ভোট দিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। ছবি: এএফপি।
অসমে ভোটের বলি হলেন এক পুলিশ কর্মী। বৃহস্পতিবার একটি বুথ দখলকে কেন্দ্র করে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। আহত হয়েছেন আরও এক পুলিশ কর্মী। বিক্ষিপ্ত গণ্ডগোলের মধ্যে দিয়েই বৃহস্পতিবার সম্পন্ন হল লোকসভা ভোটের ষষ্ঠ দফায় পশ্চিমবঙ্গের ৬ টি আসন-সহ গোটা দেশের ১১টি রাজ্যের ভোটপর্ব। কেন্দ্রশাসিত পুদুচেরির ১টি আসন-সহ মোট ১১৭টি কেন্দ্রে ভোট হয়েছে এই দফায়। এ দিন প্রায় ২৭৬ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করেন ১৮ কোটি ভোটার। অসমের ৬, বিহারের ৭, ছত্তীসগঢ়ের ৭, ঝাড়খণ্ডের ৪, উত্তরপ্রদেশের ১২, মধ্যপ্রদেশের ১০, রাজস্থানের ৫, মহারাষ্ট্রের ১৯, তামিলনাডুর ৩৯, জম্মু-কাশ্মীরের ১ টি এবং কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল পুদুচেরির একটি আসনে হয়েছে ভোটগ্রহণ। এ দিন ঝাড়খণ্ডে ছিল শেষ দফায় ৭২ জন প্রার্থীর নির্বাচনী লড়াই। ঝাড়খণ্ডের দুমকায় রাজ্যের দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জেএমএম শীর্ষ নেতা শিবু সোরেন এবং জেভিএম-প্রধান বাবুলাল মরান্ডির ভাগ্য নির্ধারিত হয়। এই কেন্দ্রে গত লোকসভা নির্বাচনে ১৮ হাজার ভোটে পরাজিত হন বিজেপি-র সুনীল সোরেন। এ বারও তিনি একই কেন্দ্রে লড়েছেন। এই দফায় ভোট ময়দানে ছিলেন বেশ কিছু হেভিওয়েট প্রার্থীও। তাঁদের মধ্যে অন্যতম বিজেপির সুষমা স্বরাজ, সমাজবাদী পার্টির মুলায়ম সিংহ যাদব, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা সলমন খুরশিদ, কংগ্রেসের মহম্মদ আজহারউদ্দিন এবং হেমা মালিনী।
এ দিন সকাল সকাল ভোট দিলেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সেলিব্রিটিরা। সুপারস্টার রজনীকান্ত থেকে শুরু করে সস্ত্রীক আমির খান, সানি দেওল, রেখা, সোনম কপূরের মতো তারকারা। পরিবারের সঙ্গে সকাল সকাল ভোট দিয়েছেন অভিনেত্রী বিদ্যা বালন। ভোট দিয়ে বেড়িয়ে তাঁর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া, ‘‘ভোট দেওয়া গণতান্ত্রিক অধিকার, তাই হাজারো ব্যস্ততা থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ এই কাজের জন্য সময় বের করতে কারওরই সমস্যা হওয়া উচিত নয়।’’ জন্মদিনের সকালে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করলেন সচিন তেন্ডুলকর। মুম্বইয়ে ভোট কেন্দ্রে সপরিবারে ভোট দেন শিল্পপতি অনিল অম্বানিও।
অসমে ৭৪ জন প্রার্থীর ভোট ভাগ্য নির্ধারণ করেন ১ কোটি ৪৩ লক্ষ ১ হাজার ৪০১ জন ভোটার। বুথ ছিল ১১ হাজার ৯৯৪ টি। হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে কংগ্রেস প্রার্থী ওয়াজেদ আলি, বিজেপির দেবময় সান্যাল, বিপিএফ প্রার্থী তথা রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী চন্দন ব্রক্ষ্ম উল্লেখযোগ্য। রাজ্যের বেশ কয়েকটি জায়গায় ইভিএম বিভ্রাটের অভিযোগ ওঠে। গুয়াহাটিতে ২১, কোকরাঝাড়ে ৮, ধুবুরিতে ৩, বারপিটায় ১৬, মোঙ্গলদইতে ১২ এবং নাউগঞ্জে ৫টি মেশিন খারাপ হয়ে যায়। এর ফলে সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায় ভোট গ্রহণ। পরে সেগুলিকে বাতিল করে নতুন ইভিএম দেওয়া হয়।
এ দিন কোকরাঝাড়ে বিএসএফ জওয়ানের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে এক পুলিশ কর্মীর। আহত হয়েছেন আরও এক জন। পুলিশ সূত্রে খবর, কোকরাঝাড়ের একটি বুথ দখল করতে আসে এক দল দুষ্কৃতী। বুথে থাকা পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায় তাদের। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় এক পুলিশকর্মীর। লুঠ করা হয় দু’টি ইনস্যাস রাইফেল। কিছু ক্ষণের মধ্যেই সেখানে পৌঁছয় বিএসএফের এক দল জওয়ান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি চালায় তারা।
বিহারে তৃতীয় দফায় এ দিন ১ কোটি চার লক্ষ ভোটারের জন্য বুথ ছিল ৯ হাজার ৮৪০টি। পরিচিত প্রার্থীদের মধ্যে ভাগলপুরে বিজেপি-র শাহনওয়াজ হুসেন, আরারিয়ায় আরজেডি-র মহম্মদ তসলিমুদ্দিন, কাটিহারে এনসিপির তারিক আনোয়ার ছিলেন। কয়েকটি কেন্দ্র মাওবাদী-অধ্যুষিত হওয়ায় কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে নির্বাচন কমিশন। জঙ্গি-প্রবণ এলাকায় ভোটকর্মীদের হেলিকপ্টারে পৌঁছে দেওয়া হয়। ওই সব কেন্দ্রগুলিতে টহল দেন জওয়ানরা।
অন্য রাজ্যগুলিতে মহিলা প্রার্থীর সংখ্যা কম না হলেও ব্যতিক্রম ছিল জম্মু-কাশ্মীর। এখানে ৭০ জন পুরুষ প্রার্থীর পাশাপাশি মহিলা প্রার্থীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৩।
রাজ্য
আসন সংখ্যা
ভোটের হার (বিকেল ৫টা পর্যন্ত)
অসম
৬
৭০.৬০ শতাংশ
ছত্তীসগঢ়
৭
৬৬.০০ শতাংশ
ঝাড়খণ্ড
৪
৬৩.৪৪ শতাংশ
উত্তরপ্রদেশ
১২
৫৫.০০ শতাংশ
মধ্যপ্রদেশ
১০
৫৯.০৪ শতাংশ
রাজস্থান
৫
৫৯.৬৪ শতাংশ
মহারাষ্ট্র
১৯
৫৬.২৬ শতাংশ
জম্মু-কাশ্মীর
১
২১.০০ শতাংশ
বিহার
৭
তামিলনাড়ু
৩৯
৭৩.০০ শতাংশ
পশ্চিমবঙ্গ
৬
৮২.০০ শতাংশ