জোর ব্যবসার সরল পদ্ধতি আর সামাজিক সুরক্ষায়

রাতারাতি ঝোড়ো সংস্কারের গালভরা প্রতিশ্রুতি নেই। তেমনই নেই নিছক আমজনতার মনজয়ে ঢালাও বরাদ্দও। মোদী-সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট আক্ষরিক অর্থেই কেজো। আর্থিক সমীক্ষার ঘোষণার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে যেখানে বড়সড় ধামাকা (বিগ ব্যাং) নেই। রয়েছে সংস্কারের ছোট ছোট পদক্ষেপ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৭:১৯
Share:

রাতারাতি ঝোড়ো সংস্কারের গালভরা প্রতিশ্রুতি নেই। তেমনই নেই নিছক আমজনতার মনজয়ে ঢালাও বরাদ্দও। মোদী-সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট আক্ষরিক অর্থেই কেজো। আর্থিক সমীক্ষার ঘোষণার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে যেখানে বড়সড় ধামাকা (বিগ ব্যাং) নেই। রয়েছে সংস্কারের ছোট ছোট পদক্ষেপ।

Advertisement

অনেকে আশা করেছিলেন, মধ্যবিত্তদের কথা মাথায় রেখে হয়তো আয়করে ছাড় বাড়াবেন অরুণ জেটলি। ভাবা হয়েছিল, বাড়তে পারে সঞ্চয়ে আয়কর ছাড়ের পরিসরও। কিন্তু বাস্তব মেনেই আপাতত সেই পথে হাঁটেননি অর্থমন্ত্রী। তাই চাকুরেদের হাতেগরম পাওনা বলতে কর ছাড় পাওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়ামের ঊর্ধ্বসীমা বৃদ্ধি এবং আরও বেশি এলটিএ-কে ওই ছাড়ের আওতায় নিয়ে আসা।

অন্তত ২২টি পণ্যের উপর শুল্ক কমেছে। ফলে তার অনেকগুলিরই দাম কিছুটা কমার সম্ভাবনা। অন্য দিকে, প্রত্যাশিত ভাবেই আরও দামি হয়েছে ‘সুখটান’। ৬৫ মিলিমিটার পর্যন্ত দৈর্ঘের সিগারেটে উত্‌পাদন শুল্ক বেড়েছে ২৫%। অন্যগুলিতে ১৫%।

Advertisement

অর্থ কমিশনের নির্দেশ মেনে রাজ্যগুলিকে করের বাড়তি ভাগ দেওয়ার কথা বাজেটেও ফের মনে করিয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। দাবি করেছেন, কয়লা নিলাম থেকেও বিপুল অঙ্ক হাতে পাবে অনেক রাজ্য। তার বাইরেও পশ্চিমবঙ্গ এবং বিহারকে বিশেষ আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন তিনি।

অর্থনীতিকে দীর্ঘ মেয়াদে দ্রত বৃদ্ধির সড়কে নিয়ে যেতে যে পরিকাঠামোয় জোর দেওয়া জরুরি, দীর্ঘ দিন ধরেই সে কথা বারবার বলেছেন জেটলি ও তাঁর মুখ্য উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যম। বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলি শেয়ার বাজারে লগ্নির ঝুলি উপুড় করলেও, পরিকাঠামো বা কল-কারখানায় বিদেশি বিনিয়োগ এখনও সে ভাবে আসেনি। সেই চাকা ঘোরাতে বাজেটে তাই সবার আগে বন্দোবস্ত করা হয়েছে সরকারি বিনিয়োগের। জেটলি জানিয়েছেন, রেল, সড়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামোয় কেন্দ্র তো টাকা ঢালবেই, সেই সঙ্গে ব্যবস্থা করা হচ্ছে বাজার থেকে টাকা তোলারও। ফিরছে করছাড়ের সুবিধাযুক্ত পরিকাঠামো-বন্ড। শুধু তা-ই নয়, এই টাকার সংস্থান করার কাজ সহজ করতে রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রাও কিছুটা শিথিল করেছেন অর্থমন্ত্রী। জানিয়েছেন, তাকে ৩ শতাংশে নামিয়ে নিয়ে যেতে দু’বছরের বদলে তিন বছর সময় নেবেন তিনি।

ঢেলে সাজার কথা বলা হয়েছে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগও (পিপিপি)। জেটলি জানিয়েছেন, পরিকাঠামোয় টাকা ঢালতে বেসরকারি ক্ষেত্র এগিয়ে এলে, সরকার তার ঝুঁকির অনেকটাই বইতে রাজি। এই ঘোষণাকে স্বাভাবিক ভাবেই স্বাগত জানিয়েছে শিল্পমহল।

শিল্পমহল বলছে, এই বাজেট হয়তো ধোনির ধামাকাদার ব্যাটিং নয়, কিন্তু দ্রাবিড়ের উইকেট কামড়ে পড়ে থাকার নিশ্চয়তা এতে আছে। রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি নীতি তৈরির নীল নকশা। লগ্নির ঝুলি উপুড় করার আগে শিল্পমহল যা চায়।

যেমন, ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকেই পণ্য-পরিষেবা কর চালুর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। হাঁটার কথা বলা হয়েছে প্রত্যক্ষ কর বিধির দিকে। সম্পদ কর তুলে দিয়ে বরং বাড়তি ২% কর চাপানো হয়েছে ধনীদের (যাঁদের বার্ষিক আয় কোটি টাকার বেশি) উপরে। ভর্তুকি ছাঁটাইয়ের কথা বলা হয়নি, কিন্তু জোর দেওয়া হয়েছে তার অপচয় বন্ধে। কর্পোরেট করের হার ৩০% থেকে নামিয়ে আনা হয়েছে ২৫ শতাংশে। তবে বিস্তৃত করা হয়েছে তার পরিধি। পুরনো লেনদেনে কর চাপানো নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে আইনি সংঘাতের পথে হেঁটেছিল ভোডাফোন-সহ কয়েকটি সংস্থা। প্রশ্ন উঠেছিল ভারতে লগ্নির পরিবেশ নিয়ে। বাজেটে সে বিষয়েও আশ্বস্ত করেছেন জেটলি। তবে কড়া কথা শুনিয়েছেন কালো টাকা নিয়ে।

এ দিন ব্যবসা করার রাস্তা সহজ করতে চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ব্যবসা শুরুর জন্য অনুমোদন পেতে যে সময় হাপিত্যেশ করে বসে থাকতে হয়, তা কমিয়ে আনতে চান তিনি। কিছু ঘোষণা করা হয়েছে সেই লক্ষ্য মাথায় রেখেই। একই ভাবে, সহজ করার চেষ্টা হচ্ছে ব্যবসা গোটানোর পথ। যে কারণে ঢেলে সাজার কথা বলা হচ্ছে সংস্থার দেউলিয়া ঘোষণার আইন। প্রতিশ্রুতি রয়েছে কর-ব্যবস্থা আরও সহজ, সরল করার। বলা হয়েছে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সেবি এবং আগাম লেনদেনের বাজার নিয়ন্ত্রক এফএমসি-কে মিশিয়ে দেওয়ার কথাও। টুইটারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রতিক্রিয়া: “এই বাজেট বৃদ্ধির ইঞ্জিনে শক্তি ফেরাবে। যা সূচনা করবে এক নতুন ভোরের।”

কর্পোরেট দুনিয়ার দাবিদাওয়া মনে রাখতে গিয়ে অবশ্য আমজনতার কথা ভোলেননি জেটলি। বাজেটে বিস্তর কথা খরচ করা হয়েছে সামাজিক সুরক্ষা ও উন্নয়নের উপর। সকলের জন্য বাড়ি, পানীয় জল, বিদ্যুতের কথা বলা হয়েছে। ঘোষণা করা হয়েছে প্রতি গ্রামে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার। দিয়েছেন, সকলের জন্য পেনশন, দুর্ঘটনা বিমা ইত্যাদি চালু করার প্রস্তাবও।

তবে এই সবের পরেও অনেকে বলছেন, আমূল ঢালাও সংস্কারের মোক্ষম সুযোগ হাতছাড়া করলেন জেটলি। সামনে ভোট ছিল না। কিন্তু তা সত্ত্বেও বেসরকারি বিনিয়োগ টানার তেমন সাহসী পদক্ষেপ দেখা গেল কোথায়? পরিকাঠোমো বন্ড ইত্যাদির কথা বলা হল ঠিকই। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি যে বিপুল টাকার উপর স্রেফ বসে রয়েছে, অর্থমন্ত্রী তা ঠিকঠাক ব্যবহারেরও তেমন দিশা দেখাতে পারলেন না বলে মনে করছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন