Lok Sabha Election 2024

কুড়মি সমাজ ভোটে কার সুবিধা করছে: শুভেন্দু

পুরুলিয়ায় সাংগঠনিক বৈঠকে এসে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এসসি ও এসটিদের মধ্যে ঝগড়া লাগানোর জন্য বিজেপির নাম করেই অভিযোগ করেন।

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল, সমীরণ পাণ্ডে

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৬:৪৯
Share:

পুরুলিয়া-১ ব্লকের শিবডি এলাকায় শুভেন্দু অধিকারীর জনসভা। নিজস্ব চিত্র।

মাহাতো সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতি মর্যাদা দেওয়ার জন্য তারা সক্রিয় ভাবে পদক্ষেপ করবে, ইস্তাহারে এমনই জানিয়েছে তৃণমূল। এ বার পুরুলিয়ায় সভা করতে এসে বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী দাবি করলেন, তৃণমূলকে সুবিধা পাইয়ে দিতেই নির্বাচনে নেমেছে আদিবাসী কুড়মি সমাজ। তাঁর আরও দাবি, কুড়মিদের জাতিসত্তা আন্দোলনে বিজেপি কোনওদিনই বাধা দেয়নি। কিন্তু নির্দল প্রার্থী দিয়ে আদিবাসী কুড়মি সমাজ আখেরে সুবিধা করে দিচ্ছে তৃণমূলকেই।

Advertisement

বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া ১ ব্লকের বেলকুড়িতে জনসভায় শুভেন্দু কিছু কাগজ দেখিয়ে দাবি করেন, ‘‘২০১৭ সাল থেকে সাত বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের কাছে ১০বার জাস্টিফিকেশন রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে।তাহলে কেন্দ্রের ভুল কোথায়? সমস্যাটা তৈরি করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।’’ তাঁর প্রশ্ন, তাহলে নির্দল হয়ে দাঁড়িয়ে কার সুবিধা করে দিচ্ছেন?

এ দিনই পুরুলিয়ায় সাংগঠনিক বৈঠকে এসে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এসসি ও এসটিদের মধ্যে ঝগড়া লাগানোর জন্য বিজেপির নাম করেই অভিযোগ করেন। দাবি করেন, ‘‘কুড়মিদের দাবি নিয়ে বিজেপির পুরুলিয়ার সাংসদ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঁচ বছরে কোনও চিঠি পর্যন্ত দেননি।’’

Advertisement

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, পুরুলিয়ায় আদিবাসী সমাজের মূলমানতা অজিত মাহাতো নির্দল প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে পুরোদস্তুর নেমে পড়ার পরেই ভোট সমীকরণ অনেকটাই বদলেছে। অনেকের মতে, গত লোকসভা ভোটে বিজেপির বিশাল ব্যবধান জয়ের পিছনে কুড়মি সম্প্রদায়ের সমর্থন অন্যতম ভূমিকা নিয়েছিল। এ বার কুড়মি সম্প্রদায়ের নেতা অজিত নিজেই প্রার্থী হওয়ায় কিছুটা হলেও চাপে পড়েছে বিজেপি।তাই এ দিনের সভায় কুড়মি-ভোট ব্যাঙ্ক ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়েছেন শুভেন্দু।

যদিও কুড়মি নেতা অজিতের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘উনি যখন রাজ্যের মন্ত্রী ছিলেন, তখন নিশ্চয় দুধের শিশু ছিলেন না। রাজনৈতিক দিক দিয়ে যথেষ্ঠ পরিণত ছিলেন। তা সত্ত্বেও পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলের যুবকদের, কুড়মি যুবকদের প্রাথমিকের চাকরি মেদিনীপুরের ছেলেমেয়েদের দিয়েছেন। তারপরে এই জেলা সম্পর্কে কোনও কথা তাঁর মুখে মানায় না।’’

অজিতের দাবি, জঙ্গলমহলে চার-পাঁচ জন বিজেপির সাংসদ হয়েছিলেন কুড়মি সমাজের সমর্থন পেয়েই। বিজেপির কেন্দ্র সরকার চাইলেই কুড়মিদের এসটি স্বীকৃতি দিতে পারত। তাঁরা ৩৭০ ধারা বিলোপ করে দিচ্ছেন, অথচ কুড়মিদের এসটি-ভুক্ত করতে পারছেন না? তাঁর বক্তব্য, ‘‘আসলে তৃণমূল আমাদের সঙ্গে বেইমানি করেছে। তার চাইতেও বেশি বেইমানি করেছে বিজেপি।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার দাবি, একমাত্র তাঁদের সরকারই কুড়মিদের দাবি আদায়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেছে। বিজেপি নেতৃত্বও অভিযোগ মানেননি।

পুরুলিয়া কেন্দ্র ফের নিজেদের দখলে রাখতে বিজেপি চেষ্টার কসুর রাখছে না, তার ইঙ্গিত মিলেছে বিরোধী দলনেতার বক্তব্যে। পরের ধাপে জেলার দুই জায়গায় ফের সভা করতে আসবেন বলে জানান শুভেন্দু। জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, দলের রাজ্য সভাপতি, তারকা প্রচারক মিঠুন চক্রবর্তীরা জেলায় প্রচারে আসবেন।

তৃণমূলের পাশাপাশি সিপিএম ও বামেদের মঞ্চকেও বিঁধেছেন শুভেন্দু।রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, বাম ও কংগ্রেসের মধ্যে নির্বাচনী সমঝোতা হওয়ার পরে পুরোদস্তুর মাঠে নেমেছেন দু’দলেরই নিচুতলার কর্মীরা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, গত লোকসভা ভোটে দু’দলের হারিয়ে যাওয়া ভোট কংগ্রস প্রার্থী নেপাল মাহাতো পেলে, আখেরে সমস্যায় পড়তে হতে পারে বিজেপিকেই।

শুভেন্দুর কটাক্ষ, ‘‘নেপালবাবু প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু নিজের এলাকার ছোট্ট পুরসভা ঝালদায় ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেননি।’’ কংগ্রেস প্রার্থী নেপালের পাল্টা মন্তব্য, ‘‘তিনি বিরোধী দলনেতা হওয়ার সময় বিজেপির ক’জন বিধায়ক ছিলেন, আর এখন ওদের ক’জন রয়েছেন? সেটাও তাঁর পর্যালোচনা করা দরকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন