স্থলসীমান্ত চুক্তির সাফল্যের পর কি আর খুব দূরে থাকবে তিস্তা চুক্তির রূপায়ণ?
সাউথ ব্লকে এখন এটাই গুঞ্জন। তিস্তা এবং স্থলসীমান্ত চুক্তি দু’টি নিয়ে দু’দেশের সম্পর্কে গত কয়েক বছর ধরে চলেছে বিস্তর টানাপড়েন এবং তিক্ততা। কিন্তু সেই বন্ধুর পথ পেরিয়ে অসম এবং পশ্চিমবঙ্গের বিরোধিতাকে জয় করে ঢাকার সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তিটি পাশ করানো সম্ভব হল। এর পরের ধাপ তিস্তা।
সম্প্রতি বাংলাদেশে গিয়ে ঢাকা সম্পর্কে যথেষ্ট নরম মনোভাব দেখিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরই আপত্তিতে আটকে রয়েছে তিস্তা চুক্তি। মমতা বলেছেন নীতিগত ভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিতে তাঁর কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু রাজ্যের স্বার্থকে তিনি অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। বিভিন্ন মরসুমে তিস্তা দিয়ে কতটা জল প্রবাহিত হয়, তা খতিয়ে দেখে একটি রিপোর্ট প্রস্তুত করেছেন পশ্চিমবঙ্গের নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র। সেটি কিছু দিনের মধ্যেই তিনি জমা দেবেন মুখ্যমন্ত্রীকে। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, সেটি চুক্তির পক্ষে যথেষ্ট ইতিবাচক। মমতা তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে এ কথাই বলে থাকেন যে এমনিতেই তিস্তার জল বাংলাদেশ গিয়ে অধিকমাত্রায় প্রবাহিত হয়, এই সত্য জানা রয়েছে। কিন্তু সেটিকে একটি সরকারি দলিলের মাধ্যমে স্বীকার করে নিলে তাঁর উত্তরবঙ্গের ভোটব্যাঙ্কে কোনও প্রভাব পড়বে কি না সেটিই তাঁর শঙ্কার জায়গা। সে ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে সম্ভব না হলেও আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনের পর তিস্তা চুক্তিতে সম্মতি দেওয়ার কথা ভাবছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। অন্য দিকে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্যও সেটা সুবিধাজনক হবে। তাঁর অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্য এই চুক্তি দু’টি ভারতের কাছ থেকে আদায় করা হাসিনার পক্ষে অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু সেটা একেবারে হোক সেটা চান না তিনি। বরঞ্চ ধাপে ধাপে হলে তিনি তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের বাকি মেয়াদটা এই সাফল্যকে তুলে ধরবেন তাঁর দেশবাসীর কাছে।
স্থলসীমান্ত চুক্তির ক্ষেত্রে মনমোহন সরকার যে ভুলটি করেছিল সেটা করেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি গোড়া থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক যোগাযোগ রেখে চলেছেন। রাজ্যের দাবিদাওয়ার বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে সেগুলি মেনেও নিয়েছে কেন্দ্র। রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, স্থলসীমান্ত চুক্তির সাফল্যের ব্যাকরণকে কাজে লাগিয়ে এ বার তিস্তার জন্যও প্রতি পদে মমতার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই এগোবে মোদী সরকার।