Lok Sabha Election 2024

রূপালা-কাঁটা, গুজরাতে ৯ আসনে অস্বস্তি পদ্মে

রাজকোট আসনে গত দু’টি লোকসভা নির্বাচনে জেতা প্রার্থীকে পাল্টে এ বার রাজ্যসভার সাংসদ পুরুষোত্তম রূপালাকে টিকিট দিয়েছে দল।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৫৯
Share:

পুরুষোত্তম রূপালা। — ফাইল চিত্র।

ঘরের মাঠে রাজপুত-ক্ষত্রিয় বিক্ষোভে রীতিমতো অস্বস্তিতে নরেন্দ্র মোদীর দল। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা রাজকোট লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী পুরুষোত্তম রূপালার ক্ষত্রিয়-রাজপুত সমাজের বিরুদ্ধে করা মন্তব্যে কেবল রাজকোটই নয়, গুজরাতের সৌরাষ্ট্র এলাকার জামনগর, ভাবনগর, কচ্ছ-সহ অন্তত আটটি আসনে অস্বস্তির মুখে বিজেপি।

Advertisement

রাজকোট আসনে গত দু’টি লোকসভা নির্বাচনে জেতা প্রার্থীকে পাল্টে এ বার রাজ্যসভার সাংসদ পুরুষোত্তম রূপালাকে টিকিট দিয়েছে দল। গোড়ায় তাঁর জেতা নিয়ে দলের মধ্যে কোনও সন্দেহ না থাকলেও, পরিস্থিতি পাল্টে যায় ২২ মার্চের পরে। রূপালা একটি জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলে বসেন, গুজরাতের রাজপুত ও ক্ষত্রিয় সমাজ নিজেদের স্বার্থের জন্য ব্রিটিশ ও অন্য বহিরাগত আক্রমণকারীদের সাহায্য করত। এমনকি বহিরাগতদের সঙ্গে ‘রোটি-বেটির’ (বাণিজ্যিক-বৈবাহিক) সম্পর্ক রেখে চলত। রূপালার ওই বক্তব্যের পরেই রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদে নামেন রাজপুত-ক্ষত্রিয়রা। দলের কাছে রূপালার টিকিট বাতিলেরও দাবি ওঠে। যদিও গত ১৬ এপ্রিল নিজের মনোনয়ন জমা দিয়েছেন রূপালা। আগামী ৭ মে গুজরাতের ২৬টি আসনে ভোট হতে চলেছে।

গুজরাতে রাজকোট-সহ সৌরাষ্ট্র অঞ্চলে পতিদার শ্রেণির প্রভাব রয়েছে। ওই এলাকায় ২৫ শতাংশ পতিদার ভোট রয়েছে, যাঁরা প্রধানত বিজেপিকেই ভোট দিয়ে থাকেন। তাই ওই কেন্দ্রে পতিদার নেতা রূপালাকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিজেপি। এ বারে রাজপুত-ক্ষত্রিয় সমাজের ক্ষোভকে কাজে লাগাতে এবং পতিদার ভোটে ভাঙন ধরাতে পতিদারদের আর এক নেতা পরেশ ধানানিকে প্রার্থী করেছে কংগ্রেস। বিজেপির এক নেতার ব্যাখ্যা, ‘‘রূপালা হলেন কদভা পতিদার। সেখানে কংগ্রেসের ওই প্রার্থী হলেন লেউয়া পতিদার শ্রেণির। ওই এলাকার ৮০ শতাংশ পতিদার হলেন লেউয়া শ্রেণির। রাজকোট লোকসভা কেন্দ্রে ৮ শতাংশ ক্ষত্রিয়-রাজপুত ভোট ছাড়াও প্রায় তিন শতাংশ মুসলিম ভোট রয়েছে। সংখ্যালঘু ভোট কংগ্রেস প্রার্থী যে পাবেন, সে বিষয়ে কারও কোনও সন্দেহ নেই। রূপালার বিরুদ্ধে ক্ষোভের কারণে রাজপুত-ক্ষত্রিয় ভোটও কংগ্রেস পেতে চলেছে বলে আমাদের ধারণা। এ ছাড়া কংগ্রেস প্রার্থী যদি নিজের লেউয়া পতিদার শ্রেণির বড় অংশের ভোট টানতে সক্ষম হন, সে ক্ষেত্রে রূপালার জেতা মুশকিল হবে।’’

Advertisement

পরিস্থিতি সামলাতে ইতিমধ্যেই প্রকাশ্য জনসভায় তিন বার রাজপুত-ক্ষত্রিয় সমাজের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন রূপালা। একাধিক বৈঠক করেছেন রাজপুত-ক্ষত্রিয় সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতার সঙ্গে। যদিও তাতে কাজের কাজ তেমন হয়নি। রাজপুত-ক্ষত্রিয় যুব সমাজের বড় অংশ এই মুহূর্তে রূপালা তথা বিজেপির উপর প্রবল ভাবে খেপে রয়েছে। যদিও কংগ্রেসের ব্যাখ্যা, অর্থনীতির বেহাল দশা, চাকরি না পাওয়ার হতাশা, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মতো কারণে সার্বিক ভাবে গোটা দেশের মতোই গুজরাতে যুবসমাজ বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ। রূপালার বিরুদ্ধে আন্দোলনের মাধ্যমে সেটাই সামনে উঠে এসেছে। বিজেপি রূপালার টিকিট প্রত্যাহার না করে অনড় মনোভাব দেখানোয় ক্ষত্রিয় যুবসমাজের বড় অংশ বিজেপির সঙ্গে কোনও ভাবেই আপসে যেতে রাজি নয়। গত কাল রাজপুত-ক্ষত্রিয় সমাজের একটি মহাসম্মেলনে বিজেপি প্রার্থীদের বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে চারটি মহাসম্মেলনের ডাক দিয়েছেন রাজপুত-ক্ষত্রিয় সমাজ। যার মধ্যে গত কাল একটি সম্মেলন হয়েছে। বাকি তিনটি সম্মেলন ৭ মে ভোটের আগে রাজ্যের আরও তিনটি জেলায় হওয়ার কথা রয়েছে।

রাজপুত-ক্ষত্রিয়দের ওই বিক্ষোভ রাজকোট ছাড়াও সৌরাষ্ট্র এলাকার অন্তত সাত-আটটি আসনে বিজেপি প্রার্থীকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজেপি নেতারা। দলের বক্তব্য, সৌরাষ্ট্র এলাকায় রাজপুত-ক্ষত্রিয় সমাজের প্রভাব রয়েছে। এই সমাজ যে ভাবে একজোট হয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে, তাতে রাজকোট ছাড়াও জামনগর, সুরেন্দ্রনগর, ভাবনগর, কচ্ছ, আমরেলি, জুনাগড় তো বটেই, এ ছাড়া সৌরাষ্ট্র লাগোয়া বনসকাঁঠা, পাটন, সাবরকাঁঠার মতো কেন্দ্রগুলিতেও সমস্যায় পড়তে পারেন বিজেপি প্রার্থীরা। ফলে গত দু’টি লোকসভার মতো এ বারেও গুজরাত থেকে সব ক’টি আসনে জেতা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে দলের মধ্যেই। যদিও কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতৃত্বের দাবি, প্রতি বারই কোনও না কোনও গোষ্ঠীর ক্ষোভ থাকে বিজেপির উপরে। নিজের রাজ্য বলে এখনও প্রচারে নামেননি নরেন্দ্র মোদী। তিনি প্রচারে নামলেই সব ক্ষোভ ধুয়ে মুছে যাবে। বিভাজন ভুলে এক জোট হয়ে রূপালাকে ভোট দেবেন কদভা ও লেউয়া শ্রেণির পতিদার সমাজ। গুজরাতে টানা তিন বার সব ক’টি আসনে জেতার হ্যাটট্রিক করবে দল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন