Lok Sabha Election 2024

শুরুতেই অস্বস্তি বাড়ালেন অভিজিৎ, নারদকাণ্ড নিয়ে মন্তব্যে বিড়ম্বনা পদ্মে, কাঠগড়ায় কোর্টের ‘প্রাক্তন’

৭ মার্চ বড় যোগদান রয়েছে জানিয়ে আগাম রহস্য তৈরি করে রেখেছিল বিজেপি। কিন্তু রহস্য রইল না। তার দু’দিন আগেই নিজে থেকে বিজেপি-যাত্রার কথা জানিয়ে দিলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২৪ ১৭:০১
Share:

শুভেন্দু অধিকারী ও অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। — নিজস্ব চিত্র।

বিজেপিতে যোগদানের ঘোষণার দিনেই পদ্মশিবিরের অস্বস্তি বাড়ালেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। নারদকাণ্ড সংক্রান্ত প্রশ্নে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে আড়াল করতে গিয়ে তৃণমূলের হাতেও অস্ত্র তুলে দিয়েছেন। আবার নারদকাণ্ডে তৃণমূলের যে নেতাদের বিরুদ্ধে সরব হয় বিজেপি, তাঁদেরও স্বস্তি দিয়েছেন অভিজিৎ। বিজেপির পুরনো অস্ত্র ভোঁতা করে দিয়ে অভিজিৎ দাবি করেছেন, নারদকাণ্ডে অভিযুক্তেরা সকলেই ‘চক্রান্তের শিকার’। মঙ্গলবার অভিজিতের সাংবাদিক বৈঠকে প্রশ্ন ওঠে, শুভেন্দু অধিকারীকেও তো নারদকাণ্ডে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে! কী বলবেন? জবাবে অভিজিৎ বলেন, ‘‘শুভেন্দু চক্রান্তের শিকার।’’ তাঁকে পাল্টা প্রশ্ন করা হয়, ‘‘তবে কি তৃণমূলের যে নেতাদের নারদের ফুটেজে দেখা গিয়েছিল, তাঁরাও চক্রান্তের শিকার?’’ জবাবে অভিজিৎ বলেন, ‘‘অবশ্যই তাঁরাও চক্রান্তের শিকার।’’ বিজেপি নেতাদের অনেকের দাবি, শুরুতেই ‘চালিয়ে খেলতে’ গিয়ে বিরোধীদের হাতে লোপ্পা ক্যাচ তুলে দিয়েছেন অভিজিৎ।

Advertisement

অভিজিৎ যে বিজেপিতে যোগ দেবেন তা আগে থাকতে ঘোষণা করেননি পদ্মশিবিরের নেতারা। পরিকল্পনা ছিল ৭ মার্চ একটা চমক দেওয়া হবে। সেটা বলেও রেখেছিলেন শুভেন্দু। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আসছেন কলকাতায়। বুধবার বারাসতে তাঁর জনসভা। রাজ্য বিজেপির নেতারা সেই প্রস্তুতি নিয়ে যখন ব্যস্ত, তার মধ্যেই ‘দীর্ঘ’ সাংবাদিক বৈঠক করেন অভিজিৎ। প্রথমেই বিজেপিতে যোগদানের কথা জানিয়ে দেন। এর পরে একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকেন। বিজেপিতে যোগদানের আগেই বিভিন্ন প্রসঙ্গে এমন জবাব দেন যা দলের অবস্থান-বিরোধী। তবে সে সব নিয়ে কোনও সমালোচনা না করে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘উনি বিজেপিতে যোগদানের ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ওঁকে সঙ্গে পেলে বিজেপির পক্ষে ভালই হবে।’’

মুখে সকলেই অভিজিতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও একান্তে অনেকেই সাংবাদিক বৈঠক নিয়ে অস্বস্তির কথা মানছেন। রাজ্য স্তরের এক নেতার বক্তব্য, ‘‘দলের একটা পরিকল্পনা ছিল। সেটা ভেস্তে গেল। যে ঘোষণা আমাদের তরফ থেকে করার কথা ছিল সেটা উনি করে দিলেন। এতে খুব কিছু সমস্যা না হলেও কিছু প্রশ্নের প্রেক্ষিতে এমন উত্তর দিয়েছেন যা দলের কাছে কিছুটা হলেও অস্বস্তির।’’ ওই নেতা স্পষ্ট ভাবেই নারদকাণ্ড নিয়ে মন্তব্যের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘উনি এটা ঠিকই বলেছেন যে, শুভেন্দুদার হাতে খবরের কাগজের ভিতরে টাকা ছিল কি না সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাই বলে ববি হাকিম, মদন মিত্রদের ক্লিনচিট দেওয়ার কোনও মানে হয় না। আমার মনে হয় উনি বলতে চেয়েছেন যে, তৃণমূলের মধ্যেই ছিল ষড়যন্ত্র বা চক্রান্ত।’’ ওই নেতার আরও দাবি, একা একা সাংবাদিক বৈঠক না করলেই পারতেন অভিজিৎ। পাশে দলের কোনও অভিজ্ঞ নেতা থাকলে ওঁকে অস্বস্তিকর প্রশ্নের উত্তর দেওয়া থেকে বিরত রাখা যেত। এত প্রশ্নের মুখোমুখিও হতে হত না। প্রসঙ্গত, বিভিন্ন সময়ে শুভেন্দু নিজেও জানিয়েছেন, নারদকাণ্ডে সেই সময় সকলেই চক্রান্তের শিকার হয়েছিলেন।

Advertisement

অভিজিৎ বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন বলে জল্পনা তৈরির পরেই আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছিল পদ্মশিবিরের অন্দরে। দলের নিচু তলার কর্মীরা বিচারপতি থাকাকালীন অভিজিৎকে ‘ভগবান’ মনে করলেও রাজনীতিতে আসা কোর্টের প্রাক্তনীকে গ্রহণ করবেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। তবে দলীয় নেতাদের ভাবনা ছিল, অভিজিৎকে যে আসন থেকেই প্রার্থী করা হোক তার বাইরে রাজ্যের সর্বত্র নিয়ে গিয়ে প্রচারে ব্যবহার করা হবে। কোর্টে যে ভাবে তিনি তৃণমূলের বিরোধিতা করেছেন সে কথা প্রকাশ্যে বলবেন। কিন্তু এমন প্রশ্নও ওঠে যে তাঁর ‘লড়াকু’, ‘জেদি’ পরিচয়টা তো ছিল কোর্টের এজলাসে। সেখানে তিনিই ছিলেন শেষ কথা। কিন্তু রাজনীতিতে তো সেটা নয়। দলীয় নেতাদের কথা শুনে চলবেন তো! ভোটের প্রচারে কি আদৌ বিচারপতি থাকাকালীন তাঁর হাতে আসা বিভিন্ন তদন্তের তথ্য প্রকাশ করতে পারবেন। অতীতে সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে বিপাকে পড়া অভিজিৎ নতুন করে বিতর্ক তৈরি করবেন না তো!

এ সবের পরেও রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় বিজেপি ঠিক করে অভিজিৎকে দলে নেওয়াই ঠিক হবে। আমজনতার মধ্যে তাঁর যে ‘ইমেজ’ রয়েছে তা ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু শুরুতেই নারদকাণ্ড প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে যে বিড়ম্বনা তৈরি করলেন অভিজিৎ তার পরে দলে কিছুটা চিন্তা থেকেই যাবে। এ প্রসঙ্গে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য দোষের কিছু দেখছেন না। তিনি বলেন, ‘‘অন্য ক্ষেত্রের ভাল মানুষদের রাজনীতিতে আনতে হবে। তার জন্য বিজেপিই সবচেয়ে ভাল মঞ্চ। হতে পারে তিনি রাজনীতির সব কৌশল বোঝেন না বা প্রয়োগ করতে পারেন না, কিন্তু আয়ত্ত করে নিতে পারেন অল্প সময়েই। অভিজিৎবাবু বিচারপতি হিসাবে যা করে দেখিয়েছেন রাজনীতিতেও সেটা পারবেন।’’ একই সঙ্গে দিলীপ বলেন, ‘‘সৎ মানুষের প্রতি আলাদা শ্রদ্ধা আছে মানুষের। উনি যে সৎ, এ নিয়ে কারও দ্বিমত নেই। এই ধরনের শিক্ষিত মানুষের আরও বেশি করে রাজনীতিতে আসা প্রয়োজন।’’

বিচারপতি থাকার সময়েই অভিজিতের নানা পর্যবেক্ষণ এবং রায় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে শাসকদল তৃণমূল। অনেক সময়েই মনে হয়েছে বিরোধী স্বর বা বিজেপির দাবিকে তিনি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। এখন শাসকদল বলতেই পারে সেই সব অভিযোগ যে একেবারেই মিথ্যা ছিল না সেটা স্পষ্ট হয়ে গেল বিজেপিতে যোগ দেওয়ায়। এ নিয়ে আক্রমণ শুরু হয়ে গিয়েছে তৃণমূলের তরফে। তবে আপাতত রাজ্য বিজেপির সিদ্ধান্ত, অভিজিতের বিচার্য বিষয় নিয়ে দল কিছু বলবে না। ভোটের হাওয়া আরও তেজি হলে এ সব অভিযোগ আর ধোপে টিকবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন