নবান্নে মন্ত্রী রচপালকে জুতো পরিয়ে দিলেন নিরাপত্তাকর্মী

তিনি রচপাল সিংহ। রাজ্যের পরিকল্পনা উন্নয়নমন্ত্রী। সোমবার দুপুরে নবান্নে তাঁকে দেখা গেল। পরনে টাইট ডেনিম জিন্‌স। ইন করা নীল রঙের ছাপা হাফ শার্ট। বাঁ হাতে ঘড়ি। ডান হাতে বালা। মাথায় সাদা-কালো পাগড়ি। রামকিঙ্কর বেইজের জন্মদিনের সরকারি অনুষ্ঠান থেকে সবে বেরিয়েছেন তিনি। বাঁ হাতের কব্জির একটা অংশ জিন্‌সের পকেটে ঢুকিয়ে রাখা। সাদা মোজা পায়ে ধীর গতিতে তিনি দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন। সেখানে তখন তাঁর অপেক্ষায় এক নিরাপত্তাকর্মী। মন্ত্রী দরজার কাছে পৌঁছতেই সেই নিরাপত্তাকর্মী মেঝেতে ঝুঁকে বসে মন্ত্রীর পায়ের কাছে এগিয়ে নিয়ে গেলেন লাল-কালো-সাদা মেশানো স্নিকার্স। রচপালের পায়ে যত্ন করে পরিয়ে দিলেন জুতোটি। ফিতেও দিলেন বেঁধে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৫ ১৫:৪৯
Share:

রচপালকে জুতে পরিয়ে দিচ্ছেন এক নিরাপত্তা রক্ষী। নবান্নে সুদীপ আচার্যের তোলা ছবি।

তিনি রচপাল সিংহ। রাজ্যের পরিকল্পনা উন্নয়নমন্ত্রী। সোমবার দুপুরে নবান্নে তাঁকে দেখা গেল। পরনে টাইট ডেনিম জিন্‌স। ইন করা নীল রঙের ছাপা হাফ শার্ট। বাঁ হাতে ঘড়ি। ডান হাতে বালা। মাথায় সাদা-কালো পাগড়ি। রামকিঙ্কর বেইজের জন্মদিনের সরকারি অনুষ্ঠান থেকে সবে বেরিয়েছেন তিনি। বাঁ হাতের কব্জির একটা অংশ জিন্‌সের পকেটে ঢুকিয়ে রাখা। সাদা মোজা পায়ে ধীর গতিতে তিনি দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন। সেখানে তখন তাঁর অপেক্ষায় এক নিরাপত্তাকর্মী। মন্ত্রী দরজার কাছে পৌঁছতেই সেই নিরাপত্তাকর্মী মেঝেতে ঝুঁকে বসে মন্ত্রীর পায়ের কাছে এগিয়ে নিয়ে গেলেন লাল-কালো-সাদা মেশানো স্নিকার্স। রচপালের পায়ে যত্ন করে পরিয়ে দিলেন জুতোটি। ফিতেও দিলেন বেঁধে। মন্ত্রীও নিঃসঙ্কোচে পরে নিলেন স্নিকার্স। তাঁর মুখে বা শরীরী ভাষায় কোথাও কোনও অস্বাচ্ছন্দ্য নজরে এল না। এ দিন দুপুরের এই ঘটনায় বিতর্কের ঝড় উঠেছে। তবে, এ ব্যাপারে রচপালের কোনও প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। তিনি ফোনও ধরেননি।

Advertisement

মন্ত্রীর জুতোর ফিতে বেঁধে দেওয়ার ছবি এর আগেও প্রকাশ্যে এসেছে। ২০১২-তে জনসমক্ষে এক আদিবাসী শিশুকে দিয়ে জুতোর ফিতে বাঁধানোর অভিযোগ ওঠে মধ্যপ্রদেশের তত্কালীন সমবায়মন্ত্রী গৌরীশঙ্কর বিসেনের বিরুদ্ধে। সরকারি অনুষ্ঠান চলাকালীন একটি শিশুকে দিয়ে দু’বার জুতোর ফিতে বাঁধিয়েছিলেন তিনি। পরে ভুল স্বীকার করে গৌরীশঙ্কর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, ভবিষ্যতে আর ফিতে দেওয়া জুতোই পরবেন না। বাইপাস হওয়ার পর চিকিৎসকেরা তাঁকে নিচু হতে বারণ করেছিলেন। তাই তিনি ওই ছেলেটিকে দিয়ে ফিতে বাঁধিয়েছিলেন বলে মন্ত্রী ওই সময় দাবি করেন।

তবে শুধু মন্ত্রী নন, অধস্তন কর্মীদের দিয়ে ব্যক্তিগত কাজ করিয়ে নেওয়ার নজির এর আগেও অনেক পুলিশকর্তার ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে। সেই ছবি প্রকাশ্যেও এসেছে বেশ কয়েক বার। তারকেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ক রচপাল সিংহ এক জন প্রাক্তন পুলিশকর্তাও বটে। ১৯৭৪-এর আইপিএস ব্যাচের ওই পুলিশকর্তা চাকরি জীবনে বহু বিতর্কে নিজেকে জড়িয়েছেন। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। নির্বাচনে জিতে মন্ত্রীও হন। পর্যটন থেকে পরে পরিকল্পনা উন্নয়ন মন্ত্রকের দায়িত্ব পান।

Advertisement

রচপালের এ দিনের ঘটনা অনেককেই জম্মু-কাঠুয়া রেঞ্জের তত্কালীন ডিআইজি শাকিল আহমেদ বেগের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ইনস্টাগ্রামে বেশ কিছু বিতর্কিত ছবি পোস্ট করেছিলেন তাঁর ছেলে। ছবিগুলির তলায় স্পষ্ট করে তিনি ক্যাপশনও লিখেছিলেন। ওই পোস্ট করা একটি ছবিতে দেখা গিয়েছিল, সোফায় বসে রয়েছেন বেগ। তাঁর জুতোর ফিতে বেঁধে দিচ্ছেন এক ব্যক্তি। ছবির ক্যাপশনে লেখা ছিল, ‘আসল রাজা আমার বাবা! তিনি শেষ নিজের জুতো নিজে পরেছেন প্রায় পনেরো বছর আগে।’ ডিআইজি বেগের জুতোর ফিতে যিনি বেঁধে দিচ্ছিলেন, তিনি সাদা পোশাকে থাকলেও আসলে পুলিশকর্মী বলেই অভিযোগ উঠেছিল। ছবিগুলি নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ার পরে অবশ্য নিজের ভুল বুঝতে পেরে ইনস্টাগ্রাম থেকে তড়িঘড়ি ছবিগুলো তুলেও নেন তিনি। তবে, জুতোর ফিতে অন্য কাউকে দিয়ে বাঁধানোর প্রসঙ্গে বেগের বক্তব্য ছিল, “দোকান থেকে নতুন জুতো কিনলেও আপনার জুতো তো দোকানের লোকই বেঁধে দেয়!”

গৌরীশঙ্কর ছিলেন শুধুই মন্ত্রী। আর বেগ ছিলেন শুধুই পুলিশকর্তা।

তফাতের মধ্যে, রচপালের ক্ষেত্রে এই দুই পদের মিশেল ঘটেছে। তিনি মন্ত্রীও বটে, আবার প্রাক্তন পুলিশকর্তাও!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন