ওয়েলে নেমে চলছে প্রতিবাদ। ছবি: পিটিআই।
সাধ্বী নিরঞ্জন ইস্যুতে অবশেষে নীরবতা ভাঙলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মন্তব্যকে ‘দুঃখজনক’ আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানান, মন্তব্যটি একেবারেই সমর্থনযোগ্য নয়। সংসদের স্বাভাবিক কাজকর্ম চালাতে বিরোধীদের কাছে অনুরোধও জানান তিনি।
দিন দু’য়েক আগে দিল্লিতে একটি জনসভায় ‘রামজাদা’র বিপরিত শব্দ বলতে গিয়ে অশালীন মন্তব্য করেন গেরুয়াবসনা এই কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী। খাস রাজধানীর বুকে দাঁড়িয়ে মোদী মন্ত্রীসভার নবতম সদস্যের এই উক্তির পরই বিজেপিকে নিশানা করতে নেমে পড়ে সব রাজনৈতিক দল। সপা-বসপা-সিপিএম-কংগ্রেস সোচ্চার হয় সব বিরোধী দলই। তীব্র বিরোধিতা করেন তৃণমূলের সাংসদরাও। মন্ত্রীর বেফাঁস মন্তব্যে এবং বিরোধী সমালোচনায় বেকায়দায় পড়ে শাসক বিজেপি। সাংসদদের বিক্ষোভের জেরে বার বার অচল হয় সংসদের কাজকর্ম। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়া থেকে শুরু করে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলার দাবি তোলেন বিরোধীরা। পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে বুঝতে পেরে সংসদীয় দলের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। এর পরই সংসদের দুই কক্ষে নিজের বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন সাধ্বী। কিন্তু শুধুমাত্র মন্ত্রীর ক্ষমায় অখুশি বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। বৃহস্পতিবার বিরোধীদের দাবি মেনে পরোক্ষে ক্ষমাই চেয়ে নিলেন প্রধানমন্ত্রী। রাজ্যসভায় মোদী এ দিন বলেন, “কঠোর ভাবে মন্তব্যের বিরোধিতা করছি। নিজের ভুল বুঝতে পেরে সংসদে ক্ষমা চেয়েছেন মন্ত্রী নিজেও। সংসদের মর্যাদা যাতে কোনও ভাবে ক্ষুণ্ণ না হয়, সে দিকে আমাদের সবাইকে নজর রাখতে হবে। সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকেও মন্তব্যের সমালোচনা করেছি। বিরোধীদের কাছে সংসদের স্বাভাবিক কাজকর্ম চলতে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।” অভিযুক্ত সাংসদ যে প্রথম বার সংসদের সদস্য হয়েছেন তা মনে করিয়ে দিয়ে তাঁর ক্ষমা প্রার্থনা স্বীকার করে নিতে সবাইকে অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এ দিন সকালে রাজ্যসভার কাজ শুরু হওয়ার আগে থেকেই ওয়েলে নেমে স্লোগান দিতে থাকেন বিরোধী সাংসদরা। তুমুল হট্টগোলে ১৫ মিনিটের জন্য মুলতুবি হয়ে যায় রাজ্যসভা। সাড়ে ১১টা নাগাদ কাজকর্ম ফের শুরু হতেই বিবৃতি দেন প্রধানমন্ত্রী। বিবৃতির পরেও পুরোপুরি শান্ত স্বাভাবিক হয়নি সংসদ। মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের দাবি জানান কংগ্রেস সাংসদ আনন্দ শর্মা। এক ধাপ এগিয়ে সিপিএম সাংসদ সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, “ঘটনার জন্য ক্ষমা নয়, দুঃখপ্রকাশ করেছেন সাধ্বী। প্রধানমন্ত্রীর উচিত তাঁকে সংসদ থেকে বিতারিত করা।” তুমুল হট্টগোলে পৌনে ১২টা নাগাদ ফের ১৫ মিনিটের জন্য মুলতুবি হয়ে যায় রাজ্যসভা। এর পরে ফের সংসদের কাজ শুরু হলেও তা আধ ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হয়নি। বাধ্য হয়ে বেলা ২টো পর্যন্ত রাজ্যসভা মুলতুবি রাখার সিদ্ধান্ত নেন স্পিকার সুমিত্রা মহাজন। নিরপেক্ষতা ভুলে শাসক বিজেপির হয়ে কাজ করছেন স্পিকার— এই অভিযোগে ওয়াক আউট করেন কংগ্রেস এবং তৃণমূলের সাংসদরা। এর পর সংসদের কাজ ফের চালু হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। বেলা পৌনে ৩টে নাগাদ এ দিনের মতো রাজ্যসভা মুলতুবি করেন স্পিকার। সাংসদের বহিষ্কারের দাবিতে লোকসভার এ দিনের অধিবেশন বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস।