TMC Brigade Rally

‘নতুন ব্রিগেড’ দেখবে বাংলা! মমতা-অভিষেক র‌্যাম্পে হেঁটে মানুষের মাঝে যাবেন, চিন্তায় পুলিশ

শুক্রবার ময়দানে গিয়ে দেখা গেল, তৃণমূলের ‘জনগর্জন’ সভার মঞ্চ বাঁধা হয়েছে ব্রিগেডের ঐতিহ্য মেনেই। অর্থাৎ, মঞ্চের মুখ শহিদ মিনারের দিকে। পিছনে ভিক্টোরিয়ার স্মৃতিসৌধ।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২৪ ১৯:১১
Share:

ব্রিগেডে তৃণমূলের ‘জনগর্জন সভা’র মঞ্চ। —নিজস্ব চিত্র।

অনেক সভা দেখেছে ব্রিগেড। আবার ব্রিগেডে অনেক সভা দেখেছে বাংলা তথা দেশ। দেখেছে নিকিতা ক্রুশ্চেভের মতো বিদেশের রাষ্ট্রনেতাকেও। কিন্তু এমন বন্দোবস্ত বোধ হয় কখনও দেখেনি ময়দান। দেখেনি কলকাতা, বাংলা এমনকি, দেশও। তৃণমূলের অভিধায়— ‘অভূতপূর্ব’!

Advertisement

রবিবারের জনগর্জন সভা উপলক্ষে ব্রিগেডের মঞ্চকে যে ভাবে সাজাচ্ছে শাসকদল, তা দৃশ্যতই অভিনব! তিনটি বড় মঞ্চ, তার নীচে আরও দু’টি ছোট মঞ্চ থাকছে শাসকদলের সভায়। আর মূল মঞ্চের মাঝখান থেকে নেমে গিয়েছে ‘র‌্যাম্প’। প্রায় ৩০০ মিটার লম্বা সেই প্ল্যাটফর্ম। তার মাঝামাঝি জায়গা থেকে ডান দিক এবং বাঁ দিকে আরও প্রায় ১০০ মিটার করে লম্বা দুই ডানা। মূল মঞ্চের উপর থেকে সব মিলিয়ে দেখতে লাগছে যোগচিহ্নের মতো। বক্তৃতা করতে করতে সেই র‌্যাম্প ধরে হেঁটে জনতার আরও কাছে পৌঁছে যেতে পারবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

ব্রিগেডে যে ধরনের র‌্যাম্প তৈরি হয়েছে, তা সাধারণত দেশ-বিদেশের বড় বড় ‘কনসার্ট’ আয়োজনে হয়ে থাকে। গোটা পরিকল্পনার মধ্যে যে অভিষেকের ভাবনার ছাপ রয়েছে, তা স্পষ্ট। শুক্রবার দুপুরে মঞ্চ এবং আশপাশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে গিয়েছিল কলকাতা পুলিশের দল। সব ঠিক থাকলেও তাদের চিন্তা র‌্যাম্পের সামনের অংশ নিয়ে। মহিলা আইপিএস অফিসারের পুলিশকর্মীদের দেওয়া নির্দেশ স্পষ্ট শোনা গেল, র‌্যাম্পের তিন দিকে যে ফাঁকা জমি বা ‘ব্লক’ রয়েছে, সেখানে নিরাপত্তা অনেক বেশি জোরদার করতে হবে। না হলে অত্যুৎসাহে বাঁশ টপকে লোহার গ্রিলের সামনে জনতা চলে এলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ওই আইপিএস তাঁর সহকর্মীদের বলছিলেন, ‘‘ওই জ়োনটায় ধ্যান (মনোযোগ) দিতে হবে। ওটাই ভাইটাল (গুরুত্বপূর্ণ)।’’

Advertisement

—গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।

বৃহস্পতিবার ব্রিগেডের প্রস্তুতি দেখতে গিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক। শনিবার বিকালে যেতে পারেন তৃণমূলে সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা। তবে শুক্রবার দুপুরে দেখা গেল যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মঞ্চ সাজানোর প্রস্তুতি চলছে। কাঠের ফ্রেম এবং লোহার গ্রিলে চলছে রং করার কাজ। সব মিলিয়ে হাজারেরও বেশি মানুষ কাজ করছেন। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের দেখে নির্মাণকর্মীদের কেউ কেউ জানতে চাইলেন, ‘‘দিদি আসবেন নাকি?’’

মূল বড় মঞ্চে দুটি ধাপ। সেখান থেকেই ১৫টি ছোট ধাপের সিঁড়ি দিয়ে নামতে হবে র‌্যাম্পে। তার পরে মানুষের মাঝে যাবেন মমতা-অভিষেকরা। এর কারণ কী? তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ব্রিগেডে সাধারণত গ্রামের মানুষ মঞ্চের সামনেটা ভরিয়ে দেন। কারণ, তাঁরা সবার আগে মাঠে পৌঁছন। দূরবর্তী জেলার কর্মীদের অনেকে আগের রাত থেকেই থেকে যান মাঠে। তাঁরা চান কাছ থেকে নেতা-নেত্রীদের দেখতে। গ্রাম থেকে আসা মুখের আরও কাছে পৌঁছে যেতেই র‌্যাম্পের পরিকল্পনা বলে জানাচ্ছেন ওই নেতা। শুক্রবার দুপুরেই মাইক লাগানোর কাজ মোটামুটি শেষ হয়ে গিয়েছে ব্রিগেডের ভিতরে-বাইরে। তাতে সারা ক্ষণ বেজে চলেছে রবীন্দ্রসঙ্গীত।

গত ৭ জানুয়ারি সিপিএমের যুব সংগঠন ব্রিগেডে সভা করেছিল। কিন্তু বিবিধ কারণে তাদের মঞ্চ বাঁধতে হয়েছিল উল্টো দিকে। অর্থাৎ, ভিক্টোরিয়ার দিকে মুখ করে। তবে তৃণমূলের মঞ্চ বাঁধা হয়েছে ব্রিগেডের ঐতিহ্য মেনেই। অর্থাৎ, মঞ্চের মুখ শহিদ মিনারের দিকে। পিছনে ভিক্টোরিয়ার স্মৃতিসৌধ। শনিবার থেকেই মাঠে অনেকে আসতে শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। ফলে শুক্রবারেই স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে একপ্রস্ত বৈঠক করে নিয়েছে তৃণমূল। মমতার দীর্ঘ দিনের সঙ্গী নেতা অলোক দাসকে দেখা গিয়েছে মঞ্চের পিছনে স্বেচ্ছাসেবক মিটিংয়ে পৌরোহিত্য করছেন।

মাঠের অনেকটা অংশ জুড়ে রয়েছে বাঁশ দিয়ে ঘেরা ছোট ছোট ‘ব্লক’। কিছুটা ফাঁক দিয়ে আবার ‘ব্লক’। তার পর বাকিটা খোলা মাঠ। যাতে উপর থেকে ‘ড্রোন শট’-এ ছবি তোলা যায় এবং ভিড়ের বহর ঠিকঠাক পৌঁছে দেওয়া যায় চারদিকে। তবে রোদ নিয়ে চিন্তা রয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বের। আর পুলিশের চিন্তা র‌্যাম্পের সামনে এবং পাশের এলাকা ঘিরে। ওটাই ‘ভাইটাল’!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন