যুদ্ধবিরতির মধ্যেই হামলা, গাজায় মৃত আরও ৪০

সবে সকাল হয়েছে। রাস্তায় অল্প কয়েক জন হাঁটাহাঁটি করছেন। বাড়ির সামনে ছোটদের জটলা। ২৫ দিন পরে একটি শান্ত সকাল। সৌজন্যে ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি। রাজি হয়েছিল হামাস, ইজরায়েল— দু’পক্ষই। কিন্তু গাজার এই শান্তি দীর্ঘস্থায়ী হল না। ঘণ্টা চারেক কাটতে না কাটতেই দক্ষিণ গাজার রাফায় ইজরায়েলি গোলায় প্রাণ গেল প্রায় ৪০ জন প্যালেস্তিনীয়র। আহত ১০০ জন। ফলে যুদ্ধবিরতিই সঙ্কটের মুখে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৪ ১৮:১২
Share:

প্রাণ বাঁচাতে। যুদ্ধবিরতির মধ্যেই হামলা রাফায়। ছবি: রয়টার্স

সবে সকাল হয়েছে। রাস্তায় অল্প কয়েক জন হাঁটাহাঁটি করছেন। বাড়ির সামনে ছোটদের জটলা। ২৫ দিন পরে একটি শান্ত সকাল। সৌজন্যে ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি। রাজি হয়েছিল হামাস, ইজরায়েল— দু’পক্ষই। কিন্তু গাজার এই শান্তি দীর্ঘস্থায়ী হল না। ঘণ্টা চারেক কাটতে না কাটতেই দক্ষিণ গাজার রাফায় ইজরায়েলি গোলায় প্রাণ গেল প্রায় ৪০ জন প্যালেস্তিনীয়র। আহত ১০০ জন। ফলে যুদ্ধবিরতিই সঙ্কটের মুখে।

Advertisement

মিশরের কায়রোয় দীর্ঘ আলোচনার পরে মানবিকতার খাতিরে যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব বান-কি মুন এবং মার্কিন বিদেশ সচিব জন কেরি যৌথ ঘোষণায় এই যুদ্ধবিরতির কথা জানান। ঠিক ছিল শুক্রবার ভারতীয় সময় সকাল ১০.৩০ থেকে শুরু হবে ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি। সেই মতো শুরুও হয়েছিল। ২৫ দিন ধরে সংঘর্ষে গাজার নাগরিক পরিষেবা বিপর্যস্ত। বিদুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গিয়েছে। জেনারেটারের ভরসায় চলছে হাসপাতালের জরুরি ব্যবস্থা। ভেঙে পড়েছে নিকাশি ব্যবস্থা। অনেকেই পরিস্রুত পানীয় জল নেই পাচ্ছেন না। অন্যান্য রসদও প্রায় শেষের মুখে। এই অবস্থায় সাধারণ নাগরিকদের সুবিধা করে দিতে এই যুদ্ধবিরতির কথা ভাবা হয়েছিল। যুদ্ধবিরতির সুযোগে আহত ও নিহতদের উদ্ধারের কথাও ভাবা হয়েছিল। এই যুদ্ধবিরতি ঠিকমতো চললে সময়সীমা আরও বাড়ানোর কথা আছে। শুক্রবার, শনিবার এ নিয়ে কায়রোয় আলোচনা চলার কথা। যদিও চূড়ান্ত যুদ্ধবিরতির শর্ত নিয়ে হামাস ও ইজরায়েল— দু’পক্ষই এখনও অনড়। ইজরায়েল গাজাকে অস্ত্রমুক্ত করা এবং গাজা থেকে কোনও হামলা না-হওয়ার আন্তর্জাতিক নিশ্চয়তা দাবি করেছে। হামাস গাজা থেকে অবরোধ তুলতে বদ্ধপরিকর।

বিপন্ন শৈশব। হামলা হল বুরিজ আশ্রয় শিবিরেও। ছবি: রয়টার্স।

Advertisement

ইজরায়েলের তরফ থেকে যুদ্ধবিরতি স্বীকার করা হলেও হামাসের সুড়ঙ্গগুলি ধ্বংস করার কাজ চালিয়ে যাওয়া হবে বলে জানান হয়েছিল। নিজেদের ট্যুইটার অ্যাকাউন্টে ইজরায়েলি সেনার দাবি, যুদ্ধবিরতি চলাকালীনই দক্ষিণ ইজরায়েলের কেরেমা শালোমায় রকেট হামলা হয়। জবাবে রাফায় হামলা করে তারা। পাশাপাশি মধ্য গাজার বুরিজ আশ্রয় শিবিরেও হামলা হয়েছে বলে প্যালেস্তাইন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। এই যুদ্ধবিরতির সুযোগ নিয়ে হামাস এক সেনাকে অপহরণ করেছে বলে ইজরায়েল জানিয়েছে। তাঁকে উদ্ধারে জন্য অভিযানও শুরু হয়েছে। এর মধ্যেই ইজরায়েল লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি রকেট ছুড়েছে হামাস। তাতে অবশ্য হতাহতের খবর নেই। যদিও এখন পর্যন্ত দু’পক্ষই আনুষ্ঠানিক ভাবে যুদ্ধবিরতি ভেঙে গিয়েছে বলে ঘোষণা করেনি।

২৫ দিন ধরে চলা গাজার সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন ১৪৯৯ প্যালেস্তিনীয়। এর মধ্যে ৩২৭ জন শিশু এবং ১৬৬ জন নারী। আহত হয়েছেন আট হাজারেরও বেশি। প্রাণ গিয়েছে ৬৩ জন ইজরায়েলি সেনারও। বৃহস্পতিবারই প্রাণ হারিয়েছে পাঁচ সেনা। গাজার ২ লক্ষের বেশি বাসিন্দা রাষ্ট্রপুঞ্জের আশ্রয় শিবিরগুলিতে রয়েছেন। আরও ২ লক্ষ বাসিন্দা ঘর ছেড়ে অন্যত্র থাকছেন। গাজার প্রায় ৪৩ শতাংশ অংশে সাধারণ নাগরিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান নভি পিল্লাই দু’পক্ষের বিরুদ্ধেই যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলেছেন। হামাস স্কুল, হাসপাতাল এবং অন্যান্য জলবহুল জায়গায় অস্ত্র লুকিয়ে রাখছে, সেখান থেকে আক্রমণও চালাচ্ছে। ইজরায়েলও জনবসতি, এমনকী রাষ্ট্রপুঞ্জের আশ্রয় শিবিরগুলিকে রেয়াত করছে না বলে তিনি জানান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন