ডেল্টা জুটমিলের সামনে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’-এর নোটিস দেখছেন কর্মীরা। ছবি: সুব্রত জানা।
খোলার চার মাসের মাথায় ফের বন্ধ হয়ে গেল হাওড়ার সাঁকরাইলের ডেল্টা জুটমিল। এর ফলে পুজোর মুখে কর্মহীন হয়ে পড়লেন প্রায় সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক। মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকরা কাজে গিয়ে কারখানার গেটে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’-এর নোটিস ঝুলতে দেখেন। পুজোর আগে কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। কারখানার গেটের বাইরে তাঁরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন।
রাজ্যে নতুন শিল্প বিনিয়োগ টানতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত শুক্রবার একগুচ্ছ কমিটি গঠন করেছেন। এই কমিটিগুলির কাজ হবে রাজ্যের ভাবমূর্তি তুলে ধরার পাশাপাশি শিল্প ক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন নীতি নির্ধারণের সময় পরামর্শ দেওয়া। এই ধরনের একের পর এক কমিটি গঠনের কাজ যখন চলছে, তখনই রাজ্যে নানা কারণে একের পর এক কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার ওই কমিটি গঠনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই গত শনিবার বন্ধ হয়ে যায় টিটাগড়ে ওয়াগন তৈরির একটি কারখানা। টিটাগড় ওয়াগনস-এর পর এ বার সেই তালিকায় ঢুকে পড়ল ডেল্টা জুটমিলও।
কিন্তু কেন?
আগামী ১২ সেপ্টেম্বর এই কারখানায় ‘ওয়ার্কার্স কমিটি’ এবং ‘প্রভিডেন্ট ফান্ড ট্রাস্টি বোর্ড’-এর নির্বাচন হওয়ার কথা। আইএনটিইউসি (ইনটাক)-র অভিযোগ, এই কারখানায় আইএনটিটিইউসি-র অবস্থা খুব একটা ভাল না হওয়ায় তারা সেই নির্বাচন বানচাল করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে মালিকপক্ষ এবং ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে গোপন আঁতাত করেছে। একই অভিযোগ জানিয়েছে অন্য শ্রমিক সংগঠন সিটু-ও।
১৯৯৫ সালে শেষ বার ভোট হয় কারখানায়। তার পর এ বছর ভোট হওয়ার কথা ছিল। নিজেদের ‘পিঠ বাঁচাতে’ তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন এই পন্থা নিয়েছে বলে অভিযোগ কারখানার অন্য শ্রমিক সংগঠনগুলির। তবে, এ ব্যাপারে মালিক পক্ষের সাফাই: উত্পাদন কম হওয়ার কারণে আপাতত কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ২৭ জানুয়ারি ডেল্টা জুটমিল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ফের কারখানা খোলে। কিন্তু খোলার ঠিক চার মাসের মাথায় এ দিন হঠাত্ করে কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার এমন সিদ্ধান্তে শ্রমিকরা কার্যত হতাশ।
এর আগে ২০১১ সালেও এক বার কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
কী হয়েছিল সেই বার?
সাঁকরাইলের এই কারখানায় মোট তিনটি ইউনিট। সংস্থায় আর্থিক সঙ্কট চলায় মালিকপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ২০০৬ সাল থেকে পরবর্তী তিন বছর অর্থাত্ ২০০৯ পর্যন্ত কারখানার দু’টি ইউনিটের শ্রমিকদের দৈনিক বেতন থেকে ২৫ ও ১৫ টাকা করে কেটে নেওয়া হবে। এতে শ্রমিক সংগঠনগুলি রাজিও হয়ে যায়। কিন্তু টানা তিন বছর সেই টাকা দেওয়ার পর ২০০৯-এ শ্রমিকদের জমা টাকা ফেরত্ দেওয়ার কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষ তা না দেওয়ায় শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে দেন। ফলে উত্পাদন ব্যাহত হয়। সেই ‘সুযোগ’কে কাজে লাগিয়ে ২০১১ সালে কারখানা বন্ধ করে দেন কর্তৃপক্ষ। সমস্যা মেটাতে তত্কালীন শ্রমমন্ত্রী পুর্ণেন্দু বসু মালিক ও শ্রমিকপক্ষকে নিয়ে বৈঠকও করেন। কিন্তু তাতে সমস্যার সুরাহা হয়নি।