কাশ্মীরে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি মোদীর

ছায়াযুদ্ধের জন্য পাকিস্তানকে কার্যত হুঁশিয়ারি দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার কাশ্মীর উপত্যকরা লেহ-তে সেনাবাহিনীর উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “প্রতিবেশী দেশ প্রথাগত যুদ্ধের ক্ষমতা হারিয়েছে। তাই জঙ্গি হামলার মাধ্যমে সব সময় ছায়াযুদ্ধ জারি রাখে।” গত মে মাসে শপথ নেওয়ার পর ৩৮ দিনের মধ্যে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার জম্মু-কাশ্মীর গেলেন মোদী। লেহ থেকে তিনি কারগিলেও যান। গত দেড় দশকে এই প্রথম কোনও প্রধানমন্ত্রী কারগিল উপত্যকায় পা দিলেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৪ ১২:০০
Share:

লেহতে ওমর আবদুল্লার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার এএফপি-র তোলা ছবি।

ছায়াযুদ্ধের জন্য পাকিস্তানকে কার্যত হুঁশিয়ারি দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার কাশ্মীর উপত্যকরা লেহ-তে সেনাবাহিনীর উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “প্রতিবেশী দেশ প্রথাগত যুদ্ধের ক্ষমতা হারিয়েছে। তাই জঙ্গি হামলার মাধ্যমে সব সময় ছায়াযুদ্ধ জারি রাখে।” গত মে মাসে শপথ নেওয়ার পর ৩৮ দিনের মধ্যে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার জম্মু-কাশ্মীর গেলেন মোদী। লেহ থেকে তিনি কারগিলেও যান। গত দেড় দশকে এই প্রথম কোনও প্রধানমন্ত্রী কারগিল উপত্যকায় পা দিলেন।

Advertisement

তবে, প্রধানমন্ত্রীর জম্মু-কাশ্মীর সফরের ঠিক আগে সোমবার রাতে বিএসএফ কনভয়ের উপর হামলা চালায় জঙ্গিরা। পহেলগাঁও থেকে শ্রীনগর আসার পথে জঙ্গিরা অতর্কিতে ওই কনভয়ের উপর গুলি চালায়। শ্রীনগরের কাছে পামপুরের এই ঘটনায় গুরুতর আহত হন ছয় জওয়ান। গত কয়েক সপ্তাহে বেশ কিছু বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে পাক-সেনা। মোদীর সফর উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে ওই দিন উপত্যকা পরিদর্শন করেন নবনিযুক্ত সেনাপ্রধান দলবীর সিংহ সুহাগ। তার মধ্যে এই জঙ্গি হামলা প্রশাসনের কপালে ভাঁজ ফেলে। সে ভাঁজ আরও চওড়া করে নরেন্দ্র মোদীর মঙ্গলবারের জম্মু-কাশ্মীর সফর।

এ দিন সকালে প্রথমে লেহ যান প্রধানমন্ত্রী। লেহ বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যপাল এনএন ভোরা এবং মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। মোদীর সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী পীযূষ গয়াল এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। লেহতে প্রধানমন্ত্রী সেনা এবং বায়ুসেনা জওয়ানদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। ছায়াযুদ্ধ নিয়ে পাকিস্তানের উদ্দেশে কড়া বার্তা দেন তিনি। বলেন, “ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী যুদ্ধে নয়, জঙ্গি হামলাতেই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।” তিনি এ দিন যুদ্ধস্মারক তৈরির আশ্বাসও দেন জওয়ানদের।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে এ দিন সকাল থেকেই সেজে উঠেছিল লেহ। চার দিকে বিজেপি-র পতাকা এবং হোর্ডিং। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “এই উপত্যকা বিশ্বের অন্যতম সুন্দর জায়গা। কিন্তু এখানকার মানুষেরা নানা সমস্যার সম্মুখীন।” এর পরে লেহ থেকে শ্রীনগর পর্যন্ত প্রায় ৩৪৯ কিলোমিটার ‘পাওয়ার ট্রান্সমিশন লাইন’-এর শিলান্যাস করেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া নিম্মো-বাজগো জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের উদ্বোধনও করেন তিনি। দু’টি প্রকল্পের উদ্বোধন করে মোদী বলেন, “একটা সময় ছিল যখন প্রধানমন্ত্রীরা এ রাজ্যে আসতেন না। ইতিমধ্যেই আমি দু’বার এলাম। আপনাদের ভালবাসা আমাকে বার বার টেনে আনে।” তাঁর পরনে প্রথাগত লাদাখি পোশাক ও টুপি। মঞ্চে তখন রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রী। তাঁদের পাশে বসিয়ে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন, উন্নয়নে তাঁর তিনটি পরিকল্পনার কথা। তিনটি ‘প’-এর উপর নির্ভর করে গড়ে উঠবে সেই উন্নয়ন প্রকাশ (বিদ্যুৎ), পর্যভরণ (পরিবেশ) এবং পর্যটন। তিনি বলেন, “প্রকৃত উন্নয়ন সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের মানে পরিবর্তন আনে। এই সরকার অটলবিহারী বাজপেয়ীর স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে চলেছে।”

লেহ থেকে প্রধানমন্ত্রী রওনা দেন কারগিলের উদ্দেশে। বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ সেখানে পৌঁছন প্রধানমন্ত্রী। ১৯৯৯ সালের যুদ্ধের পর এই প্রথম কোনও প্রধানমন্ত্রী কারগিল এলেন। এখানে চুটাক জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মোদী। উপস্থিত জনতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে এ দিন তিনি বলেন, “এই প্রথম নয়, বিজেপি নেতা হিসেবে এর আগে কারগিলে এসেছি। তবে তখন শুধু বন্দুকের আওয়াজ পাওয়া যেত। তার বদলে এখন আপনাদের করতালির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি।” জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের উদ্বোধন করে তিনি উপত্যকায় শিল্পোন্নয়নের প্রতিশ্রুতিও দেন। পাশাপাশি, উন্নয়নের কাজে অতিরিক্ত ৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণাও করেন। প্রধানমন্ত্রী জানান, কারগিল উপত্যকার দেশপ্রীতি গোটা দেশকে উদ্বুদ্ধ করে। এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোয় তাঁর সরকার যে বদ্ধপরিকর, সে কথাও বলেন তিনি।

গত লোকসভা নির্বাচনে লাদাখ কেন্দ্রটি বিজেপি ঘরে তোলে। মাত্র ৩৬ ভোটে হলেও বিজেপি প্রার্থী থুপস্তান ছেওয়াঙ্গ এই আসনটি ছিনিয়ে নেন প্রতিপক্ষের হাত থেকে। মোদীর এ দিনের সফর যতটা না সরকারি, তার থেকে অনেক বেশি রাজনৈতিক। জয়ের জন্য লাদাখবাসীকে ধন্যবাদ জানানোর কাজটা তিনি এই সফরের মাধ্যমে সেরে ফেললেন তো বটেই, পাশাপাশি, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজও কিছুটা এগিয়ে রাখলেন। গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-র ফল এ রাজ্যে ভাল বললে কম বলা হয়। এই প্রথম এখানে তিনটি আসনে জয় পেয়েছে তারা। এ বছরের শেষের দিকে জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচন এ বার বিজেপি-র পাখির চোখ। মোট ৮৭টি আসনের মধ্যে বিজেপি-র লক্ষ্য অন্তত ৪৪। একক ভাবে সরকার গঠনের জন্য সে সংখ্যা প্রয়োজন হলেও, তার বেশি আসনই পেতে চাইছে বিজেপি। মনে করা হচ্ছে, মোদীর এ দিনের সফর এবং প্রকল্প উদ্বোধন সে দিকে তাকিয়েই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন