Lok Sabha Election 2024

শান্তিরামের বক্তৃতা থামিয়ে হট্টগোল

রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, রবিবারই জেলায় প্রচারে আসছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে এই ঘটনায় মোটেই স্বস্তিতে নেই শাসকদল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝালদা শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:৪৫
Share:

সভার গোড়ার দিকে ‘যুযুধান’ সুরেশ আগরওয়াল (একেবারে বাঁ দিকে) ও শীলা চট্টোপাধ্যায়কে (একেবারে ডান দিকে) পাশে নিয়ে পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া ও প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতো। নিজস্ব চিত্র

তৃণমূল প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতোর বক্তৃতা থামিয়ে ঝালদার পুরপ্রধান সুরেশ আগরওয়ালের বক্তব্য শুনতে চেয়ে হইচই পাকালেন কর্মীদের একাংশ। বুধবার রাতে ঝালদায় তৃণমূলের কর্মিসভায় ওই ঘটনাকে ঘিরে ভোটের মুখে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বেআব্রু হয়ে পড়ল। এর পরে বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি কর্মিসভা।

Advertisement

রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, রবিবারই জেলায় প্রচারে আসছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে এই ঘটনায় মোটেই স্বস্তিতে নেই শাসকদল। যদিও পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বৃহস্পতিবার দাবি করেন, ‘‘দ্বন্দ্বের কিছু নেই। দলের প্রার্থীকে জেতাতে সবাইকে এককাট্টা হয়ে মাঠে নামার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ তবে কটাক্ষ করার সুযোগ ছাড়ছে না বিজেপি। দলের রাজ্য নেতা বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘তৃণমূলে আপাদমস্তক পচন ধরেছে। শুধু ঝালদা নয়, রাজ্যের সর্বত্র তৃণমূল অন্তঃকলহে দুর্বল হয়ে পড়েছে।’’

ভোট ঘোষণার আগে থেকেই তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব পুরুলিয়া জেলার দলীয় নেতা-কর্মীদের দ্বন্দ্ব ভুলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়াইয়ে বার্তা দিয়ে আসছেন। এক দশকের বেশি সময়ের ভুল বোঝাবুঝি মুছে জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় প্রাক্তন বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়ার বাড়িতে গিয়ে চা পান করেছেন সম্প্রতি। তারপরেও জেলার কিছু জায়গায় তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মনান্তর যে দূর হয়নি, ঝালদা তা সামনে আনল।

Advertisement

পুরসভার ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে ঝালদা শহর তৃণমূল নেতৃত্ব সেপ্টেম্বর থেকে কার্যত আড়াআড়ি বিভক্ত। বিধায়ক সুশান্ত মাহাতোর হাত ধরে ঝালদার তৎকালীন পুরপ্রধান শীলা চট্টোপাধ্যায় এবং কংগ্রেসের চার পুর-প্রতিনিধি তৃণমূলে যোগ দেন। তারপরেই বেসুরো হন সুরেশ আগরওয়াল-পন্থী তৃণমূলের পুর-প্রতিনিধিরা। পরে দ্বন্দ্বের ফাটল বাড়তেই থাকে। শেষে দলের হুইপ অমান্য করে কংগ্রেসের হাত ধরে অনাস্থা এনে শীলাকে সরিয়ে পুরপ্রধান হন সুরেশ। তারপর থেকে ঝালদা তৃণমূলের দ্বন্দ্ব অন্তঃসলিলার মতো বইছিল। বুধবার বহিঃপ্রকাশ ঘটল।

নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকায় তৃণমূল প্রার্থীর ওই কর্মিসভা শান্তিতে মিটবে কি না, তা নিয়ে বুধবার সকাল থেকেই চাপা উত্তেজনা ছিল শহরে। বিকেল নাগাদ ঝালদা শহর তৃণমূল সভাপতি চিরঞ্জিৎ চন্দ্র, প্রাক্তন পুরপ্রধান শীলা চট্টোপাধ্যায়, তাঁর অনুগামী পুর-প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে সভা শুরু হয়। রাত সাড়ে ৭টা নাগাদ জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া, দলীয় প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতো, বিধায়ক সুশান্ত মাহাতো সভায় আসেন। তখনই কয়েকশো সমর্থক নিয়ে পুরপ্রধান সুরেশ এবং তাঁর অনুগামী পুর-প্রতিনিধিরা ‘তৃণমূল কংগ্রেস জিন্দাবাদ’, ‘শান্তিরাম মাহাতো জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিতে দিতে সভায় যোগ দেন।

বক্তৃতা করতে গিয়ে বিধায়ক সুশান্ত দ্বন্দ্ব ভুলে এককাট্টা হয়ে রাজনৈতিক লড়াইয়ের বার্তা দেন। সৌমেন বক্তব্য রাখেন। তারপরে শান্তিরাম বক্তৃতা শুরু করতেই তাল কাটে সভার। কিছু কর্মী মঞ্চের কাছাকাছি আসার চেষ্টা করতেই হট্টগোল বাধে। ‘বাবুকে’ (সুরেশ) বলতে দিতে হবে বলে তাঁরা দাবি জানাতে থাকেন। তাঁদের শান্ত হয়ে আসনে ফিরে যেতে অনুরোধ করেন সৌমেন এবং সুশান্ত। তাঁরা শান্ত হওয়ার কিছু পরেই জরুরি কাজ রয়েছে বলে সভা ছাড়েন সৌমেন। শান্তিরামও বেশিক্ষণ বক্তব্য রাখেননি। এরপরেই সুরেশ ও তাঁর অনুগামী পুরপ্রতিনিধিরা বেরিয়ে যান। ভিড় পাতলা হতেই সভা শেষ বলে ঘোষণা করা হয়।

এমন পরিস্থিতি হল কেন? বৃহস্পতিবার সুরেশ বলেন, ‘‘কর্মীরা তাঁদের দাবির কথা দলের কাছে জানাচ্ছিলেন। এতে অন্যায়ের কিছু দেখছি না। হট্টগোলের পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আগে আমিই ওদের শান্ত থাকতে বললাম। সভা শান্তিপূর্ণ ভাবেই শেষ হয়েছে।’’ তবে প্রাক্তন পুরপ্রধান শীলা জানান, এ নিয়ে যা বলার দলীয় নেতৃত্বই বলবেন। বিধায়ক সুশান্তের বক্তব্য, ‘‘ভুল বোঝাবুঝি থাকতেই পারে। তবে এটা দ্বন্দ্ব করে বিরোধীদের সুযোগ করে দেওয়ার সময় নয়। দলের নির্দেশ মতো সবাইকে এককাট্টা হয়ে মাঠে নামতে হবে। আমি কর্মীদের কাছে সেই বার্তা দেওয়ারই চেষ্টা করেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন