ত্রাণ শিবিরে চলছে ওষুধ বিলি।
কাশ্মীরের বিভিন্ন ক্যাম্পে সেনা জওয়ান এবং তাঁদের পরিবারের লোকজনদের বন্যার জলে আটকে থাকার কথা আগেই প্রকাশ্যে এসেছে। শনিবার সেনার তরফে দাবি করা হয়, বেশ কিছু ক্যাম্প থেকে জওয়ানদের উদ্ধার করা সম্ভব হলেও, জলের হাত থেকে বাঁচানো যায়নি অস্ত্রশস্ত্র। এ কে রাইফেলের পাশাপাশি বেশ কিছু ইনসাস এবং এসএলআর রাইফেলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কয়েকটি ক্যাম্পে জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে অনেক অস্ত্র। তবে সেনাবাহিনীর দাবি, রাইফেল জাতীয় অস্ত্রগুলি তেল-মোবিল লাগিয়ে সার্ভিসিং করার পর হয়তো পুনরায় ব্যবহার করা যাবে, কিন্তু হ্যান্ড গ্রেনেড এবং বম্বগুলি চিরতরে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলায় এ দিন সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছিলেন জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে বৈঠকে হাজির হয় বিজেপি থেকে কংগ্রেস, এমনকী পিডিপি-ও। এ দিনের সেই বৈঠক থেকে দুর্গতদের সাহায্যে সব রকম ভাবে এগিয়ে আসার আবেদন জানানো হয় গোটা দেশের কাছে। ব্যক্তিগত উদ্যোগের পাশাপাশি সংস্থাগুলির কাছেও সাহায্যের আহ্বান জানিয়েছেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। সর্বদলীয় এই বৈঠক শেষে ওমর বলেন, “যদি কংগ্রেস এবং পিডিপি একসঙ্গে বৈঠক করার পর যৌথবার্তা দিতে পারে দেশবাসীকে, তা হলে এই বিপদের দিনে বাকিদের হাত মেলাতেই হবে।”
এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি, কংগ্রেসের সইফুদ্দিন সোজ, বিজেপি-র যুগল কিশোর-সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন নেতা। ব্যক্তিগত উদ্যোগ তো বটেই, নাগরিক সমাজ, অসরকারি সংগঠন, স্বনির্ভর গোষ্ঠী-সহ বিভিন্ন সংস্থার কাছে সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসার আবেদন জানান তাঁরা। দুর্গতদের গভীর সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিহতদের প্রতি শোক জ্ঞাপন করা হয় ওই বৈঠকে। বিপর্যস্ত রাজ্যে উদ্ধার ও ত্রাণকাজ চালানোর জন্য কেন্দ্রের ভূমিকার প্রশংসা করে সেনা, আধাসেনা, বায়ুসেনা, নৌবাহিনী এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর জওয়ানদের কৃতজ্ঞতা জানান তাঁরা। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল পিডিপি ১০ দফার এক কর্মসূচির কথা ঘোষণা করে। দলের নেত্রী মুফতি বলেন, “এটা রাজনীতি করার সময় নয়। এই মুহূর্তে আমাদের প্রথম কাজ উদ্ধার এবং পুনর্গঠন।” সাংসদ কোটার পাঁচ শতাংশ টাকা রাজ্যের পুনর্গঠনে ব্যবহারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে পিডিপি-র তরফে।
দুর্গতদের জন্য ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছেন সেনারা।
সেনাবাহিনীর তরফে এ দিন জানানো হয়েছে, উদ্ধারকাজ শুরু করার ১২ দিন পর মোট ১ লাখ ৪২ হাজার দুর্গতকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। সেনা সূত্রের খবর, গোটা রাজ্যে উদ্ধার ও ত্রাণের কাজে দিনরাত এক করে ফেলেছেন প্রায় ৩০ হাজার জওয়ান। এর মধ্যে প্রায় ২১ হাজার জওয়ানকে শ্রীনগর এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে। বাকিরা কাজ করছেন জম্মু অঞ্চলে। সেনাবাহিনীর তরফে জলের বোতল এবং শুকনো খাবার বিলি করা হচ্ছে দুর্গত এলাকায়। একটি হিসেবে সেনার তরফে জানানো হয়েছে, এখনও পর্যন্ত বণ্টন করা হয়েছে প্রায় ৪ লক্ষ লিটার জল। প্রায় দেড় লক্ষ শুকনো খাবারের প্যাকেট এবং ৮০০ টন রান্না করা খাবার তারা বিলি করেছে।
অন্য দিকে, রাজ্যে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে যাতে ত্রাণ শিবিরগুলিতে সর্ব ক্ষণ আলোর ব্যবস্থা থাকে, তা নিশ্চিত করতে উপত্যকায় পাঠানো হয়েছে প্রায় ৩০টি জেনারেটর। ১৯টি ত্রাণশিবিরের পাশাপাশি ৮০টি মেডিক্যাল টিম বিপর্যস্ত এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। বন্যা পরবর্তী সময়ে জলবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। টিমগুলি সে বিষয়েও মানুষকে সচেতন করছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে খবর। এরই মধ্যে এ দিন বিধ্বস্ত উপত্যকার স্বাস্থ্যশিবিরগুলি পরিদর্শন করতে কাশ্মীর গিয়ে পৌঁছেছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন। জম্মু ঘুরে রবিবার তিনি শ্রীনগর যাবেন। অন্য দিকে, পরিস্থিতি নজরে রাখতে নয়াদিল্লিতে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে।
এ দিনও বিভিন্ন রাজ্যের তরফে জম্মু-কাশ্মীরকে সাহায্যের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যার কারণে বিদ্যুৎহীন উপত্যকায় ১০ হাজার সৌরবাতি পাঠানোর কথা জানিয়েছে ছত্তীসগঢ়। পাশাপাশি, কাশ্মীরের পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে এ দিন পাঁচ কোটি টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে দুই বহুজাতিক সংস্থা স্যামসং এবং মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা।
ছবি: পিটিআই।