Lok Sabha Election 2024

ব্যারাকপুর কি ‘গিনিপিগ’? প্রশ্ন উঠছে সিপিএমে, জেলায় দলের তিন প্রার্থীর দু’জনই এ বার ‘বহিরাগত’

ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের এক তরুণ শ্রমিকনেতা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘আমাদের এলাকাটা কি গিনিপিগ? বার বার এখানেই বাইরের লোককে আমাদের ঘাড়ে করে বয়ে চলতে হবে?’’

Advertisement

শোভন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৪ ১০:০৭
Share:

(বাঁ দিক থেকে) দেবদূত ঘোষ, নিরাপদ সর্দার এবং সুজন চক্রবর্তী। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় পাঁচটি লোকসভা আসন। তার মধ্যে তিনটি আসনে সিপিএমের প্রতীকে প্রার্থীরা লড়ছেন। সেই তিন প্রার্থীর মধ্যে আবার দু’জন জেলারই লোক নন! ব্যারাকপুরের সিপিএম প্রার্থী দেবদূত ঘোষ এবং দমদমের সিপিএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী। শুধু বসিরহাটের প্রার্থী নিরাপদ সর্দার সন্দেশখালির ভূমিপুত্র। তবে তিনি সেখানকার প্রাক্তন বিধায়ক। কেন জেলার কাউকে প্রার্থী করা গেল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সিপিএমের নিচুতলার নেতৃত্ব। দমদমে সুজনকে যা-ও বা মেনে নিয়েছে বেশিরভাগ অংশ কিন্তু ব্যারাকপুর নিয়ে ক্ষোভের কথা ঘরোয়া আলোচনায় গোপন করছেন না নেতারাও।

Advertisement

ব্যারাকপুরের এক তরুণ শ্রমিকনেতা যেমন প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘আমাদের এলাকাটা কি গিনিপিগ? বার বার এখানেই বাইরের লোককে আমাদের ঘাড়ে করে বয়ে চলতে হবে?’’ ২০১৪ সালে ব্যারাকপুর লোকসভায় সিপিএম প্রার্থী করেছিল দলের সর্বভারতীয় নেত্রী সুহাসিনী আলিকে। সুহাসিনী এক সময়ে কানপুরের সাংসদ ছিলেন। কিন্তু সে সব দিন অতীত। এ বারও ব্যারাকপুর কেন্দ্রে শ্রমিকনেত্রী গার্গী চট্টোপাধ্যায়ের নাম নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল। সূত্রের খবর, জেলায় নেতৃত্বের বিভাজনের জন্যই তাঁকে প্রার্থী করা হয়নি। এর নেপথ্যে নাকি এক প্রবীণ নেতা রয়েছেন বলে দাবি সিপিএমের অনেকের। যাঁর সঙ্গে আবার তৃণমূল-বিজেপির নেতাদেরও সখ্য রয়েছে। গার্গীকে প্রার্থী চেয়ে ব্যারাকপুর লোকসভার গ্রামীণ এলাকায় পার্টি অফিসে পোস্টারও পড়েছিল। যদিও গার্গীর ভোটে জেতার রেকর্ড নেই। এর আগে তিনি নৈহাটি বিধানসভা ও গত লোকসভা ভোটে হেরেছেন। তবে দলের তরুণ অংশের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা রয়েছে।

সিপিএমের একটি সূত্রের অবশ্য দাবি, ‘বিভাজন’ এড়াতেই বাইরে থেকে প্রার্থী নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বস্তুত, সিপিএম সূত্রের খবর, বিভাজন এমনই পর্যায়ে ছিল যে, রাজ্য কমিটির উদ্দেশে জেলা থেকে বার্তা দেওয়া হয়েছিল, বাইরের লোককেই প্রার্থী করা হোক। তাতে কোনও পক্ষই চটবে না। দমদমে প্রাথমিক ভাবে এক প্রাক্তন বিধায়ককে প্রার্থী করার কথা ভেবেছিল জেলা সিপিএমের একটা অংশ। কিন্তু তাঁর নামে আপত্তি জানায় অন্য দুই গোষ্ঠী। ব্যারাকপুরে কলকাতার দুই প্রাক্তন ছাত্রনেতাকে প্রার্থী হতে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা দু’জনেই অপারগতার কথা জানিয়ে দেন। অতঃপর অভিনেতা দেবদূত ঘোষকে টালিগঞ্জ থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ব্যারাকপুরে প্রার্থী করে সিপিএম। যে দেবদূত গত বিধানসভা ভোটে টালিগঞ্জ আসনে অরূপ বিশ্বাসের কাছে পরাস্ত হয়েছিলেন।

Advertisement

উত্তর ২৪ পরগনায় সিপিএমের গোষ্ঠীকোন্দল অবশ্য আদি অনন্তকালের। বাম জমানায় অমিতাভ নন্দী বনাম তড়িৎ তোপদার, সুভাষ চক্রবর্তীদের দ্বন্দ্ব ছিল সর্বজনবিদিত। তার পরেও তা অব্যাহত থেকেছে। অনেকে বলেন, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমে গোষ্ঠীবিন্যাস মরসুমে মরসুমে বদলায়। সাধারণ নির্বাচনের সময়ে এক রকম, ছাত্র বা যুব সংগঠনের সম্মেলনের সময়ে অন্য সমীকরণ হয়ে যায়। বাম জমানার অবসানের পর গোষ্ঠীকোন্দল রুখতেই প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেবকে জেলা সম্পাদক করতে হয়েছিল। তখন গৌতম কেন্দ্রীয় কমিটিরও সদস্য। পলিটব্যুরোর বিশেষ অনুমতি নিয়ে তা করতে হয়েছিল সিপিএমকে।

সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী গুরুতর অসুস্থ। তিনি দিল্লিতে চিকিৎসাধীন। আপাতত ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক পলাশ দাস। তিনি রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীরও সদস্য। পলাশের বক্তব্য, ‘‘দেশের যে কোনও প্রান্তের ভোটার হলে যে কোনও কেন্দ্রে ভোটে দাঁড়াতে পারেন। সেই জন্যই তো নরেন্দ্র মোদী দাঁড়ান বারাণসী থেকে (রাহুল গান্ধীর ওয়েনাড়ে দাঁড়ানোর কথা অবশ্য বলেননি বাংলায় কংগ্রেসের জোটসঙ্গী সিপিএম নেতা)।’’ কিন্তু এই প্রশ্ন তো উঠছে সিপিএমের ভিতর থেকেই! পলাশ বলেন, ‘‘আমি সিপিএমের একজন কর্মী। আমি এ রকম প্রশ্ন উঠতে শুনিনি।’’ কিন্তু গার্গীকে প্রার্থী করার দাবিতে তো সিপিএমের বিভিন্ন পার্টি অফিসে পোস্টার পড়েছিল? পলাশের দাবি, ‘‘ওগুলো বিরোধীদের চক্রান্ত।’’

এই পরিস্থিতিতে এখন দেখার, উত্তর ২৪ পরগনার তিনটি আসনে সিপিএম কেমন ফল করে। বসিরহাট আসনটি সিপিআইয়ের থেকে নিয়ে নিজেরা প্রার্থী দিয়েছে সিপিএম। তা নিয়ে ফ্রন্টের অন্দরে খানিকটা অনুযোগ যে নেই, তা নয়। কারণ, ‘ঐতিহ্যগত’ ভাবে বসিরহাট আসনটি ফ্রন্টের শরিক সিপিআইয়েরই ছিল। সেখানে ভাল ফল না করতে পারলে ফ্রন্টের অন্দরে দ্বন্দ্ব তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশিই, ব্যারাকপুর এবং দমদম আসনেও দুই ‘বহিরাগত’ প্রার্থী কী করেন, তার দিকেও তাকিয়ে থাকবে ফ্রন্ট শরিকেরা। তাকিয়ে থাকবে সিপিএমেরও একটি অংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন