পথ দুর্ঘটনায় মৃত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গোপীনাথ মুন্ডে

বিমান ধরতে যাওয়ার পথে পথ দুর্ঘটনায় মারা গেলেন বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গোপীনাথ মুন্ডে। মঙ্গলবার সকাল ৬টা ২০ নাগাদ দিল্লির পৃথ্বীরাজ রোড এবং অরবিন্দ চকের কাছে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এইমস-এর ট্রমা সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হলে সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৪ ০৯:৫২
Share:

বিমান ধরতে যাওয়ার পথে পথ দুর্ঘটনায় মারা গেলেন বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গোপীনাথ মুন্ডে। মঙ্গলবার সকাল ৬টা ২০ নাগাদ দিল্লির পৃথ্বীরাজ রোড এবং অরবিন্দ চকের কাছে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এইমস-এর ট্রমা সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হলে সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর। কেন্দ্রীয় এই মন্ত্রীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

এ দিন সকালে মুম্বইয়ের বিমান ধরতে ইন্দিরা গাঁধী বিমানবন্দরে যাচ্ছিলেন মুন্ডে। চালক ছাড়াও গাড়ির সামনের আসনে ছিলেন তাঁর ব্যক্তিগত সচিব। পিছনের আসনে ছিলেন তিনি। পুলিশ সূত্রে খবর, পৃথ্বীরাজ রোড থেকে যখন সফদর জঙ্গ রোডের দিকে এগোচ্ছিল মন্ত্রীর গাড়ি, তখন হঠাৎই অরবিন্দ চকের ট্র্যাফিক সিগনাল ভেঙে তুঘলক রোডের দিকে আসা একটি ছোট গাড়ি তাঁর গাড়িতে ধাক্কা মারে। মন্ত্রী যে পাশে বসেছিলেন সেখানেই ধাক্কা লাগে সজোরে। গাড়ির ভিতরই পড়ে যান তিনি। জল চান সচিবের কাছে। চালককে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। এর পর তাঁকে এইমস-এর জয়প্রকাশ নারায়ণ অ্যাপেক্স ট্রমা সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়।

ট্রমা সেন্টারের চিকিৎসক অমিত গুপ্ত পরে বলেন, “সাড়ে ৬টা নাগাদ মন্ত্রীকে যখন এখানে নিয়ে আসা হয় তখন তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া কাজ করছিল না। রক্তচাপ, পাল্স, এমনকী হৃদযন্ত্রও বিকল হয়ে পড়েছিল।” ওই চিকিৎসক জানিয়েছেন, এর পর ‘সিপিআর’ পদ্ধতিতে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়। প্রায় ১৫ মিনিট চিকিৎসায় কোনও সাড়া না দেওয়ায় সকাল ৭টা ২০ মিনিট নাগাদ তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। মুন্ডে উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের রোগী ছিলেন। সে সংক্রান্ত ওষুধও নিতেন নিয়মিত। চিকিৎসক গুপ্তের কথায়, “শরীরে কোথাও বড় ধরনের কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ নিয়ে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়।” তবে প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসকদের মত, দুর্ঘটনার অভিঘাত সহ্য করতে না পেরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু হয়েছে তাঁর।

Advertisement

দুর্ঘটনার খবর পেয়েই মহারাষ্ট্র থেকে দিল্লি এসে পৌঁছন মুন্ডের পরিবারের লোকজন। এ দিন সকালে হাসপাতালে গিয়েছিলেন বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন এবং জাহাজ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী। ময়নাতদন্তের পর ১১ নম্বর অশোক রোডে বিজেপি-র সদর দফতরে নিয়ে যাওয়া হয় মুন্ডের দেহ। সেখানে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী-সহ বহু নেতা-কর্মী। ঘণ্টাখানেক পর এ দিন সন্ধ্যায় তাঁর দেহ মুম্বই নিয়ে যাওয়া হয়। সাধারণ মানুষ সন্ধ্যা ৫টা থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত তাঁকে সেখানে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন বলে জানিয়েছেন গডকড়ী। তিনি আরও জানান, বুধবার সকালেই মুন্ডের দেহ নিয়ে যাওয়া হবে লাতুরে। সেখান থেকে তাঁর নিজের জেলা বীর হয়ে দেহ পৌঁছবে পারলি গ্রামে। সেখানেই ওই দিন মুন্ডের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন গডকড়ী।

নয়াদিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে প্রয়াত নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। মঙ্গলবার পিটিআইয়ের তোলা ছবি।

সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে মহারাষ্ট্র থেকে জিতে আসার পর মোদীর মন্ত্রিসভায় বিশেষ জায়গা করে নিয়েছিলেন মুন্ডে। মহারাষ্ট্রে বিজেপি-র উত্থানের পিছনে যে কয়েক জন রাজনীতিবিদের ভূমিকা রয়েছে তিনি ছিলেন তাঁদের অন্যতম। এমনকী, এ বারের নির্বাচনে ওই রাজ্যে শিবসেনা-সহ অন্য দলগুলির সঙ্গে বিজেপির জোটবদ্ধ হওয়ার পিছনেও কাজ করেছে মুন্ডের রাজনৈতিক কৌশল। এ দিন সন্ধ্যায় মহারাষ্ট্রে তাঁর নিজের জেলা বীর-এ এক বিজয় উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতেই সকালে মুম্বইয়ের বিমান ধরতে যাচ্ছিলেন মুন্ডে।

গত সপ্তাহেই মোদীর মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন তিনি। এ দিন তাঁর মৃত্যুর পর রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেন, “তাঁর মৃত্যুতে আমরা এমন এক জন দুঁদে নেতাকে হারালাম যিনি সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করতেন।” মুন্ডের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, “বন্ধু এবং সহকর্মী গোপীনাথ মুন্ডের মৃত্যুতে আমি গভীর ভাবে দুঃখিত ও মর্মাহত। তাঁর মৃত্যু দেশ এবং সরকারের পক্ষে চরম এক ক্ষতি। তিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থেই জননেতা। অনগ্রসর সম্প্রদায় থেকে উঠে এসে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন।” মুন্ডের মৃত্যুর পর শোক প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।

বিজয় উৎসবে যোগ দিতে নয়, মুন্ডে ফিরছেন কফিন-বন্দি হয়ে এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই সকাল থেকেই গোটা মহারাষ্ট্র জুড়ে শোকের ছায়া নামে। শিবসেনার পক্ষ থেকে শোক বার্তায় জানানো হয়, দিল্লির নতুন সরকারে মুন্ডেই ছিলেন মহারাষ্ট্রের মুখ। বার্তায় আরও বলা হয়, তিনি ছিলেন তৃণমূল স্তরের নেতা এবং জনপ্রিয়ও। বিজেপি-র এই নেতার মৃত্যুতে ক্ষতিগ্রস্থ হল মহারাষ্ট্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন