দুর্ঘটনায় মৃত্যু, মন্ত্রীকে ঘিরে বিক্ষোভ ওয়াটগঞ্জে

কোথাও রাস্তার মাঝখানে মরণ ফাঁদে পড়ে মৃত্যুর ঘটনা, তো কোথাও আবার অটোর বেপরোয়া গতির সামনে পড়ে মৃত্যু। সোমবার কলকাতা শহরে পৃথক দুই পথ দুর্ঘটনা এভাবেই কেড়ে নিল এক প্রৌঢ় এবং এক কিশোরের জীবন। শহরের দু’টি প্রান্তের দুর্ঘটনার পরই ঘটনাস্থলে লোক জন বিক্ষোভ দেখালে প্রশাসনে হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। সোমবারের প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে ওয়াটগঞ্জ থানা এলাকায় ডায়মন্ড হারবার রোডে সেন্ট টমাস স্কুলের সামনে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৫ ১৮:৪৫
Share:

বিক্ষোভের মুখে পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ববি হাকিম।—নিজস্ব চিত্র।

কোথাও রাস্তার মাঝখানে মরণ ফাঁদে পড়ে মৃত্যুর ঘটনা, তো কোথাও আবার অটোর বেপরোয়া গতির সামনে পড়ে মৃত্যু। সোমবার কলকাতা শহরে পৃথক দুই পথ দুর্ঘটনা এভাবেই কেড়ে নিল এক প্রৌঢ় এবং এক কিশোরের জীবন। শহরের দু’টি প্রান্তের দুর্ঘটনার পরই ঘটনাস্থলে লোক জন বিক্ষোভ দেখালে প্রশাসনে হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। সোমবারের প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে ওয়াটগঞ্জ থানা এলাকায় ডায়মন্ড হারবার রোডে সেন্ট টমাস স্কুলের সামনে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্কুলের সামনের ট্রামলাইনের রাস্তা দীর্ঘদিন ধরেই এবড়োখেবড়ো হয়ে রয়েছে। এর আগেও এখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ আসলাম, শেখ সালিমরা বলেন, ‘‘স্কুলের শিশু এবং ছাত্রদেরও দুর্ঘটনা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু প্রশাসনকে জানিয়ে লাভ হয়নি।’’

Advertisement

কী ঘটেছিল ডায়মন্ড হারবার রোডের দুর্ঘটনায়?

পুলিশ জানায়, এ দিন সকালে একবালপুরের ময়ূরভঞ্জ রোডের বাসিন্দা শিব চাঁদ ধনু (৬০) এবং তার ছেলে সাজন ধনু বাজার সেরে মোটরবাইকে ফিরছিলেন। আচমকাই সেন্ট টমাস স্কুলের সামনের ওই রাস্তায় পিছলে যায় মোটরবাইকটি। রাস্তায় ট্রাম লাইনের দু’দিকে ছিটকে পড়েন শিব চাঁদ এবং তাঁর ছেলে। সেই সময় শিয়ালদহ থেকে ওই রাস্তা ধরে পর্ণশ্রীর দিকে যাচ্ছিল একটি বেসরকারি বাস। হঠাৎ বাস চলে আসায় রাস্তা থেকে আর সরতে পারেননি শিব চাঁদ। বাসের সামনের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। তবে তাঁর ছেলেকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

এ দিকে দুর্ঘটনার পরই উত্তেজিত হয়ে স্থানীয় লোক জন ডায়মন্ড হারবার রোডে অবরোধ শুরু করেন। দাবি ওঠে ট্রাম কোম্পানির অফিসারদের ঘটনাস্থলে উপস্থিত করানোর জন্য। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পনেরো মিনিটের মধ্যে বিক্ষোভ উঠলেও বিক্ষিপ্তভাবে বিক্ষোভ চলতে থাকে। এর মধ্যেই ১২ টা ১৫ মিনিটে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ববি হাকিম। তিনি এসেই রাস্তা অবরোধ তুলতে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে নির্দেশ দিলে তাঁকে ঘিরেই লোকজন বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। মন্ত্রী ঘটনাস্থলে বারবার বলার চেষ্টা করেন, ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক, তিনি ব্যবস্থা নেবেন। এর মধ্যেই স্থানীয় এক যুবকের কথায় উত্তেজিত হয়ে মন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, ‘‘তা হলে কি করব বলুন? আমিই কি মরে যাব?’’

অবশেষে মন্ত্রীকে উত্তেজিত হয়ে উঠতে দেখে শান্ত হয়ে যায় উত্তেজিত জনতা। ঘটনাস্থল থেকেই মন্ত্রী ৯ নম্বর বরোর পুর ইঞ্জিনিয়ারকে রাস্তা সারাইয়ের নির্দেশ দেন। এরপর তিনি বলেন, ‘‘মাস দু’য়েক আগেই আমি ট্রাম কোম্পানি ও এইচআরবিসিকে রাস্তা সারাইয়ের জন্য বলেছিলাম। তা সত্ত্বেও ওরা কেন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি, সে বিষয়ে আমি খোঁজ নেব।’’ তবে ট্রাম কোম্পানির কোনও অফিসারকে ঘটনাস্থলে দেখতে পাওয়া যায়নি।

মন্ত্রীর অভিযোগ নিয়ে কি বলছেন কলকাতা ট্রাম কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর নীলাঞ্জন শান্ডিল্য? তাঁর কথায়, ‘‘আমরা এর আগেও এইচআরবিসিকে জানিয়েছিলাম। কোনও সমস্যার কারণে ওরা ওই এলাকায় কাজ শুরু করতে পারেনি।’’ তিনি জানান, সম্প্রতি পরিবহণ দফতর থেকে নির্দেশ এসেছে, কাজটা ট্রাম কোম্পানিকেই করতে হবে। এইচআরবিসি শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে। শীঘ্রই তারা কাজ শুরু করবেন। তবে কবে কাজ শুরু হবে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে চাননি তিনি। অন্যদিকে, এ বিষয়ে এইচআরবিসি কর্তৃপক্ষকে ফোন ও এসএমএস করা হলেও যোগাযোগ করা যায়নি।

এ দিকে এ দিনের বিকেলের ঘটনায় আবার অভিযোগের তির অটোর বেপরোয়া গতির বিরুদ্ধে। বিকেল সাড়ে ৪ টে নাগাদ জোড়াসাঁকো এলাকার বাসিন্দা বছর এগারোর কিশোর মহম্মদ খৈয়ম কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে খেলতে বের হয়। খেলতে খেলতে তারা মেছুয়া এলাকার মহাত্মা গাঁধী রোড এবং রামলোচন মল্লিক স্ট্রিটের সংযোগস্থলে পৌঁছে যায়। আর এর পর রাস্তা পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনাটি ঘটে। তার সঙ্গীরা জানায়, তারা অপর প্রাস্তে পৌঁছে হঠাৎ-ই খৈয়মের চিৎকার শুনে পিছনে তাকিয়ে দেখে রাস্তার মাঝখানে একটি অটোর পাশে খৈয়ম পড়ে রয়েছে। আশপাশের লোক জন ছুটে এসে তাকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত হলে ঘোষণা করেন। এখানেও স্থানীয় লোক জন অটো এবং চালককে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায়। পরে জোড়াসাঁকো থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অটোটি আটক করে এবং চালককে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত বালকের নাম মহম্মদ খইম। বাড়ি মদন মোহন বর্মণ স্ট্রিটে। এ দিন বিকেল বেলা অন্যদিনের মতই সে বন্ধুদের সঙ্গে খেলছিল। শিয়ালদহের দিক থেকে বড়বাজারগামী একটি অটো বেপরোয়া গতিতে এসে তাকে ধাক্কা মারে।

এই ছেলেটি দু’মাস আগে বিহারের শাসা থেকে কলকাতায় এসে মদনমোহন বর্মণ স্ট্রিটে মামার বাড়িতে এসে উঠেছিল। ছেলেটির দাদা মেছুয়ার ফলমন্ডিতে চাকরি করত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন