পরিবর্তনের সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৩-য় রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ে খুন হয়েছিলেন সাগর ঘোষ। সেই শুরু। তার পর একের পর এক ঘটনায় রক্তাক্ত হয়েছে বীরভূমের এই থানা এলাকার বিভিন্ন গ্রাম। কখনও চৌমণ্ডলপুর তো কখনও মাখড়া। কখনও ইমাদপুর তো কখনও বা সিরশিট্টা। দখল এবং পুনর্দখলের রাজনৈতিক সংঘর্ষে কার্যত হিংসার মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছে পাড়ুই।
সাগর ঘোষ যখন খুন হয়েছিলেন, সেই সময়ে বিরোধীশূন্য পাড়ুই পুরোপুরি শাসক দলের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে তৃণমূলের ভিতরেই তৈরি হয় পাল্টা স্বর। যার জেরে তৃণমূল সমর্থক হয়েও নির্দল প্রার্থী হিসেবে পঞ্চায়েত ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন সাগরবাবুর ছেলে হৃদয় ঘোষ। এর মধ্যেই পুলিশের উপর বোমা মারা এবং নির্দল প্রার্থীদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার নিদান দেন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। তার পর পরই খুন হন সাগরবাবু। হাইকোর্ট-সুপ্রিম কোর্ট ঘুরে সেই মামলার তদন্ত এখন সিবিআইয়ের হাতে। মূল অভিযুক্ত অনুব্রত মণ্ডলও গ্রেফতার হননি।
মৃত বিজেপি-কর্মী শেখ জসিমউদ্দিন
মাখড়ার তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে হতাহতেরা
কিন্তু গত লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। পাড়ুইয়ের গ্রামগুলিতে বিজেপি-র প্রভাব বাড়তে শুরু করে। শাসক দলের বহু কর্মী-সমর্থক তাঁদের দলে যোগ দিয়েছে বলে দাবি করেন বিজেপি নেতৃত্ব। এর ফলে চাপে পড়ে যান শাসক দলের নেতারা। খোদ অনুব্রতের অস্বস্তি বাড়িয়ে মাখড়া-চৌমণ্ডলপুর-ইমাদপুরে বিজেপি-র কর্মী-সমর্থকদের দাপট দেখা দেয়। পরিস্থিতি সামলাতে মাঠে নামে শাসক দলও। অভিযোগ ওঠে, দু’পক্ষই বাইরে থেকে দুষ্কৃতী এনে গ্রাম দখল এবং পুনর্দখলের চেষ্টা করছে। রাজনৈতিক এই হানাহানি চলতে থাকে পুলিশের চোখের সামনে। এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি থাকলেও, তার মধ্যে মাখড়ায় খুন হন তিন জন। তার আগে চৌমণ্ডলপুরে বোমা উদ্ধার করতে গিয়ে বোমার ঘায়ে জখম হন পাড়ুইয়ের ওসি। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছয়, কয়েক দিনের ব্যবধানে পাড়ুই থানায় একাধিক ওসি বদল করতে হয়। কিন্তু কাজের কাজ যে প্রায় কিছুই হয়নি তার প্রমাণ রবিবারের সিরশিট্টা। ওই দিনও খুন হন এক বিজেপি কর্মী।
গত এক মাসে পাড়ুইয়ে যায়নি এমন কোনও রাজনৈতিক দল নেই। নজরদারিতে রয়েছে পুলিশ-প্রশাসনও। কিন্তু তার মধ্যেও পাড়ুই আছে পাড়ুইতেই।
২৪ অক্টোবর ২০১৪: বোমা উদ্ধার করতে গিয়ে চৌমণ্ডলপুরে দুষ্কৃতীদের হাতে জখম পাড়ুই থানার ওসি প্রসেনজিৎ দত্ত। জখম গুপ্ত হালুয়াই নামে এক কনস্টেবল।
২৭ অক্টোবর ২০১৪: গ্রাম দখল-পুনর্দখলের লড়াইয়ে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ মাখড়ায়। ১৪৪ ধারা জারি থাকা সত্ত্বেও পুলিশের চোখের সামনে এই সংঘর্ষে নিহত তিন জন— শেখ তৌসিফ, শেখ সোলেমান এবং শেখ মোজাম্মেল। শেষের দু’জন তৃণমূল কর্মী। তৌসিফের পরিবার বিজেপি সমর্থক।
১২ নভেম্বর ২০১৪: ইমাদপুরে বিজেপি কর্মীদের উপর গুলি-বোমা নিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। গুলিবিদ্ধ হন বিজেপি কর্মী আনারুল শেখ। বোমায় আহত আরও পাঁচ বিজেপি কর্মী-সমর্থক। তৃণমূলেরও এক কর্মীর পেটে তির লাগে। বোমায় আহত হন আরও দুই কর্মী।
১৫ নভেম্বর ২০১৪: সিরশিট্টা গ্রামে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ। ব্যাপক বোমাবাজি। পুলিশের সামনেই প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে বোমাবাজি চলে। শূন্যে পাঁচ রাউন্ড গুলি চালায় পুলিশ।
১৬ নভেম্বর ২০১৪: পাড়ুইয়ের সিরশিট্টা গ্রামে বহিরাগত দুষ্কৃতীদের নিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ বিজেপি-র বিরুদ্ধে। প্রতিরোধ তৃণমূলের। দু’পক্ষের সংঘর্ষে মৃত বিজেপি কর্মী শেখ জসিমউদ্দিন (১৭)। আহত এক তৃণমূল সমর্থক।