জিতনরামের ইস্তফা, বিহারের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন নীতীশ কুমার

কয়েক দিনের টানাপড়েনের পর ফের এক বার বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসতে চলেছেন নীতীশ কুমার। শুক্রবার আস্থা ভোটের আগে জিতনরাম মাঁঝি ইস্তফা দেওয়ার পর নীতীশের মুখ্যমন্ত্রী হওয়া ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা। এ দিন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠির কাছে সরকার গড়ার দাবি জানান নীতীশ। রাজ্যপাল সম্মতি দেওয়ায় আগামী রবিবারই চতুর্থ বারের জন্য বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিতে চলেছেন তিনি।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১২:৪৯
Share:

সাংবাদিক বৈঠকে জিতনরাম মাঁঝি। ছবি: টুইটার।

কয়েক দিনের টানাপড়েনের পর ফের এক বার বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসতে চলেছেন নীতীশ কুমার। শুক্রবার আস্থা ভোটের আগে জিতনরাম মাঁঝি ইস্তফা দেওয়ার পর নীতীশের মুখ্যমন্ত্রী হওয়া ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা। এ দিন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠির কাছে সরকার গড়ার দাবি জানান নীতীশ। রাজ্যপাল সম্মতি দেওয়ায় আগামী রবিবারই চতুর্থ বারের জন্য বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিতে চলেছেন তিনি।

Advertisement

যে সমস্ত বিধায়ক তাঁকে সমর্থন করবেন, আস্থা ভোটের ২৪ ঘণ্টা আগেই তাঁদের মন্ত্রী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন জিতনরাম মাঁঝি। তাঁর শিবিরের এক মন্ত্রী দাবি করেছিলেন ১২০ জন বিধায়কের সমর্থন রয়েছে তাঁদের দিকে। আস্থা ভোটে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছিল বিজেপি-ও। কিন্তু সেই আস্থা ভোটের সকালেই রণে ভঙ্গ দেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী জিতনরাম মাঁঝি। রাজভবনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিলেন জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর এই বিদ্রোহী এবং বহিষ্কৃত বিধায়ক। সূত্রের খবর, জিতনরামের ইস্তফা গ্রহণ করেছেন রাজ্যপাল।

আস্থা ভোটের আগে এ দিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ বিধানসভায় ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল রাজ্যপালের। নীতীশের আবেদনে সাড়া দিয়ে মাঁঝিকে আস্থা ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে বলায় সকালেই সেই অধিবেশন বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেয় বিজেপি-সহ মাঁঝি শিবিরের বিধায়কেরা। নীতীশ-মাঁঝি সম্মুখ সমরের জন্য যখন তৈরি হচ্ছে বিহার বিধানসভা, তখনই বিনা মেঘে বজ্রপাত। মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিলেন জিতনরাম। রাজভবন সূত্রে খবর, সকাল ১০টা নাগাদ রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে ইস্তফা দেন তিনি। ১৫ মিনিটের ওই বৈঠকে আর কী বিষয়ে কথা হয়েছে তা অবশ্য জানানো হয়নি। তবে এই বৈঠক যে পূর্ব নির্ধারিত ছিল না, তা-ও জানানো হয়েছে রাজভবনের তরফে।

Advertisement

কিন্তু কেন ইস্তফা দিলেন জিতনরাম? তবে কি যথেষ্ট সংখ্যক বিধায়কের সমর্থন না থাকাতেই ইস্তফা দিতে বাধ্য হলেন বহিষ্কৃত জেডি(ইউ) বিধায়ক?

বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ সাংবাদিক বৈঠকে জিতনরাম কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকার কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। দাবি করেন তাঁর পক্ষে ১৪০ জন বিধায়কের সমর্থনের কথাও। আস্থা ভোট থেকে সরে দাঁড়ানো এবং মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফার জন্য নিজের শিবিরের বিধায়কদের ‘নিরাপত্তা’র কথা বলেছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, “বিধায়কদের প্রাণের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। আমাদের এক বিধায়কের বাড়িতে গত কয়েক দিন ধরে কিছু বহিরাগত এসে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এমনকী আমিও খুনের হুমকি পেয়েছি।” আস্থা ভোট নিয়ে অধ্যক্ষের দিকেও আঙুল তুলেছেন মাঁঝি। “আমরা গোপন ব্যালটে ভোটের দাবি করেছিলাম। কিন্তু সংবিধানের কথা বলে অধ্যক্ষ আমাদের দাবি খারিজ করেন। ভোট চলাকালীন বিরোধী আসন নিয়েও আমাদের দাবি মানা হয়নি।”—অভিযোগ তাঁর। রাজ্যপালের কাছে নতুন করে ভোট করার সুপারিশ করেছেন বলেও দাবি করেছেন তিনি।

মাঁঝির এই পদক্ষেপকে অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়েননি তাঁর বিরোধীরা। তাঁর ইস্তফাকে ‘নাটক’ আখ্যা দিয়ে নীতীশ কুমার বলেন, “আমরা প্রথমেই বলেছিলাম বেশির ভাগ বিধায়কের সমর্থন রয়েছে আমাদের দিকেই। আস্থাভোটের ব্যবস্থা করে বিধায়ক কেনাবেচার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। ১৪ দিন ধরে এই নাটক না করলেই হত।” পাশাপাশি বিজেপি-কেও একহাত নিয়েছেন নীতীশ। তাঁর মতে, “বিজেপির গেমপ্ল্যান প্রকাশ্যে এল। জেডি(ইউ) ভাঙার ষড়যন্ত্র করেছিল তারা।” এমনকী মুখ্যমন্ত্রীত্ব থেকে সরে যাওয়ার জন্য বিহারের জনগণের কাছে ক্ষমাও চান তিনি। যদিও নীতীশের এই অভিযোগ খারিজ করে একে জেডি(ইউ)-এর আভ্যন্তরীণ কোন্দল বলেছে বিজেপি। বিজেপি নেতা শাহনওয়াজ হুসেন বলেন, “এটা একেবারেই জেডি(ইউ)-এর দু’টি গোষ্ঠীর ক্ষমতা দখলের লড়াই। এতে বিজেপির কোনও ভূমিকা নেই। দল শুধু এক মহাদলিতকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।” মাঁঝির ইস্তফাকে স্বাগত জানালেও আরজেডি সুপ্রিমো লালুপ্রসাদ যাদব বলেছেন, “আগেই ইস্তফা দেওয়া উচিত ছিল জিতনরামের। বিজেপির চক্করে পড়ে বোকামি করেছেন তিনি।”

মাঁঝির ইস্তফার মধ্য দিয়েই কি শেষ হল বিহার নাটকের? বিরোধী, শাসক, বিদ্রোহী— এত সহজে নাটকের পরিসমাপ্তি কিন্তু মানতে চাইছেন না কেউই। কেউ কেউ আবার বলছেন, আসল নাটক তো সবে শুরু হল।

আগেই ইস্তফা দেওয়া উচিত ছিল জিতনরামের। বিজেপির চক্করে পড়ে বোকামি করেছেন তিনি।
লালুপ্রসাদ যাদব
আরজেডি নেতা

১৪ দিন ধরে এই নাটক না করলেই হত। বিজেপির গেমপ্ল্যান প্রকাশ্যে এল।
নীতীশ কুমার
জেডি(ইউ) নেতা

জেডি(ইউ)-এর দু’টি গোষ্ঠীর ক্ষমতা দখলের লড়াই। এতে বিজেপির কোনও ভূমিকা নেই।।
শাহনওয়াজ হুসেন
বিজেপি নেতা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন