হিমালয়ান শিয়াল।
বৈশাখের শেষ, তবে দার্জিলিঙের পদ্মজা নাইডু চিড়িয়াখানায় বসন্ত এসে গিয়েছে। মুচকি হেসে এমনই জানাচ্ছেন চিড়িয়াখানার এক কর্তা।
নভেম্বরের প্রান্ত থেকে শুরু হওয়া শীতের প্রকোপ হ্রাস পেতে পেতে এপ্রিলের শেষ। তারপর মে। তিনি বলেন, ‘‘কার্যত মে মাস থেকেই একটু উষ্ণতার ছোঁয়া লাগে পাহাড়ে। অনেকটা বসন্তের আগমন ঘটে যেন।’’ ফলে এই সময়টা জীব-জন্তুরা থাকে ফুরফুরে মেজাজে।
মার্চে শীত ফুরালেও দার্জিলিঙের পাহাড়ে তীক্ষ্ণ হাওয়ার রেশ থেকেই যায় এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত। আবহাওয়া ফুরফুরে হয়ে ওঠে মে মাস থেকে।
শীতভর বাঘের খাঁচায় হিটার, ময়ূর-মোনাল লেপার্ডের খাঁচাতেও এক-দু’দিন অন্তর কেজ-ওয়ার্মার বসানো হয়। প্রবল ঠাণ্ডায় গত শীতে একটি তুষার চিতাকে রীতিমতো স্যালাইন দিতে হয়েছিল বলেও জানাচ্ছেন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
চেহারাটা বদলে যেতে শুরু করে এই মে মাস থেকে। পাহাড়ের চেনা কুয়াশা মুছে এই সময়ে দেখা মেলে কিঞ্চিৎ রোদ্দুরের। রোদের উত্তাপের সন্ধানে খাঁচার গভীর থেকে চিড়িয়াখানার বাসিন্দারা বেরিয়ে আসে খোলা জায়গায়।
হিমালয়ান ভল্লুক।
এ বারও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। গত কয়েক দিন ধরেই দার্জিলিঙের তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করছে ১৬ থেকে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। সঙ্গে রোদ্দুরও রয়েছে। তবে তা গা সেঁকে নেওয়ার মতো, আরামের।
বন দফতরের এক কর্তা বলছেন, ‘‘এই সময়টা ওরা বেশ ফুরফুরে থাকে। দর্শকেরাও তাদের দেখতে পান।’’ রেড পান্ডার লম্ফ-ঝম্প, তোয়াজ করে ক্যামেরার সামনে বাঘের ‘পোজ’ দেওয়া কিংবা হরিণের হুটোপুটি—দেখা মেলে এই সময়েই।
বিশিষ্ট তুষার চিতা বিশেষজ্ঞ কে এস রাওয়াত বলছেন, ‘‘দার্জিলিঙের ঠান্ডা বড্ড স্যাঁতস্যাঁতে। তুষার চিতার তাতে অসুবিধাই হয়। বরং মে মাসের উত্তাপ তারা উপভোগ করে।’’ রেড পান্ডাদেরও ক্ষেত্রেও কথাটা প্রযোজ্য।
বিরল রেড পান্ডা।
কলকাতা বা দক্ষিণবঙ্গের চিড়িয়াখানাগুলি যখন হোস পাইপ দিয়ে জলের ফোয়ারা ছুটিয়ে বাঘ-ভাল্লুকের মেজাজ ঠান্ডা করার চেষ্টা করছে তখন পাহাড়ে চেহারা একেবারেই ভিন্ন। বরং আরও একটু উষ্ণতার খোঁজে পদ্মাজা নাইডুর খান তেরো তুষার চিতা ডজন খানেক রেড পান্ডা এখন চনমনে হয়ে উঠেছে।
টিবেটিয়ান উলফ, ব্লু-শিপ, গ্রে পিকক, মোনাল কিংবা ব্ল্যাক প্যান্থার, এমনকী সর্বদা গম্ভীর চমরি গাইও যেন সেই অসময়ের বসন্তে গা ভাসিয়ে দিয়েছে।
হিমালয়ান থর।
ছবি: রবিন রাই।