Lok Sabha Election 2024

শহরের দাঁড়িপাল্লা ঝুঁকে কোন দিকে, চলছে হিসাব

গত বিধানসভা নির্বাচনে শহরের ‘প্রভাবশালী’ নেতা খোকন দাস দাঁড়ালেও জয়ের ব্যবধান ছিল ৮১০৫ ভোট। বিজেপির ভোট হাজার খানেক কমে গিয়েছিল।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৪ ১০:০২
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

এ শহর যেন দাঁড়িপাল্লা। দু’দিকেই নিত্য টলমল। লোকসভা ভোটের আগে বর্ধমান দক্ষিণের ভোটব্যাঙ্কে কার কত জমা আর সুদই বা কার বেশি, সেই হিসাব কষছে সব পক্ষ।

Advertisement

গত লোকসভা নির্বাচনে এই বিধানসভায় (বর্ধমান শহরের ৩৫টি ওয়ার্ড) তৃণমূলের ভোট প্রায় ছ’হাজার কমে গিয়েছিল। শেষমেশ ১৩৩৮ ভোটে জিতেছিল তৃণমূল। এই বিধানসভায় অল্প ব্যবধানে জেতার কারণেই বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনটি তৃণমূলকে হারাতে হয়েছিল বলে অনেকে মনে করেন। সম্প্রতি কাটোয়ায় দলীয় বৈঠকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বর্ধমান দক্ষিণ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন।

গত বিধানসভা নির্বাচনে শহরের ‘প্রভাবশালী’ নেতা খোকন দাস দাঁড়ালেও জয়ের ব্যবধান ছিল ৮১০৫ ভোট। বিজেপির ভোট হাজার খানেক কমে গিয়েছিল। কিন্তু লোকসভায় হারানো ভোটের প্রায় পাঁচ হাজার ভোট সিপিএমের ঝুলিতে জমা হয়। এ বারের লোকসভা ভোটে তৃণমূল ও বিজেপি দুই প্রার্থীর মধ্যে কে বহিরাগত তা নিয়ে তর্ক চলছে। সিপিএমের প্রার্থী সুকৃতি ঘোষাল বর্ধমান শহরেরই বাসিন্দা। এই সমীকরণে সব পক্ষেরই অনুমান, বর্ধমান শহরের ভোটেই ভাগ্য নির্ধারিত হবে প্রার্থীদের।

Advertisement

পরিসংখ্যান বলছে, বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভায় জোর লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তৃণমূল-বিজেপির প্রার্থীরও নিত্য ঠোকাঠুকিও তারই প্রমাণ। ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী ৪৭.২২ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে বর্ধমান দক্ষিণে তৃণমূলের ভোট চার শতাংশ কমে যায়। সিপিএমের ঝুলিতে ছিল প্রায় সাড়ে ৩১ শতাংশ ভোট। তিন বছর পরে সেই ভোট নেমে আসে ৯.৫ শতাংশে। ২০১৬ সালে বিজেপি বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভায় নির্দল প্রার্থীর চেয়েও কম ভোট পেয়েছিল। কিন্তু ৮.৩ শতাংশ ভোট তিন বছরের মধ্যে বেড়ে দাঁড়ায় ৪২.৩৯ শতাংশে। যার অর্থ গত লোকসভায় শুধু মাত্র বামের ভোট ‘রামে’ যায়নি, বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভায় তৃণমূলের ঘরেও থাবা বসিয়েছিল বিজেপি। গত বিধানসভা ভোটে তৃণমূল পেয়েছিল ৪৪.৩২ শতাংশ, বিজেপি ৪০.৩৮ শতাংশ ও সিপিএম ১১.৩৭ শতাংশ। কংগ্রেসেরও পাঁচ হাজারের মতো ভোট রয়েছে। জোট হলেও সেই ভোট কোন দিকে, রয়েছে নজর।

তৃণমূলের প্রার্থী কীর্তি আজাদ মাসখানেক ধরে প্রচার চালাচ্ছেন। প্রথম দিন থেকেই তিনি খেলার মাঠে গিয়ে ব্যাট ধরেছেন। বিভিন্ন ওয়ার্ডে পদযাত্রা করছেন। বাড়ির ভিতর ঢুকে যাচ্ছেন। মহিলা-মহলে বসে মুড়ি খাওয়ার ছবিও উঠে আসছে। কীর্তি বলেন, “মহিলারাই শক্তি। নারীশক্তি এগোলে তবে দেশ এগোবে। সে জন্যই আমাদের দিদি (মুখ্যমন্ত্রী) মহিলাদের স্বনির্ভর করা থেকে সব দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। আর বিজেপি নারীদের অসম্মান করছে।” বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষও প্রতিদিন ভোর থেকে ছুটছেন পুরো এলাকায়। তাঁর নানা মন্তব্যে বিতর্কও বাধছে নিত্য। কোথাও ‘গো-ব্যাক’ স্লোগান, কোথাও তৃণমূলের কর্মসূচিতে হাজির হয়ে শরবতে গলা ভেজাচ্ছেন তিনি। দিলীপের কথায়, “আমি যে কোনও পিচেই খেলতে জানি। এখনও প্রচার শুরু করিনি। তার মধ্যেই বর্ধমানের মানুষ বলতে শুরু করে দিয়েছেন, আমি জিতে গিয়েছি। এই আওয়াজই বলে দিচ্ছে কে থাকতে এসেছে আর কারা ‘গো ব্যাক’ হবে।”

যুযুধান দু’দলের মাঝে বর্ধমানের বাসিন্দা, মহিলা কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সুকৃতি ঘোষাল নিজের মতো শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে বেরাচ্ছেন। তৃণমূল-বিজেপির বিরুদ্ধে কেন গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে সিপিএমকে ভোট দেওয়া দরকার, প্রচারে তা জানাচ্ছেন তিনি। সিপিএমের দাবি, যে ক্ষয় হয়েছিল, এ বার তা আর হবে না। বরং গত দু’টি নির্বাচনে হারিয়ে যাওয়া ভোট এ বার তাদের ঝুলিতে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ধারনার পিছনে রয়েছে, গত পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে হার-না মনোভাব নিয়ে লড়াই। পঞ্চায়েত ভোটের আগে আইন-অমান্য আন্দোলন ঘিরে ধুন্ধুমার ঘটে গিয়েছিল শহরে। সিপিএমের অনেকেই জেল খেটেছিলেন। তার ফসল পঞ্চায়েতে পাওয়া গিয়েছিল, দাবি সিপিএমের।

তবে দুই ফুলে ‘কাঁটা’ও কম নেই। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ভুগছে বিজেপি, তৃণমূল দু’পক্ষই। বিজেপির ‘আদি’রা এখনও দুয়ারে খিল দিয়ে বসে রয়েছেন। দলের সভাপতির বিরুদ্ধে তাঁদের ‘অনাস্থা’র কথা প্রকাশ্যেই বলছেন। অন্য দিকে, পাড়ায় পাড়ায় দ্বন্দ্বের জেরে তৃণমূলের অনেকেই প্রচারে নামেননি। পুর সদস্যদের মধ্যেও দ্বন্দ্ব রয়েছে। পুর পরিষেবার উপরে ভোটের ফল অনেকটাই নির্ভরশীল বলে রাজনৈতিক দলগুলি মনে করে। পুরসভার পরিষেবা নিয়ে শহরের বড় অংশের মানুষ তিতিবিরক্ত। শহরের বেশির ভাগ রাস্তা বেহাল। অনেক রাস্তায় আলো জ্বলে না। তবে পানীয় জলের সমস্যা অনেকটা মিটে গিয়েছে বলে পুর কর্তাদের দাবি।

সব হিসাবের শেষে কার পাল্লায় ভোটের ভার বেশি, সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন