West Bengal Budget 2024-25

প্রশ্নে রাজ্যের অর্থনীতি, জবাবি বক্তৃতায় ‘মহিলা সম্মান’-কে হাতিয়ার করলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা

২০২১-এর ভোটের আগে লক্ষ্মীর ভান্ডারের ঘোষণা করেছিল রাজ্য। জিতে সরকার গড়ার পরে বাজেটে মহিলা উপভোক্তাদের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:২২
Share:

চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। —ফাইল চিত্র।

লোকসভা ভোটের বছরে মহিলা, যুব, দরিদ্র এবং কৃষকেরাই যে পাখির চোখ, তার স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে তৃণমূল সরকারের বাজেটে। লক্ষ্মীর ভান্ডারের বরাদ্দ বাড়িয়ে মহিলাদের দিকে সরকার বাড়তি নজর দেওয়ার বার্তাও স্পষ্ট। তবে বিরোধীদের অভিযোগ, এই বাজেট যেন ‘দলীয় ইস্তাহার’ এবং এর ফলে রাজ্যের ভবিষ্যৎকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। শনিবার বাজেট আলোচনার জবাবি বক্তৃতায় অবশ্য ‘মহিলা-সম্মান’-কে হাতিয়ার করলেন অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। বিলকিস বানো থেকে সাক্ষী মালিকের ঘটনার উল্লেখ টেনে বিজেপির উদ্দেশে বিধানসভায় তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘লক্ষ্মীর ভান্ডারের বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে বলে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। বাজেটে মেয়েরা সম্মানিত হচ্ছে বলে এত রাগ?’’

Advertisement

এ দিন বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী রাজ্যের বেহাল অর্থনীতির অভিযোগ তুলেছেন। মোট ঋণ থেকে মাথাপিছু ধার—তথ্য দিয়ে দায়ী করেছেন শাসকপক্ষকে। তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘লক্ষ্মীর ভান্ডারে অসমের মতো আড়াই হাজার টাকা দেওয়া হোক। রাজস্থানের মতো গ্যাসের সিলিন্ডার দেওয়া হোক ৪৫০ টাকায়। বিহারের মতো সরকারি চাকরির পরীক্ষার ফি মকুব করা হোক। আমরা কাট-মোশনকে সমর্থন করছি।’’ প্রসঙ্গত, বাজেট পেশের পর থেকেই বিরোধীদের অভিযোগ, আয়ের দিশা নেই, বাড়ছে কেন্দ্রীয় অর্থের উপর নির্ভরতা। সমান্তরালে বৃদ্ধি পাচ্ছে ঋণের বোঝা। যা রাজ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে।

জবাবি বক্তৃতায় চন্দ্রিমা বিজেপিকে নিশানা করে টেনে এনেছেন মহিলাদের সম্মানের প্রসঙ্গ। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘বিলকিস বানো-কাণ্ডে অপরাধীদের ছেড়ে দেওয়ার পরে তাদের বরণ করা হল। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তাদের জেলে ফেরত পাঠানোর কথা। কিন্তু তাদের নাকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না! সাক্ষী মালিক যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন, তাঁকে বকলমে সংগঠন চালানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছে। মণিপুরে মহিলাদের দুরবস্থার কথা ভুলে যাইনি। এ সব নিয়ে তো কোনও কথা নেই!’’

Advertisement

প্রসঙ্গত, ২০২১-এর ভোটের আগে লক্ষ্মীর ভান্ডারের ঘোষণা করেছিল রাজ্য। জিতে সরকার গড়ার পরে বাজেটে মহিলা উপভোক্তাদের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকের যুক্তি, বিধানসভা ভোটে জয়লাভের নেপথ্যে এই পদক্ষেপ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। ফলে লোকসভা ভোটের আগে সেই বরাদ্দ আরও বাড়ানোর নেপথ্যে অতীতের সেই অভিজ্ঞতাকে শাসকপক্ষ কাজে লাগাতে চেয়েছে। তবে চন্দ্রিমার কথায়, ‘‘বিয়াল্লিশে (লোকসভার আসনসংখ্যা এ রাজ্যে) বিয়াল্লিশ দেওয়ার জন্য মানুষ তৈরি আছেন। এটা ইস্তাহার নয়। সকলের উপরে থাকা লক্ষ্মী (মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে) সবকিছু সামলে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন বলে এত রাগ!’’

চন্দ্রিমার দাবি, মহিলাদের পরিচালিত স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সংখ্যা ৯৩ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে সাত লক্ষ। ২৯ গুণ বেড়ে তাদের ঋণদান পৌঁছেছে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকায়। ৪৪% মহিলা ক্ষমতায়নে খরচ করা হয়। ১৭% খরচ হয় শিশু কল্যাণে। ১০ হাজার মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে ২৫ হাজার করে টাকা দেওয়া হবে। কেন্দ্রের ঘোষণায় থাকা ‘লাখপতি দিদি’-র সংখ্যা তিন কোটিতে পৌঁছবে। তার মধ্যে ৩৮ লক্ষ করবে এ রাজ্যই। তাঁর কথায়, ‘‘একশো দিনের প্রকল্পে ২১ লক্ষ জবকার্ডধারীর মধ্যে আইন অনুযায়ী সাত লক্ষ মহিলা হতেই হয়। ফলে ওই সংখ্যক মহিলাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে মজুরি না দিয়ে!’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমরা কল্যাণকর রাষ্ট্র। তাই মানুষের হাতে টাকা দিয়ে অর্থনীতি সচল থাকে।’’

শুভেন্দুর অভিযোগ, ১৯৪৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত রাজ্যের ঋণের পরিমাণ ছিল ১.৯২ লক্ষ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরে তা পৌঁছবে প্রায় সাত লক্ষ কোটি টাকায়। ২০১১ সালে একটি শিশুর মাথায় ২০ হাজার টাকা ধার ছিল। তা এখন পৌঁছেছে ৬০ হাজার টাকায়। আবার ৯২ হাজার কোটি টাকা ধার করবে সরকার। ডিএ-র এরিয়ার পাননি সরকারি কর্মচারী এবং পেনশনভোগীরা। তাঁর কথায়, ‘‘মোট বাজেট ৩.৬৬ লক্ষ কোটি টাকা। কেন্দ্রের থেকে পাওয়া যাবে ১.২৭ লক্ষ এবং রাজ্যের নিজস্ব আয় ১.০২ লক্ষ।’’ চন্দ্রিমার জবাব, রাজ্যের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিএসডিপি) সঙ্গে ঋণের হার ৪০% থেকে কমে হয়েছে ৩৬%। কেন্দ্রের তা ৫৬%। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের রাজ্যে মাথাপিছু ধারের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রে তা ১.০৯ লক্ষ টাকা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন