Narendra Modi Barasat Rally

মমতা-লালুদের নাম না করে তোপ দাগলেন জোটের দিকে, ব্যক্তি আক্রমণের রাস্তায় কি আর হাঁটছেন না নরেন্দ্র মোদী?

রাজনৈতিক মহলের অনেকের বক্তব্য, মোদী স্বয়ং জনমানসে এই ধারণা নির্মাণ করতে চাইছেন যে, তাঁর ধারকাছে কেউ নেই। কারও নাম নিলে তুলনা শুরু হয়ে যেতে পারে। সে কারণেই কি এই কৌশল?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২৪ ১৫:৪৫
Share:

বারাসতের সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —পিটিআই।

নরেন্দ্র মোদী কি আর ব্যক্তি আক্রমণের রাস্তায় হাঁটছেন না? ‘দিদি ও দিদি’ বা ‘শাহজাদা’ অথবা ‘ভাইপো’ আর বলবেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাহুল গান্ধী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়দের উদ্দেশে? বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের প্রচারে প্রাথমিক ভাবে মোদীর এটাই ‘লাইন’— ব্যক্তি আক্রমণের ঊর্ধ্বে উঠে প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিক আক্রমণ করা।

Advertisement

বুধবার বারাসতের সভা নিয়ে গত ছ’দিনে বাংলায় তিনটি সভা করলেন মোদী। আরামবাগের সভায় একবার-আধবার ‘দিদি’ বলেছিলেন বটে। কিন্তু কৃষ্ণনগর আর বারাসতের সভায় সে পথে একেবারেই হাঁটেননি তিনি। বরং নেতানেত্রীদের ইঙ্গিতে আক্রমণ না করে সার্বিক ভাবে সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’কে নিশানা করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

বারাসতের মহিলা সমাবেশে বুধবার মোদী বলেন, ‘‘দেশের যেখানে ইন্ডির সরকার, সেখানেই উন্নয়ন বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। কেন্দ্র যে উন্নয়নমূলক কর্মসূচি নিচ্ছে, সেই সরকারগুলি তা বাস্তবায়িত করতে দিচ্ছে না।’’ ‘ইন্ডিয়া’র মধ্যে রয়েছে বাংলার শাসকদল তৃণমূলও। সেই সূত্রেই বারাসতে মোদী বলেন, ‘‘বাংলাতেও তৃণমূল নামের গ্রহণ লেগেছে। এরা কোনও উন্নয়নের কাজকে তরান্বিত করতে দিচ্ছে না। উজ্জ্বলা যোজনায় ১৪ লক্ষ মানুষের আবেদন আটকে রেখেছে রাজ্য সরকার।’’ দেশের হাতে গোনা রাজ্যে এখন অ-বিজেপি সরকার রয়েছে। বারাসতের সভা থেকে সেই রাজ্যগুলিতেও লোকসভা ভোটে পদ্ম ফোটানোর ডাক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন, ‘‘ইন্ডিকে হারাতে হবে! দেশের কোণায় কোণায় পদ্ম ফোটাতে হবে।’’

Advertisement

কংগ্রেস, আরজেডি, তৃণমূল‌ ইত্যাদি দলগুলির বিরুদ্ধে মোদী তথা বিজেপির ‘পরিবারতন্ত্রের’ অভিযোগ নতুন নয়। মোদীর সেই অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে দু’দিন আগে ‘বেফাঁস’ মন্তব্য করে বসেছিলেন আরজেডি প্রধান তথা বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব। লালু বলেছিলেন, ‘‘উনি (মোদী) তো নিঃসন্তান। ওঁর কোনও পরিবার নেই। তাই পরিবারের উপর ওঁর এত রাগ। কিন্তু আমরা কী করতে পারি?’’ বারাসতের সভা থেকে মোদী তার জবাব দিয়েছেন। তবে লালুর নাম করেননি। মোদী বলেছেন, ‘‘এই ইন্ডির নেতারা আমার পরিবার নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। ওঁরা জানতে চান, আমার পরিবার কোথায়? আমি বলি, এই যে মা-বোনেরা, এই যে দেশের ১৪০ কোটি মানুষ— এই হল আমার পরিবার।’’ তার পর সঙ্ঘের প্রচারক হিসাবে কাজ করার সময়ে তিনি কী ভাবে কাঁধে ঝোলা নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরতেন, কী ভাবে তাঁকে বিভিন্ন মানুষ আপন করে নিতেন, সে কথাও বলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমার কাছে একটা পয়সা থাকত না। আমি অনেক জায়গায় ভাষাও বুঝতে পারতাম না। কেন জানি না, তা-ও আমাকে এক দিনের জন্যেও অভুক্ত থাকতে হয়নি। কেউ না কেউ আমায় ডেকে বলতেন, খাওয়া হয়েছে? এটাই আমার পরিবার।’’

গত কয়েক বছর ধরে বাংলায় এলেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘দিদি’ ও ‘ভাতিজা’ (ভাইপো) শব্দবন্ধে মমতা এবং অভিষেককে লক্ষ্য করে আক্রমণ শানাতেন মোদী। অভিষেক যেহেতু পারিবারিক সম্পর্কে মমতার ভাইপো, তাই মোদী সে কথা বলতেন। যে সম্বোধনে অভিষেককে ডেকে থাকতেন শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদারেরাও। কিন্তু গত ছ’দিনের তিনটি সভায় মোদীর মুখে ‘ভাতিজা’ বা ‘ভাইপো’ শব্দও শোনা যায়নি। সন্দেশখালি এবং দুর্নীতির মতো বিবিধ বিষয়ে তৃণমূল দল ও রাজ্য সরকারকে বিঁধলেও একবারও কারও নাম নেননি প্রধানমন্ত্রী। এমনকি, আকারে-ইঙ্গিতেও নয়।

২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের প্রচারে রাজ্যে এসে মমতাকে আক্রমণ করতে গিয়ে মোদী প্রায় সব সভাতেই নিয়ম করে সুর টেনে টেনে, ‘দিদি ও দিদি’ বলতেন। যার সমালোচনা করে তৃণমূল বলেছিল, দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে অপমান করছেন মোদী-সহ বিজেপি নেতারা। সেই ভোটে বিজেপি মরিয়া হয়ে ঝাঁপালেও তৃণমূলকে রুখতে পারেনি। ভোটের পর বিজেপি নেতারাই বলেছিলেন, হিন্দির আগ্রাসন আর মহিলা আবেগে ভর করেই ভোটযুদ্ধ জিতে নিয়েছে তৃণমূল।

হতে পারে, সে সব সাত-পাঁচ ভেবেই লোকসভার আগে আপাতত ব্যক্তি আক্রমণের পথে হাঁটছেন না মোদী। তবে এখনও ভোট ঘোষণা হয়নি। সবে মাত্র প্রচারের গা-গরম পর্ব শুরু হয়েছে। আসল ‘খেলা’ এখনও বাকি। যখন গোটা ব্যাপারটা তুঙ্গে উঠবে, তখন মোদী কী ভাবে বিরোধীদের আক্রমণ করেন, ব্যক্তির নাম নেন কি না, সে দিকেও নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের।

তবে অনেকের বক্তব্য, বিজেপি এবং মোদী স্বয়ং জনমানসে এই ধারণা নির্মাণ করতে চাইছে বা চাইছেন যে, প্রধানমন্ত্রীর ধারেকাছে কোনও নেতানেত্রী নেই। যে কারণে বিরোধীদের উদ্দেশে বিজেপি প্রায়ই বলে, তাদের প্রধানমন্ত্রী মুখ কে? হতে পারে, মোদী মনে করছেন, কাউকে নাম নিয়ে ব্যক্তিগত ভাবে আক্রমণ করলে সেই নেতা বা নেত্রীর সঙ্গে তাঁর তুলনা শুরু হয়ে যাবে। তা যাতে না হয়, সে কারণেই মোদী এই ব্যক্তি আক্রমণ না করার পথে হাঁটছেন বলে অনেকের অনুমান। পাশাপাশিই, অন্য একটি অনুমান হল, মোদী কাউকে ব্যক্তি আক্রমণ করে তাঁকে ‘অতিরিক্ত গুরুত্ব’ দিতে চাইছেন না। বিজেপিও চাইছে, মোদী যে সকলের ঊর্ধ্বে, সেটা প্রতিষ্ঠিত করতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন