক্ত বাপ্পা-সহ আট জনকে আটক করা হয়েছে।