পাড়ুইয়ে নিষ্ক্রিয় করা হল বোমা, জেল হেফাজতে ধৃতেরা

পাড়ুইয়ের সাত্তোর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে উদ্ধার হওয়া তাজা বোমা নিষ্ক্রিয় করল পুলিশ। শনিবার সকাল ১০টা ২০ মিনিট নাগাদ পাড়ুইয়ের কসবা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের লাগোয়া মাঠে উদ্ধার হওয়া ওই বোমা নিষ্ক্রিয় করার কাজ শুরু করেন বম্ব ডিসপোসাল স্কোয়াডের সদস্যেরা। পুরো এলাকা খালি করে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়। ঘটনাস্থল ঘিরে রাখে বিশাল পুলিশবাহিনী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৪ ১৪:০৭
Share:

ধৃতদের সিউড়ি আদালতে তোলা হচ্ছে। শনিবার তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

পাড়ুইয়ের সাত্তোর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে উদ্ধার হওয়া তাজা বোমা নিষ্ক্রিয় করল পুলিশ। শনিবার সকাল ১০টা ২০ মিনিট নাগাদ পাড়ুইয়ের কসবা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের লাগোয়া মাঠে উদ্ধার হওয়া ওই বোমা নিষ্ক্রিয় করার কাজ শুরু করেন বম্ব ডিসপোসাল স্কোয়াডের সদস্যেরা। পুরো এলাকা খালি করে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়। ঘটনাস্থল ঘিরে রাখে বিশাল পুলিশবাহিনী। ছিল দমকল এবং অ্যাম্বুল্যান্সও। অন্য দিকে, পাড়ুই থানার ওসি প্রসেনজিত্ দত্ত-সহ পুলিশকমীর্দের উপর হামলার ঘটনায় ধৃত পাঁচ জনকে এ দিন সিউড়ির বিশেষ আদালতে তোলা হয়। বিচারক ঋষি কুশারী তাদের আগামী ৭ নভেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নিদের্শ দিয়েছে। তাত্পর্যপূর্ণ ভাবে, পুলিশ এ দিন ধৃতদের নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য আবেদন জানায়নি। এরই পাশাপাশি, প্রসেনজিৎবাবুর শারীরিক অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, ওই দিনের ঘটনায় শুক্রবারই চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। শনিবার ধরা পড়ে আরও এক জন। ধৃতদের নাম শেখ সামিম, মোজাম্মিল হক, শেখ নুর আলম, নুর হোসেন এবং হাফিজ মোল্লা। ধৃতদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইন, সরকারি কাজে বাধা দান, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, ষড়যন্ত্র-সহ বিভিন্ন জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়া, আরও ৩৮ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ নানা ধারায় মামলা দায়ের করেছে।

কেন ধৃতদের পুলিশি হেফাজতে চাওয়া হল না? সরকারি আইনজীবী বিকাশ পৈতণ্ডীর জবাব, ‘‘প্রয়োজনে পরে অবশ্যই ধৃতদের পুলিশি হেফাজত চাওয়া হবে।’’

Advertisement

শুক্রবারের ঘটনার পর এ দিন সকাল থেকেই থমথমে পাড়ুইয়ের মঙ্গলডিহি পঞ্চায়েতের চৌমণ্ডলপুর গ্রাম। পুলিশি তল্লাশির ভয়ে গ্রাম এখন কার্যত জনশূন্য। শুধুমাত্র পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রামের কয়েক জন মুখিয়া ও তাঁদের পরিবার রয়েছেন। গতকাল রাত পর্যন্ত চৌমণ্ডলপুর ও আশপাশের দু’তিনটি গ্রামে তল্লাশি অভিযান চালায় পুলিশ। তবে তল্লাশির নামে ‘পুলিশি বাড়াবাড়ি’র অভিযোগ তোলেন গ্রামবাসীরা। গ্রামের বেশ কিছু মহিলার দাবি, পুলিশ দুষ্কৃতীদের খোঁজার নামে বাড়ি-বাড়ি ঢুকে ভাঙচুর চালাচ্ছিল। কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। গ্রামের কয়েকটি নলকূপও ভেঙে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের। বাড়ির জিনিসপত্রও ভাঙা হয়েছে।

শুক্রবার এই গ্রামেই দুষ্কৃতীদের হামলায় গুরুতর জখম হন পাড়ুই থানার ওসি প্রসেনজিত্ দত্ত। তাঁর মাথা, পিঠ ও পায়ে গুরুতর চোট লাগে। জখম হন সুনীত গুপ্ত হালবাই নামে এক কনস্টেবলও। ওই দিনই বিকেলের দিকে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট থেকে ‘বম্ব ডিসপোজাল টিম’ আনিয়ে পুরে এলাকা ঘিরে ফেলা হয়। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে আটকও করা হয়।

এলাকা দখলের লড়াইকে কেন্দ্র করে শুক্রবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পাড়ুই থানার সাত্তোর ও মঙ্গলডিহি— এই দুই পঞ্চায়েত এলাকা। সাত্তোর-কসবা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভিতরে একটি পরিত্যক্ত ঘরে বিপুল পরিমাণ বোমা ও বোমার মশলা মজুত রাখার খবর পেয়ে এলাকায় তল্লাশি চালায় পুলিশ। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভগ্নপ্রায় আবাসনের একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে ঘি রাখার ১৬টি প্লাস্টিকের ড্রামে প্রায় ছ’শো তাজা বোমা ও মশলা উদ্ধার হয়। যখন এই তল্লাশি চলছে তখন অন্য একটি সূত্রে খবর আসে চৌমণ্ডলপুরে একটি পুকুরপাড় এবং মুরগি খামারে বোমা বাঁধার কাজ চলছে। দু’টি দলে ভাগ হয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন পাড়ুই থানার ওসি প্রসেনজিত্ দত্ত ও সিআই(বোলপুর) চন্দ্রশেখর দাস। গ্রামে ঢোকার মুখেই পুলিশের গাড়ি লক্ষ করে বোমা ছুড়তে থাকে দুষ্কৃতীরা। লাঠি-রড দিয়ে মারধরও চলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন