রাজ্যে এখন ভরা ভোটের মরসুম। শুরু হয়ে গেছে মসনদ দখলের যুদ্ধ। ‘পরিবর্তন’-এর তৃণমূল সরকার কি আরও পাঁচ বছরের জন্য স্থায়ী হবে? নাকি মসনদে বসবে সিপিএম-কংগ্রেসের জোট সরকার? নাকি এবার সব হিসেব উলোট-পালোট করে কোনও নয়া ম্যাজিক দেখাবে বিজেপি? কী ভাবছেন এ রাজ্যের কলেজে পড়ুয়ারা? যারা আবার নবীন ভোটারও। কী ভাবছে ক্যাম্পাসগুলো? আজ রইল আশুতোষ কলেজের হাল হদিশ।
আশুতোষ কলেজে বরাবরই পড়ুয়াদের মধ্যে রাজনৈতিক মেরুকরণটা প্রকট। বিভিন্ন সময়ে যে কোনও একটা মেরুর দাপটে আর একটা মেরু প্রায় নিষ্প্রভ হয়েই থাকে। এই বছর কয়েক আগেও যেমন মোটামুটি লাল দূর্গ ছিল আশুতোষ, এখন সেখানে তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের দাপট। সাংবাদিক শুনেই প্রথমেই ইউনিয়নের সদস্যরা খানিক ইতস্তত ভাব প্রকাশ করলেন। ‘যাই বলি না কেন আপনারা কি আর ভাল কিছু লিখবেন?’’ প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন একজন। বেশ খানিকটা অনুরোধ-উপরোধ করার এবং কতগুলো ফোন পাল্টা ফোনের পর সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলার ‘অনুমতি’ পাওয়া গেল। প্রশ্নগুলো বেশ সাধারণ হলেও উত্তর মিলল কিছুটা গতে বাঁধা ঢঙেই। পুরো প্রশ্নোত্তর পর্বটাই চলল ইউনিয়নের দাদাদের ‘তত্ত্বাবধানে’ এবং উপস্থিতিতে।
প্রশ্ন ছিল-
১) প্রথমবার বিধানসভা নির্বাচনে ভোট, কী অনুভূতি? ২) সারদা থেকে নারদ, এই ঘুষ কাণ্ডের সঙ্গে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব কতটা জড়িত বলে আপনি মনে করেন? ৩) নতুন সরকারের কাছে শিক্ষা নিয়ে কী প্রত্যাশা? ৪) কর্মসংস্থান নিয়ে কী প্রত্যাশা? নতুন সরকার কী কী করতে পারে? ৫) সোশ্যাল মিডিয়া নাকি চিরাচরিত মিটিং-মিছিল? ৬) রাজ্যে মেয়েরা কী সত্যিই নিরাপদ? ৭) সংরক্ষণ নিয়ে কী ভাবছেন? ৮) জেনেইউ, ন্যাশনালিজম বিতর্ক, কাশ্মীর ইস্যু, হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়, বদলাচ্ছে ছাত্র রাজনীতির প্রেক্ষাপট, কী ভাবছেন এখানে প্রভাব পড়বে? ৯) ভোট দেবেন? ১০) কেন দেবেন?
সুপর্ণ দে (রসায়ন, দ্বিতীয় বর্ষ)
১)ভালই লাগছে, আমাদের ভোটই সরকারকে শক্তিশালী করবে।
২) আগে প্রমাণ হোক। আর অনেক সময় পার্টি ফান্ডে অনেকেই অনুদান দেন। সেটাকে ঘুষ বলে চালানোর মানে হয় না, আর দোষ যদি প্রমাণিত হয় দোষীরা শাস্তি পাবে।
৩)অনেক কাজ হয়েছে, শিক্ষায় আমরা অনেক এগিয়েছি। এভাবেই যেন অগ্রগতির ধারা অক্ষুণ্ণ থাকে। উন্নতি হচ্ছে। এমনটা যেন বজায় থাকে।
৪)যথেষ্ট কর্মসংস্থান হচ্ছে। এই ধারাটা যেন বজায় থাকে।
৫)দু’টোই।
৬) হ্যাঁ, এ রাজ্যে মেয়েরা এখন অনেক নিরাপদ। কিছু ঘটনা ঘটছে। সেগুলো বিক্ষিপ্ত ঘটনা।
৭)সংরক্ষণ এত হলে জেনেরেলরা পড়বে কী করে?
৮)ধুর, ও সব শৌখিন আন্দোলন। পজিটিভ কিছু হলে সমর্থন করতাম। গিটার বাজিয়ে সব কিছু হয় না।
৯) হ্যাঁ, ভোট তো দেবই।
১০) এই সরকার ফিরে আসুক চাই, তাই ভোট দেব।
রাজ চক্রবর্তী (দ্বিতীয় বর্ষ, বিএসসি জেনারেল)
১) ভাল লাগছে।
২) ধুর, প্রমাণ কোথায়, আর সারদার টাকা ফেরনোর চেষ্টা মুখ্যমন্ত্রীই করছেন তো।
৩) এখন প্রাইমারি থেকে ইংরেজি, এতগুলো ইউনিভার্সিটি। আগে ছিল কী? এটা বজায় রাখলেই আমি খুশি।
৪) কলেজ পাস করলে চাকরি পাব, আশা আছে এই সরকারের জমানায়।
৫) সোশ্যাল মিডিয়া একটা পর্যায় পর্যন্ত ঠিক আছে, কিন্তু মিটিং-মিছিল দরকারি। যদিও অকারণ মিটিং মিছিল বিরক্তিকর।
৬) মেয়েরা অনেক ভাল আছে।
৭) সংরক্ষণ ভালইতো। মুখ্যমন্ত্রী সংখ্যালঘু সংরক্ষণের চেষ্টা করছেন।
৮) এখানে ওসবের কোনও প্রভাব নেই। বিজেপি এখানে কিস্যু করতে পারবে না।
৯) হ্যাঁ দেব।
১০) আমার অধিকার, তাই দেব।
ঈশিতা বসু (কম্যুনিকেটিভ ইংরাজি, দ্বিতীয় বর্ষ)
১) হ্যাঁ, ভালই লাগছে তো...
২) দোষ করলে শাস্তি পেতে হবে। আগে থেকে কিছুই বলা যায় না।
৩) শিক্ষায় আমরা এখন অনেক এগিয়েছি। কলেজে কলেজে এখন কত ধরণের সাবজেক্ট। আগে কি এসব ছিল নাকি?
৪) চাকরির এখন অনেক অপশন।
৫) আগে অকারণ মিটিং মিছিল হত। মুখ্যমন্ত্রী এসব অনেক কমিয়ে দিয়েছেন। আমি খুশি।
৬) নিজেকে দিয়েই বুঝতে পারি, এ রাজ্যে মেয়েরা এখন অনেক সম্মানের সঙ্গে বাঁচে।
৭)সংরক্ষণ নিয়ে বাড়াবাড়ি অসহ্য।
৮) কেন্দ্র সরকার যা করছে খুব বাজে, তবে এখানকার ভোটে প্রভাব পড়বে না।
৯) হ্যাঁ দেব।
১০)আমার গণতান্ত্রিক অধিকার।
মন্দার বোস (ইংরেজি দ্বিতীয় বর্ষ)
১) হ্যাঁ, এক্সাইটেড।
২) কেউ বললেই কিছু হয়ে যায় না, ঘুষ আর পার্টি তহবিলে অনুদানে ফারাক আছে। তদন্ত হোক।
৩) যে ভাবে চলছে, শিক্ষা যেন সে ভাবেই এগিয়ে যায়।
৪) কর্মসংস্থানে আমাদের রাজ্য অনেক এগিয়েছে। আর আমাদের ভিন রাজ্যে যেতে হবে না।
৫) মুখ্যমন্ত্রী প্রয়োজন না হলে মিটিং মিছিল করেন না। একটা সীমা পর্যন্ত ফেসবুক ঠিকই আছে।
৬) আমার বোন বা গার্লফ্রেন্ড, রাতে দেরি করে বাড়ি ফিরলে এখন আর চিন্তা হয় না।
৭) সংরক্ষণ একটা পর্যায় পর্যন্ত জরুরী।
৮) যুক্তি সঙ্গত আন্দোলনের পাশে আছি, তাই বলে যাদবপুর বা প্রেসির মত শিক্ষকদের হেনস্থা করে অযৌক্তিক আন্দোলন পোষায় না।
৯) হ্যাঁ দেব।
১০) আমরা নতুন জেনেরেশন, আমরা ভোট না দিলে আর কে দেবে, এটা তো আমাদের অধিকার।
দিব্যেন্দু দাস (পদার্থ বিদ্যা, দ্বিতীয় বর্ষ)
১) ভালই লাগছে, অন্য অনুভূতি।
২) আগে তদন্ত হোক। কেউ দোষ করলে ঠিক সাজা হবে।
৩) শিক্ষায় এখন অনেক উন্নতি, এটা চললেই হবে। শান্তি চাই রাজ্যে আরও। বিধায়ককে পাশে চাই।
৪) কাজ আছে, আরও নতুন অনেক কর্মসংস্থান হচ্ছে। অবস্থা অনেক বদলেছে। পাঁচ বছরে অনেক এগিয়েছি।
৫) দুটোই দরকারী।
৬) কিছু সমস্যা আছে ঠিকই, কিন্তু মেয়েরা এখন অনেক নিরাপদ। দেখ, ভূল সবারই হয়। কিন্তু পার্কস্ট্রিট, কামদুনি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীই সদর্থক ভূমিকা নিয়েছেন।
৭) হ্যাঁ, তবে সেটা আর্থিক অবস্থার উপর হলেই বেটার।
৮)নাহ্, এখানে ওসবের প্রভাব নেই।
৯) হ্যাঁ দেব।
১০) আমার অধিকার।