নিউ টাউনে কোলছাড়া হয়েও মায়ের কাছেই ফিরল সদ্যোজাত

ঘরভাড়া ও খাওয়া-পরার বিনিময়ে সদ্যোজাতকে অন্যের হাতে তুলে দেবেন বলে ঠিক করেছিলেন। যার হাতে তুলে দেওয়ার কথা ছিল, মঙ্গলবার প্রসবের পরে হাজির ছিলেন সেই মহিলাও। কথামতো তাঁর হাতে ছেলেকে তুলেও দেন। কিন্তু মায়ের মন স্থির থাকেনি তার পরে। দরজা আগলে জানান, বাচ্চাকে তিনি ছাড়বেন না। জড়ো হয়ে যান পড়শিরাও। শেষমেশ সদ্যোজাত ফিরে আসে মায়ের কোলেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৪ ২২:৫৬
Share:

ছবি: আর্যভট্ট খান।

ঘরভাড়া ও খাওয়া-পরার বিনিময়ে সদ্যোজাতকে অন্যের হাতে তুলে দেবেন বলে ঠিক করেছিলেন। যার হাতে তুলে দেওয়ার কথা ছিল, মঙ্গলবার প্রসবের পরে হাজির ছিলেন সেই মহিলাও। কথামতো তাঁর হাতে ছেলেকে তুলেও দেন। কিন্তু মায়ের মন স্থির থাকেনি তার পরে। দরজা আগলে জানান, বাচ্চাকে তিনি ছাড়বেন না। জড়ো হয়ে যান পড়শিরাও। শেষমেশ সদ্যোজাত ফিরে আসে মায়ের কোলেই।

Advertisement

মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে নিউ টাউনের জ্যোতিনগরে। নিউ টাউন থানার পুলিশ জানায়, যে মহিলা বাচ্চা নিতে এসেছিলেন, তাঁর নাম রূপা মণ্ডল ওরফে রেজুনা খাতুন। তাঁকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, সদ্যোজাতকে অন্য কারও হাতে বিক্রি করে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল ওই মহিলার। বিধাননগর কমিশনারেটের এডিসিপি সন্তোষ নিম্বলকর বলেন, “কোনও পাচারকারীর সঙ্গে ওই মহিলার সম্পর্ক আছে কি না, তা দেখতে ওই মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বাচ্চাটিকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

জ্যোতিনগরের অরবিন্দপল্লিতে টিনের ঘুপচি ঘরে পাঁচ বছর ও তিন বছরের দুই মেয়েকে নিয়ে থাকেন বছর পঁচিশের সেই মা, মমতা সর্দার। মমতা বলেন, “অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় আমাকে ছ’মাস আগে স্বামী ছেড়ে চলে গিয়েছে। তার পর থেকে ঠিকমতো খাওয়াও জোটে না। ব্যাগের কারখানায় কাজ করতাম। সেই কাজও করতে পারছিলাম না। তখনই আলাপ হয় ওই মহিলার সঙ্গে। প্রথমে ওর নামও জানতাম না। পরে ওই বলে বাচ্চাকে নিয়ে গিয়ে দেখভাল করবে।”

Advertisement

মমতা জানান, অনিচ্ছা সত্ত্বেও অগত্যা রাজি হয়ে যান তিনি। বলেন, “নিজের তো খাওয়া জোটেই না। সেই সঙ্গে দুই মেয়ের মুখেও খাবার তুলে দিতে পারি না। দিনরাত কান্নাকাটি করে। কোন মা এ সব সহ্য করতে পারে! ছ’মাসের ঘরভাড়াও বাকি। বাধ্য হয়ে রাজি হয়ে গিয়েছিলাম।”

মঙ্গলবার সকালে নিজের ঘরেই প্রসব করেন মমতা। ওই তরুণী জানান, প্রসবের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হাজির হয়ে যান রেজুনা। চুক্তি অনুযায়ী, বাচ্চাকে তাঁর কোলে তুলেও দিয়েছিলেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত মন মানেনি। দরজা আগলে দাঁড়িয়ে পড়েন। তবে মমতা জানান, শুধু তিনি নন, বাচ্চাকে নিয়ে যাওয়া আটকে দেন পাড়ার বাসিন্দারাও। যাদব রাজবংশী নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “এ ভাবে বাচ্চা নেওয়ার ব্যাপারে আমরা কিছুই জানতাম না। ওই মহিলাকে আটকে জিজ্ঞেস করতে গিয়ে কথায় কিছু অসঙ্গতি পাই। তখন আমরাই পুলিশকে খবর দিই।”

কিন্তু বাচ্চাকে বড় করে তোলার খরচ দেবে কে? জ্যোতিনগরের ওই পাড়ার বাসিন্দারা অধিকাংশই দরিদ্র। কেউ রাজমিস্ত্রি, কেউ বা ঠেলা চালান। তবু তাঁরাই একযোগে জানিয়েছেন, মমতা যত দিন না ফের কাজে যেতে পারছেন, তত দিন তাঁর ছেলেকে সবাই মিলেই মানুষ করবেন। আর মমতার বাড়িওয়ালা জয়ধন বলেন, “বাচ্চাটা তো আমারও নাতির মতো। মমতা যত দিন খুশি ওই ঘরে থাকুক। ঘরভাড়ার ন’শো টাকা নেব না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন