রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে দিল্লিতে সরকার গড়তে বিজেপি-র বিরুদ্ধে টাকা দিয়ে বিধায়ক কেনার অভিযোগ করেছিলেন আম আদমি পার্টির সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরীবাল। এর দু’দিন পর সোমবার দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি শের সিংহ দাগারের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ তুললেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, সঙ্গম বিহারের আপ বিধায়ক দীনেশ মোহনিয়াকে দল ছাড়ার জন্য ৪ কোটি টাকার প্রস্তাব দিয়েছিলেন শের সিংহ। দলের কাছে এ বিষয়ে একটি ভিডিও ফুটেজ রয়েছে বলেও দাবি কেজরীবালের। মঙ্গলবার ওই ফুটেজ সুপ্রিম কোর্ট ও নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দেবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। তবে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগই খারিজ করে শের সিংহ এ দিন বলেন, “আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয় রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নেব।”
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার ঠিক ২৯ দিনের মাথায় ২০১৪-র ১৪ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগ করেন কেজরীবাল। ভেঙে যায় দিল্লির সরকার। তার পর থেকেই সরকার গঠন নিয়ে শুরু হয় টালবাহানা। বিজেপি সুবিধাজনক জায়গায় থাকলেও ফের নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষেই ছিল। ফলে উভয় সংকটে পড়ে দিল্লির ভাগ্য। লেফটেন্যান্ট গভর্নর নাজিব জঙ্গকে একপ্রকার ‘বাধ্য’ হয়েই রাষ্ট্রপতি শাসনের জন্য দরবার করতে হয়। এবং তা কার্যকরীও হয়।
সংবিধান অনুযায়ী এমন অবস্থায় এক বছরের মধ্যে সরকার গঠন করতে না পারলে পুনর্নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হয়। মাঝে সে বিষয়ে জল্পনাও শুরু হয়ে যায়। ইতিমধ্যেই বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসে। এত দিন ‘না না করেও’ এ বার দিল্লিতে সরকার গড়তে উদ্যোগী হয়েছে বিজেপি।
কিন্তু হঠাত্ করে এই উদ্যোগ কেন?
দলীয় সূত্রে বলা হয়েছে, তখন লোকসভা নির্বাচন ছিল। ফলে দলের বিরুদ্ধে বিধায়ক কেনাবেচার অভিযোগ উঠলে ভোটের ফলে প্রভাব পড়তে পারে। তা ছাড়া মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবিদার নিয়েও দলের মধ্যে একটা চাপানউতোর চলছিল। তবে এখন সেই সমস্যা মিটে গিয়েছে বলে দলের এক নেতা জানিয়েছেন। দু’টি সমস্যার আর কোনওটাই এখন দলের ‘মাথাব্যথা’র কারণ নয়, তাই সরকার গঠনে আর কোনও বাধা নেই বলেই মনে করছে দলের একাংশ।
দিল্লিতে সরকার গড়তে বিজেপি যখন মনস্থির করে ফেলেছে, তখনই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আপ। এই মুহূর্তে সরকার গড়তে প্রয়োজনীয় বিধায়ক সংখ্যা থেকে পাঁচটি আসন কম রয়েছে বিজেপি-র। আর সে কারণেই আপ-এর পক্ষ থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে, এ বার ঘর ভাঙার রাজনীতি শুরু করবে বিজেপি। সেই মতো দলের সমস্ত বিধায়ককে সম্প্রতি সতর্ক থাকতে বলেছিলেন কেজরীবাল। দেখা করে অভিযোগ জানিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতির কাছেও। রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতির বিরুদ্ধে টাকা দিয়ে বিধায়ক কেনার অভিযোগ ফের দিল্লির তখত দখল নিয়ে বিতর্ক উস্কে দিল।