কালো টাকা উদ্ধারের দাবিতে সংসদে তৃণমূলের কালো ছাতা

কালো টাকা উদ্ধারের দাবিতে কালো ছাতা নিয়ে লোকসভায় অভিনব প্রতিবাদে সামিল হলেন তৃণমূল সাংসদেরা। বাদ যায়নি রাজ্যসভাও। সেখানেও মোদী সরকারের বিরোধিতায় হইহল্লা জুড়ে দেন মমতা-বাহিনী। সংসদের উভয় কক্ষেই মঙ্গলবার তৃণমূল পাশে পেয়ে যায় পুরনো ইউপিএ জোটের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে। কিন্তু এত কিছু থাকতে কালো ছাতা কেন?

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৪ ১৯:৪০
Share:

কালো টাকা উদ্ধারের দাবিতে কালো ছাতা নিয়ে লোকসভায় অভিনব প্রতিবাদে সামিল হলেন তৃণমূল সাংসদেরা। বাদ যায়নি রাজ্যসভাও। সেখানেও মোদী সরকারের বিরোধিতায় হইহল্লা জুড়ে দেন মমতা-বাহিনী। সংসদের উভয় কক্ষেই মঙ্গলবার তৃণমূল পাশে পেয়ে যায় পুরনো ইউপিএ জোটের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে।

Advertisement

কিন্তু এত কিছু থাকতে কালো ছাতা কেন?

লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কালো ছাতাকে আমরা প্রতীকী হিসেবে ব্যবহার করেছি। কালো ছাতায় আমরা যে ভাবে রোদ-বৃষ্টি আটকাই, ঠিক সে ভাবেই কালো টাকা এই সরকারকে রক্ষা করছে।” যদিও কালো টাকা নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে পাল্টা তোপ দেগেছেন রাজ্যের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তাঁর কটাক্ষ, রাজ্যে যাঁরা গরিব মানুষের টাকা বেআইনি ভাবে ব্যবহার করেছেন, তাঁরা কালো টাকা নিয়ে সংসদে সরব হচ্ছেন!

Advertisement

রাজ্যে সারদা-কাণ্ডে তাঁর দলের বেশ কিছু নেতা-নেত্রীর নাম আগেই প্রকাশ্যে এসেছে। কিন্তু গত শুক্রবার দলীয় সাংসদ সৃঞ্জয় বসু গ্রেফতার হওয়ার পরে রীতিমতো ক্ষেপে ওঠেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রকাশ্যেই মোদী সরকারের সমালোচনা করতে শুরু করেন। এমনকী, বিজেপি-র ‘প্রতিহিংসাপরায়ণ’ রাজনীতির জবাব সংসদেই দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। পাশাপাশি, কালো টাকা ফেরতের দাবিতে সংসদের সামনে ধর্নায় বসার হুমকিও দিয়েছিলেন মমতা। গত শনিবার নেতাজি ইন্ডোরের কর্মিসভার শেষে দলীয় সাংসদদের সঙ্গে বৈঠক করেন দলনেত্রী। ঠিক হয়, শীতকালীন অধিবেশনের শুরুতেই এই দু’টি বিষয়ে সরব হবে তৃণমূল।

সেইমতো দলীয় লাইন মেনে এ দিন সকালে অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে সংসদে ঢোকার প্রধান গেটে বসে পড়েন তৃণমূল সাংসদেরা। দীনেশ ত্রিবেদী, কাকলি ঘোষ দস্তিদার-সহ ওই সাংসদেরা মোদীর বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। ‘কালো টাকা ফিরিয়ে আনো’, ‘মোদীর স্বৈরতন্ত্র চলবে না’ ইত্যাদি স্লোগানে সরব হন তাঁরা। অধিবেশন শুরু হওয়া মাত্রই তাঁরা নেমে পড়েন ওয়েলে। কালো ছাতা খুলে, তা স্পিকারের দিকে মুখ করে ঘোরাতে থাকেন। এ ভাবে ছাতা দেখানো ঠিক নয় মন্তব্য করে লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন তাঁদের নিজের নিজের আসনে ফিরে যেতে অনুরোধ করলেও সে কথায় কান দেননি তৃণমূল সাংসদেরা। এরই মধ্যে তৃণমূলের সঙ্গে যোগ দেন কংগ্রেস, আরজেডি, সমাজবাদী পার্টি এবং আপ-এর সাংসদেরা। সোমবার সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু হয়। কিন্তু, প্রয়াত সাংসদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে ওই দিনের মতো মুলতুবি করে দেওয়া হয় অধিবেশন। সেই হিসেবে এ দিনই ছিল সংসদের প্রথম কাজের দিন। বিরোধীদের এমন আচরণে কার্যত বিব্রত স্পিকার সাময়িক ভাবে স্থগিত করে দেন।

বিরোধীদের অভিযোগ, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সরকার গঠনের একশো দিনের মধ্যেই বিদেশি ব্যাঙ্কে রাখা এ দেশের সমস্ত কালো টাকা ফিরিয়ে আনার কথা মোদী সরকারের। কিন্তু বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর প্রায় ৬ মাস কেটে গিয়েছে। তাদের দাবি, কালো টাকা ফেরত আনতে মোদী ব্যর্থ। আর সেই টাকা ফেরত আনার দাবিতেই এ দিন সরব হয় বিরোধীরা। দিনের শুরুতেই কংগ্রেসের তরফে প্রশ্নোত্তর পর্ব বাতিল করার অনুরোধ জানানো হয় স্পিকারের কাছে। কিন্তু ‘নিয়মবিরুদ্ধ’ বলে সেই প্রস্তাবে সাড়া দেননি স্পিকার। কিন্তু অন্য ভাবে কালো টাকা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে বলে জানান তিনি। বিরোধীরা যদিও সেই পথে যেতে রাজি হননি। সংসদীয়মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নাইডুও আলোচনার কথা বলেন। কিন্তু বিরোধীরা তাতেও সাড়া দেয়নি। তাঁর দাবি, গত ৬ মাসে সরকার বসে নেই। কালো টাকা দেশে ফেরাতে আশাপ্রদ কাজ হয়েছে। সেগুলো বিরোধীদের জানতে আলোচনায় বসতে হবে। আলোচনা না করে সভা ভণ্ডুল করে দেওয়াটা কোনও কাজের কথা নয় বলে জানান তিনি। রাজ্যসভায় তৃণমূলের মুখ্য সচেতক ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, “এই বিষয়ে সংগঠিত আলোচনা প্রয়োজন। এটা শুধু তৃণমূলের দাবি নয়। কালো টাকা এই মুহূর্তে সব দলেরই ইস্যু।” জবাবে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেন, “এই বিষয়ে সরকার আলোচনা করতে সব সময় আগ্রহী।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন